শুরুতে উপজেলা নির্বাচন দলীয়ভাবে হতো না। নয় বছর আগে আইন সংশোধনের পর সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচনও দলীয় লড়াইয়ে রূপ নেয়। আইন ঠিক থাকলেও এবার আগের রূপে ফিরতে যাচ্ছে স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবার উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংসদ নির্বাচন বয়কটকারী বিএনপিও এই সরকারের অধীনে কোনও নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে আছে। ফলে এবার এই নির্বাচনের ব্যালটে নৌকা কিংবা ধানের শীষ না থাকার সম্ভাবনাই দেখা যাচ্ছে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন শেষে এখন উপজেলা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। ৪৮৫ উপজেলায় কয়েক ধাপে ভোটের পরিকল্পনা হয়েছে। প্রথম ধাপের ভোট এপ্রিলের মধ্যেই শেষ করতে চায় ইসি।
বাংলাদেশে উপজেলা পরিষদ চালু করেছিলেন সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদ। তার ক্ষমতাচ্যুতির পর উপজেলা পরিষদও অকার্যকর হয়ে যায়। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় যাওয়ার পর উপজেলা পরিষদ পুনরায় চালু করে।
তখনও নির্দলীয় প্রতীকেই উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, নারী ভাইস চেয়ারম্যানসহ পরিষদের সদস্য নির্বাচনের প্রথা ছিল। ২০১৪ সালে সেভাবেই ভোট হয়েছিল।
২০১৫ সালে স্থানীয় সরকার আইন সংশোধনের পর উপজেলায়ও নৌকা, ধানের শীষসহ রাজনৈতিক দলের প্রতীকগুলো ব্যালটে যুক্ত হয়।
স্থানীয় নির্বাচন দলীয়ভাবে করার বিষয়ে অনেকের আপত্তি ছিল। গত দুটি নির্বাচনে সহিংসতার বিস্তার দেখে এই ভোট আগের মতো অদলীয় প্রতীকে ফিরিয়ে নেওয়ার পক্ষেও অনেকে মত জানান।
তবে এবার ভিন্ন বাস্তবতায় নির্দলীয় প্রতীক ফেরার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। বিএনপি বর্জন করায় সংসদ নির্বাচন জমিয়ে তুলতে দলীয় নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার পথ খুলে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ।
এখন উপজেলা ভোটেও একই পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত সোমবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় হয়েছে, গণভবনে যে সভায় সভাপতিত্ব করেন দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সভা শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, “ওয়ার্কিং কমিটির সর্বসম্মতক্রমে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এই নির্বাচনে আমাদের দলীয় প্রতীক নৌকা ব্যবহার না করার। এব্যাপারে সবাই একমত প্রকাশ করেছেন।
“আমাদের সভাপতি শেখ হাসিনা, তিনি সর্বশেষ বলেছেন, ‘সবাই যা বলে আমিও একমত, ভিন্নমত পোষণ করি না’। যেহেতু সবাই একই রকম মন্তব্য করেছে। পরবর্তীতে আমরা স্থানীয় সরকার মনোনয়ন নিয়ে একটা যৌথসভা ডেকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেব।”
কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত যে স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডেও বহাল থাকে, তাও জানিয়ে রাখেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, “এটা একটা আনুষ্ঠানিকতা।”
২০১৭ সালের মার্চে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে উপজেলা ভোট হয়। তবে সবশেষ ২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদ সবার জন্য উন্মুক্ত রাখে আওয়ামী লীগ। সেই সময়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে কোনো দলীয় প্রার্থী রাখা হয়নি। তবে চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকেই নির্বাচন করেছিল। তবে এবার সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এল দলটি।
সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী আর স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কোন্দল যে সংঘাত ঘটিয়েছে, তা এড়াতেই এবার নৌকা প্রতীক কাউকে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগের।
ওবায়দুল কাদের বলেন, “নির্বাচন উপলক্ষে আমাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী, আমাদের দলীয় প্রার্থী সব মিলিয়ে নির্বাচনী যে আবহ কিছু কিছু মান-অভিমান, অন্তর্কলহ, এসব কিছু বিষয় ছিল যার রেশ এখনও শেষ হয়নি কিছু কিছু জায়গায়।”
তাদের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না জানালেও দলটির নেতাদের কথায় স্পষ্ট, সরকারবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে তারা দলীয়ভাবে উপজেলা ভোটে যাচ্ছেন না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান সম্প্রতি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “ইতোমধ্যে জনগণ দেখেছে, একটি ডামি নির্বাচন কেমন হয়। তার রেশ এখনও কাটেনি। তাই উপজেলা নির্বাচনে কী হবে, তা স্পষ্ট।”
দলটির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুও একই সুরে বলেন, “এই সরকারের অধীনে যেখানে স্কুল-কলেজ ও মসজিদ-মাদ্রাসার নির্বাচনও সুষ্ঠু হয় না, সেখানে উপজেলা নির্বাচনে কী হবে, তা সংসদ নির্বাচনে প্রমাণ হয়ে গেছে।”
ফলে বিএনপি যদি এই অবস্থানে থাকে, তবে উপজেলায় এবার নৌকা-ধানের শীষের লড়াই জমবে না।