নব্বই দশকে গৃহযুদ্ধে জেরবার ছিল উত্তর আফ্রিকার দেশ আলজেরিয়া। সেসময় যুদ্ধের ডামাডোলে অনেকের মতো নিখোঁজ হয়েছিলেন ওমর বিন ওমরান।
দীর্ঘদিন ওমরানের সন্ধান পায়নি তার পরিবার। একপর্যায়ে ধরেই নেওয়া হয়েছিল যে, তিনি আর বেঁচে নেই।
পুরো ২৬ বছর পর ওমরান সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিল আলজেরিয়া কর্তৃপক্ষ। তারা বলছে, ১৯৯৮ সালে গৃহযুদ্ধের সময় নিখোঁজ হওয়া ওমরান মারা যাননি, তিনি বেঁচে আছেন।
তাহলে এই দীর্ঘ ২৬ বছর কোথায় ছিলেন ওমরান? কী এমন করেছিলেন যে তার স্বজনরা এত বছর ধরে অনেক খুঁজেও তার কোনও হদিস পায়নি? তবে কী অন্য কোনও দেশে পরিচয় গোপন করে পালিয়ে ছিলেন তিনি?
না, এসবের কিছুই নয়। আলজেরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় জেলফা শহরে নিজের বাড়ি থেকে মাত্র ২০০ মিটার দূরে একটি বাড়ির বেজমেন্টে ছিলেন ওমরান। তিনি বলছেন, সেখানে তাকে বন্দি করে রাখা হয়েছিল।
আলজেরিয়ার বিচার মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার জানায়, ১৯ বছর বয়সে হারিয়ে যান ওমরান। মনে করা হচ্ছিল, তাকে হয় অপহরণ করা হয়েছে নয়তো খুন করা হয়েছে।
ওমরানের মা ২০১৩ সালে মারা যান। তিনিও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জেনে গেছেন, তার ছেলে জীবিত নেই।
আল জাজিরা বলছে, ১২ মে ওমরানের বাড়ি থেকে কয়েক মিনিটের হাঁটা দূরত্বের একটি বাড়িতে খড়ের গাদা দিয়ে আড়াল করে রাখা ভেড়ার খোঁয়াড় থেকে তাকে জীবিত উদ্ধার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে অপহরণকারীকেও। ৬১ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি প্রহরীর কাজ করেন।
ওমরানের অপহরণকারীর সঙ্গে সম্প্রতি তার ভাইয়ের সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ শুরু হয়। এর জেরে একপর্যায়ে ওই ভাই সোশ্যাল মিডিয়ায় ওমরানকে ২৬ বছর ধরে বন্দি করে রাখার তথ্য ফাঁস করে দেন।
আলজেরিয়ার বিচার মন্ত্রলাণয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ২৬ বছর ধরে একজন ব্যক্তিকে বন্দি করে রাখার মতো এই ‘জঘন্য’ অপরাধের তদন্ত চলছে। ৪৫ বছর বয়সী ভুক্তভোগীকে শারীরিক চিকিৎসার পাশাপাশি মানসিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
আলজেরিয়ার আদালতের এক কর্মকর্তা জানান, সোশ্যাল মিডিয়ায় ফাঁস হওয়া তথ্য পেয়ে ১২ মে রাত ৮টার দিকে পুলিশ ওমরানের প্রতিবেশীর বাড়ি ঘিরে ফেলে। সেসময় অপহরণকারী পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও শেষমেশ পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।
ওমরান উদ্ধারকর্মীদের বলেছেন, বেজমেন্ট থেকে কখনও কখনও পরিবারের সদস্যদের দেখতে পেতেন তিনি। কিন্তু তিনি তাদের চিৎকার করে ডাকতে পারতেন না কারণ অপহরণকারী তাকে ‘জাদুটোনা’ করেছিল।
১৯৯২ সালে আলজেরিয়া সরকারের সঙ্গে দেশটির ইসলামপন্থি বিদ্রোহী গোষ্ঠীদের যুদ্ধ শুরু হয়। যা চলে ২০০২ সাল পর্যন্ত। গৃহযুদ্ধের সময়কালকে ‘কালো দশক’ হিসেবে দেখেন আলজেরিয়ানরা।
এক দশক দীর্ঘ গৃহযুদ্ধে আলজেরিয়ায় দুই লাখ মানুষ নিহত হয়। সেসময় নিখোঁজ মানুষের সংখ্যা ২০ হাজার। কেবল ১৯৯২ থেকে ১৯৯৮ সালেই হারিয়ে যায় প্রায় আট হাজার আলজেরিয়ান।