ঢাকা-৪ আসনে এবার আওয়ামী লীগ প্রার্থী করেছিল সানজিদা খানমকে। নৌকা প্রতীকে লড়েছিলেন তিনি, কিন্তু হারতে হয়েছিল দলেরই নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী আওলাদ হোসেনের কাছে।
৭ জানুয়ারির ভোটে পরাজয়ের বিষাদ এবার কাটবে সানজিদার। কেননা সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বুধবারই দ্বাদশ সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে তাদের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করেছে। আইন অনুযায়ী, ৫০টি আসনের ৪৮টি তারা পাচ্ছে।
যেহেতু সংসদে আওয়ামী লীগের একচ্ছত্র আধিপত্য, সেক্ষেত্রে এই ৪৮ জনের নারী আসনের সদস্য হয়ে আইনসভায় যাওয়ার এখন শুধু আনুষ্ঠানিকতারই বাকি।
ঢাকার দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তের যাত্রাবাড়ী-শ্যামপুর আসন থেকে ২০০৮ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে প্রথম সংসদে গিয়েছিলেন সানজিদা।
তবে এর পরের দুটি নির্বাচনে জোটের সমীকরণে আর ভোটে দাঁড়ানো হয়নি তার। দুইবারই নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির আবু হোসেন বাবলা।
তবে বিএনপির বর্জনের মধ্যে গত জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ভোটের মাঠ অনেকটাই উন্মুক্ত করে দেয়। দলের প্রার্থী হিসেবে সানজিদাকে মনোনয়ন দিলেও আওলাদের প্রার্থী হওয়ায়ও বাধা দেয়নি। আবার বাবলাও ভোট করেন লাঙ্গল প্রতীকে। ত্রিমুখী লড়াইয়ে দ্বিতীয় হন সানজিদা।
তার মতোই নৌকার প্রার্থী হয়ে ভোট করেছিলেন মেহের আফরোজ চুমকি, গাজীপুর-৫ আসনে। তবে হারতে হয়েছিল আওয়ামী লীগেরই নেতা ডাকসুর সাবেক জিএস আখতারুজ্জামানের কাছে।
এরশাদ আমলে হত্যাকাণ্ডের শিকার আওয়ামী লীগের নেতা ময়েজউদ্দিনের মেয়ে চুমকির সংসদে প্রথম যাওয়া ১৯৯৬ সালে। সেবার সংরক্ষিত আসনের এমপি হলেও ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে সরাসরি ভোটেই নির্বাচিত হয়েছিলেন। প্রতিমন্ত্রীও হয়েছিলেন একবার।
কিন্তু এবার হারলেও তাকে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য করে আইনসভায় নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। ফলে প্রথমবার যেভাবে সংসদে গিয়েছিলেন, এবারও সেভাবে সংসদে যাচ্ছেন তিনি। আর দলের সিদ্ধান্ত জানার পর তিনি ফেইসবুকে লিখেছেন- “আলহামদুলিল্লাহ।”
দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহম্মেদকে বরিশাল-৪ আসনে প্রার্থী করেছিল আওয়ামী লীগ। তবে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে বাদ পড়ায় তার আর ভোট করা হয়নি। পংকজ নাথ এবার দলীয় মনোনয়ন না পেয়েও সেখানে গতবারের মতো এমপি হয়ে যান।
বঙ্গবন্ধুর বন্ধু মহিউদ্দিন আহম্মেদের মেয়ে শাম্মীর সংসদে যাওয়ার পথ এবার খুলে দিলেন শেখ হাসিনা, সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন দিয়ে।
গণভবনে শেখ হাসিনার সভাপতিত্বেই এদিন আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা বসে, সেখানে শাম্মী, সানজিদা ও চুমকি ছাড়াও আর যে ৪৬ জনের নাম চূড়ান্ত হয়েছে, তাদের মধ্যে এমন নারীও রয়েছেন, যাদের দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে ভোটের পথ ছাড়তে হয়েছিল।
তাদের একজন মন্নুজান সুফিয়ান। খুলনা থেকে বারবার নির্বাচিত হয়ে আসা তৃণমূলের এই রাজনীতিক দুইবার শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায়ও ছিলেন। এবার তাকে প্রার্থী করা হয়নি।
