Beta
মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৪

হতো ৩৮, এক সুযোগে হয়ে গেল ৪৮

দ্বাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরুর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কুশল বিনিময়ে সংসদ সদস্যরা।
দ্বাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরুর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কুশল বিনিময়ে সংসদ সদস্যরা।
Picture of জেসমিন মলি

জেসমিন মলি

[publishpress_authors_box]

এবারের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যত আসনে জিতেছে, সে অনুযায়ী তাদের প্রাপ্য ৩৮টি নারী আসন। কিন্তু তারা পেয়ে যাচ্ছে সংরক্ষিত এই ৫০ আসনের ৪৮টিই।

কীভাবে হলো? স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা এবার রেকর্ড ৬২ আসন জেতায় তাদের প্রাপ্য ছিল ১০টি আসন। কিন্তু এই স্বতন্ত্ররা জোট না করে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দেওয়ায় তাদের আসনগুলোও চলে আসে ক্ষমতাসীন দলটিরই ভাগে।

এতে আইনের কোনও ব্যত্যয় না হলেও এতে পদ্ধতির ত্রুটি বেরিয়ে এসেছে মন্তব্য করে ভবিষ্যতে এনিয়ে ভাবার পরামর্শ এসেছে এক পর্যবেক্ষকের কাছ থেকে।

বিএনপিবিহীন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ভোটের মাঠ জমিয়ে তুলতে দলের নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ করে দেয়।

তাতে ৬২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ী হয়ে যায়। এর মধ্যে ৫৯ জনই আওয়ামী লীগের।

৩৫০ আসনের জাতীয় সংসদে ৩০০ আসনে সরাসরি ভোট হয়, যা এবার হয়েছিল গত ৭ জানুয়ারি। সংরক্ষিত ৫০ নারী আসন বণ্টিত হয় সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে, সরাসরি ভোটে জয়ী দলগুলোর আসন সংখ্যার ভিত্তিতে।

আওয়ামী লীগ ২২৩টি আসন পাওয়ার পাশাপাশি তাদের জোট শরিক দল জাসদ একটি এবং ওয়ার্কার্স পার্টি একটি আসনে জেতে। জাতীয় পার্টি পায় ১১টি আসন। স্বতন্ত্রদের ৬২ আসন।

সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নারী আসনের ৫০টির মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৮টি, জাতীয় পার্টি ২টি ও স্বতন্ত্ররা ১০টি আসনের দাবিদার হয়।

আইন অনুযায়ী, ৬২ জন স্বতন্ত্রদের নিজেরা জোট গঠন করে সংরক্ষিত আসনের ১০টি নেওয়ার সুযোগ ছিল। একাদশ সংসদে স্বতন্ত্ররা জোট করে একটি আসন নিয়েছিল।

কিন্তু এবার স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা সে পথে এগোননি। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে তাদের পাওনা আসনের বিষয়ে সিদ্ধান্তের ভার তার ওপরই দিয়ে আসেন।

গণভবনে রবিবার সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা। ছবি: পিআইডি

এই মনোনয়নের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগকে সমর্থনের কথা নির্বাচন কমিশনকেও তারা জানিয়েছে বলে কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানান।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “স্বতন্ত্ররা কোনও জোট না করে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়েছে। প্রত্যেকে আলাদা আলাদা তাদের সমর্থন জানিয়েছে। যার ফলে এ বিষয়ে আর কোনও আইনি বাধা রইল না।”

ফলে নির্বাচন কমিশন এখন সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ যে ৪৮ জনকে মনোনয়ন দেবে, তারাই নারী সংসদ সদস্য হবেন।

বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আইনে কোনও অস্পষ্টতা নাই। যেহেতু লিখিতভাবে দিয়েছে। এতে কোনও সমস্যা নাই।”

একই কথা বলেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলামও। তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “স্বতন্ত্ররা প্রধানমন্ত্রীকে সংরক্ষিত আসনে সমর্থন দিয়েছে। এটার কারণ হতে পারে তারা আলাদাভাবে জোট করতে পারবে না। “

বর্তমান সংসদের স্বতন্ত্রদের আলাদা করে ভাবার সুযোগও নেই বলে মনে করেন সাবেক এই কমিশনার।

তিনি বলেন, “তারা (স্বতন্ত্র) তো আওয়ামী লীগ হয়েই নির্বাচন করেছে। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গেলে তাকে সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করা হবে। স্বতন্ত্রদের ৫৯ জনই আওয়ামী লীগের৷ তাহলে তারা কেমনে জোট করতে পারে?”

এই বিষয়টিকে ভিন্ন চোখে দেখছেন জালাল ফিরোজ। সংবিধানসহ নানা গ্রন্থের এই রচয়িতা বাংলাদেশের সংসদীয় রাজনীতি ও এর গতিপ্রকৃতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছেন।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, সংরক্ষিত নারী আসনের প্রার্থিতার বিষয়ে বলা আছে, প্রত্যেকটা দল সাধারণ আসনে যেভাবে সিট পাবে, সেই অনুপাতে সংরক্ষিত আসন তাদের জন্য সিট বরাদ্দ হবে।

“এটাকে খানিকটা ত্রুটিপূর্ণ বললেও বলা যেতে পারে। তবে এর আগে যেহেতু এত বড় সংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থী সংসদে নির্বাচিত হন নাই, সেজন্য তাদের আনুপাতিক হারে সংরক্ষিত আসন বরাদ্দ বিষয়টি প্রশ্ন হয়ে দেখা গেছে।”

ভবিষ্যতের জন্য এই বিষয়টি নিয়ে নীতি-নির্ধারকদের ভাবতে পরামর্শ দেন জালাল ফিরোজ।  

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত