ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অনুমোদনহীন ও নকশাবহির্ভূতভাবে গড়ে তোলা রেস্তোরাঁর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), সিটি করপোরেশন ও পুলিশ। আলাদা এসব অভিযানে একদিনেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে অনেক রেস্তোরাঁ।
সোমবার চালানো এসব অভিযানে ৪০ জনকে আটকও করা হয়েছে।
এরমধ্যে ধানমন্ডির গাউছিয়া টুইন পিক টাওয়ারে অবস্থিত ১২টি রেস্তোরাঁ সিলগালা ও একটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ধানমণ্ডির কেয়ারি ক্রিসেন্ট ভবন সিলগালা করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
রাজউকের অভিযান
সোমবার ধানমণ্ডির গাউছিয়া টুইন পিক টাওয়ারে অভিযান চালায় রাজউক। সেখানে অনুমোদনহীন ও নকশাবহির্ভূতভাবে নির্মাণ করা ১২টি রেস্তোরাঁ সিলগালা করে দেওয়া হয়। এছাড়াও ভবনটির ছাদে থাকা রেট্রো লাইভ কিচেন নামের রুফটপ রেস্টুরেন্টটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। একইসঙ্গে জরিমানা করা হয়েছে একটি রেস্তোরাঁকে।
রাজউক জানিয়েছে, টুইন পিক টাওয়ারে রেস্তোরাঁ ব্যবসার অনুমোদন নেই। অফিসের জন্য অনুমোদিত এই ভবনে অবৈধভাবে রেস্টুরেন্ট ও ফুডকোর্ট গড়ে তোলা হয়েছিল।
রাজউকের পরিচালক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাজিনা সারোয়ার বলেন, “ভবনটি মূলত এফ ক্যাটাগরির। এটি অফিসের জন্য রাজউক থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেখানে অবৈধভাবে রেস্টুরেন্ট করা হয়েছিল।
“ভবনটি এফ ওয়ান ক্যাটাগরির হওয়ায় সেটি শুধু অফিস হিসেবে ব্যবহার করার কথা। কিন্তু আমরা পরিদর্শনে মাত্র দুই ফ্লোরের কিছু অংশ অফিস হিসেবে পেয়েছি। বাকি অংশগুলোয় নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে রেস্টুরেন্ট ভাড়া দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ওষুধ ও কাপড়ের দোকানও পেয়েছি।”
রেট্রো লাইভ কিচেন নামের রুফটপ রেস্টুরেন্টটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার প্রসঙ্গে তাজিনা সারোয়ার বলেন, “আমরা ছাদের রেস্টুরেন্ট ভেঙে দিয়েছি। কারণ রাজউকের নকশায় স্পষ্টত দেখানো হচ্ছে ভবনের ছাদ খোলামেলা। তারপরও কীভাবে এখানে রেস্টুরেন্ট করা হয়েছে সেটি আমাদের বোধগম্য নয়।”
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অভিযান
ধানমণ্ডির সাত মসজিদ রোডের কেয়ারি ক্রিসেন্ট নামের বহুতল ভবন সিলগালা করে দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।
দুপুরে ডিএসসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে এই অভিযানে ভবনের তিন কর্মীকে আটক করে পুলিশ হেফাজতে দেওয়া হয়েছে। তবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আটকদের পরিচয় জানা যায়নি।
এদিকে অভিযানের খবর পেয়ে আগেই ভবনটির সব রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভবনের মূল গেটের সামনে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় নোটিস। সেখানে লেখা ছিল “সকল চাইনিজ রেস্টুরেন্ট এবং খাবার হোটেল বন্ধ থাকবে। শুধু দ্বিতীয় তলার মার্কেট এবং নিচ তলার দোকানগুলো খোলা থাকবে। আদেশক্রমে কর্তৃপক্ষ।”
পুলিশের অভিযান
অবৈধভাবে গড়ে তোলা ও ঝুঁকিপূর্ণ রেস্টুরেন্টের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগর পুলিশও (ডিএমপি) অভিযান শুরু করেছে। বিভিন্ন এলাকার রেস্টুরেন্টে অভিযান চালিয়ে ৪০ কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। আটকদের মধ্যে কয়েকটি রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপকও রয়েছেন। এ ছাড়া অভিযানে যেসব রেস্তোরাঁয় ছোটখাটো অনিয়ম পাওয়া গেছে সেগুলোকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।
আটকদের মধ্যে ধানমন্ডির হোয়াইট হল রেস্টুরেন্টের শামীম হোসেন তুহিন, ম্যারিটেজ ঢাকার খুরশিদ আলম, অ্যারিস্টোক্র্যাটের সাব্বির হোসেন, আদি কড়াই গোস্তর খালিদ হোসেন, দি লবি লাউঞ্জের মারুফ হোসেন, ইয়ামচা ডিস্ট্রিটের পুলক বিশ্বাস, ক্যাফে ডোলচের আশিক তালুকদার, ক্যাফে সাওপাওলোর শাহিন সারোয়ার, ক্যাপিটাল লাউঞ্জের রেদুয়ান আহম্মেদ, পার্ক অ্যান্ড স্মার্টের মিজানুর রহমান, খানাজের শরিফুল ইসলাম, ক্যাফে ইউফোরিয়ার আল আমিন, টুইন পার্কের আল আমীন মোস্তফা তালুকদার, স্বদেশীর মেহেদী হাসান, ডিকে-১৩-এর রাসেল পালমা, বোস্টার প্রের আমিনুল ইসলাম রিফাত, চা টাইপের সামিত আলম সিয়াম, ক্রাস স্টেশনের চয়ন হালদার ও বিবিকিউর সুমিত রায়ে পরিচয় জানা গেছে।
এছাড়াও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার প্রবেশমুখে বিভিন্ন রেস্তোরাঁ থেকে তিনজন এবং বেইলি রোড ও আশপাশের এলাকার ১১টি রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। খিলগাঁও এলাকার ১৫টি রেস্টুরেন্ট অভিযান চালিয়ে ১২ জন, ডেমরার চারটি রেস্টুরেন্টে অভিযান চালিয়ে দু’জন ও উত্তরা থেকে দিন জনকে আটক করেছে পুলিশ। অন্যদিকে গুলশান এলাকায় ১০টি রেস্টুরেন্টে অভিযান চালানো হলেও কাউকে আটক করা হয়নি।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন জানান, গত শনিবার ডিএমপি সদরদপ্তর থেকে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের ঝুঁকিপূর্ণ রেস্টুরেন্টে অভিযান চালানোর বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরপর রোববার দুপুরের পর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন থানা পুলিশ সংশ্লিষ্ট এলাকায় অভিযান শুরু করে। ধারাবাহিকভাবে এই ধরনের অভিযান চলবে। অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করেই অভিযান চালানো হবে।