চট্টগ্রামের আতাউর রহমান খান কায়সারের মেয়ে ওয়াশিকা আয়শা খানকে গতবারের মতো এবারও নারী এমপি করা হচ্ছে। ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নাতনি আরমা দত্তও থেকে যাচ্ছেন নারী এমপি হিসেবে।
নাটোরের সাবেক এমপি আব্দুল কুদ্দুসের মেয়ে কুহেলি কুদ্দুসও এবার নারী এমপি হতে যাচ্ছেন।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন এই প্রথম এমপি হতে যাচ্ছেন। একাত্তর টিভির প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবুর স্ত্রী অপরাজিতা হক এবারও নারী এমপি থাকছেন।
সংরক্ষিত নারী আসনের দুই বারের সংসদ সদস্য তারানা হালিম একবার প্রতিমন্ত্রী হলেও গতবার তাকে সংসদে দেখা যায়নি।
অভিনেত্রী তারানা নারী আসনের এমপি হিসেবে আবার ফিরছেন সংসদে। তবে এবার বিনোদন জগতের বহু তারকা নারী এমপি হতে চাইলেও তাদের ভাগ্যের শিকে ছেঁড়েনি।
সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে ১ হাজার ৫৫৩ জন মনোনয়ন ফরম কিনেছিল এবার।
বৃহস্পতিবারের বৈঠক শেষে তাদের মধ্যে ৪৮ জনকে চূড়ান্ত করার তথ্য জানানো হয় ক্ষমতাসীন দলটির দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
মনোনয়ন পেলেন যে ৪৮ জন
দ্রৌপদী দেবী আগরওয়ালা (ঠাকুরগাঁও)
আশিকা সুলতানা (নীলফামারী)
রেজিয়া ইসলাম (পঞ্চগড়)
রোকেয়া সুলতানা (জয়পুরহাট)
কুহেলী কুদ্দুস (নাটোর)
জারা জাবীন মাহবুব (চাঁপাইনবাবগঞ্জ)
রুনু রেজা (খুলনা)
ফরিদা আক্তার বানু (বাগেরহাট)
ফারজানা সুমি (বরগুনা)
খালেদা বাহার বিউটি (ভোলা)
নাজনীন নাহার রশীদ (পটুয়াখালী)
ফরিদা ইয়াসমিন (নরসিংদী)
উম্মি ফারজানা ছাত্তার (ময়মনসিংহ)
নাদিয়া বিনতে আমিন (নেত্রকোণা)
মাহফুজা সুলতানা (জয়পুরহাট)
পারভীন জামান (ঝিনাইদহ)।
আরমা দত্ত (কুমিল্লা)
লায়লা পারভীন (সাতক্ষীরা)।
মন্নুজান সুফিয়ান (খুলনা)
বেদৌরা আহমেদ সালাম (গোপালগঞ্জ)
শবনম জাহান (ঢাকা)
পারুল আক্তার (ঢাকা)
সাবেরা বেগম (ঢাকা)
শাম্মী আহমেদ (বরিশাল)
নাহিদ ইজাহার খান (ঢাকা)
ঝর্ণা হাসান (ফরিদপুর)
ফজিলাতুন নেসা (মুন্সিগঞ্জ)
শাহেদা তারিখ দীপ্তি (ঢাকা)
অনিমা মুক্তি গমেজ (ঢাকা)
শেখ আনার কলি পুতুল (ঢাকা)
মাসুদ সিদ্দিকী রোজী (ঢাকা)
তারানা হালিম (টাঙ্গাইল)
বেগম শামসুর নাহার (টাঙ্গাইল)
মেহের আফরোজ (গাজীপুর)
অপরাজিতা হক (টাঙ্গাইল)
হাছিনা বারী চৌধুরী (ঢাকা)
নাজমা আক্তার (গোপালগঞ্জ)
রুমা চক্রবর্তী (সিলেট)
ফরিদুন্নাহার লাইলী (লক্ষ্মীপুর)
আশ্রাফুন নেছা (লক্ষ্মীপুর)
কানন আরা বেগম (নোয়াখালী)
শামীমা হারুন (চট্টগ্রাম)
ফরিদা খানম (নোয়াখালী)
দিলোয়ারা ইউসুফ (চট্টগ্রাম)
ওয়াসিকা আয়শা খান (চট্টগ্রাম)
জ্বরতী তঞ্চঙ্গ্যাঁ (রাঙ্গামাটি)
সানজিদা খানম (ঢাকা)
নাছিমা জামান ববি (রংপুর)
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, সংসদের ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসনে আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি পদপ্রার্থীরা মনোনয়পত্র দাখিল করবেন রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে। সময় সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা। রিটার্নিং কর্মকর্তা মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করবেন ১৯-২০ ফেব্রুয়ারি।
বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের ২২ ফেব্রুয়ারি। আপিল নিষ্পত্তি হবে ২৪ ফেব্রুয়ারি। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৫ ফেব্রুয়ারি। প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ২৭ ফেব্রুয়ারি। ভোটগ্রহণ হবে ১৪ই মার্চ। সেদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সংসদে ভোটগ্রহণ চলবে, যদি প্রয়োজন হয়।