সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘাত-সহিংসতায় প্রাণক্ষয়ের পর বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
ফলে বুধবার থেকে সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থাকবে বন্ধ, খুলবে না মেডিকেল কলেজগুলোও। অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে স্কুল কলেজও। বৃহস্পতিবারের এইচএসসি পরীক্ষাও হবে না।
সোমবার ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও সরকার সমর্থকদের সংঘর্ষের পর মঙ্গলবার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। তাতে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে ছয়জন নিহত হয়।
এরপর রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে স্কুল ও কলেজ বন্ধের সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিদ্যালয় ও কলেজগামী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসমূহের শ্রেণি কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
সেই সঙ্গে আগামী বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠেয় সব শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়।
আরেক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অনিবার্য কারণবশত আগামী ১৮ জুলাই (বৃহস্পতিবার) অনুষ্ঠেয় সব শিক্ষাবোর্ডের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হলো।
স্থগিত হওয়া পরীক্ষার পরবর্তিত সময়সূচি পরে জানিয়ে দেওয়া হবে। ২১ জুলাই থেকে পূর্বঘোষিত সূচি অনুযায়ী পরীক্ষা যথারীতি চলবে বলেও জানানো হয়।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা আসে।
এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুায়ী সব পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সব মেডিকেল, প্রকৌশল, টেক্সটাইল কলেজসহ অন্য সব কলেজের শিক্ষা কাজ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া অবধি বন্ধ থাকবে।
এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তার স্বার্থে হল ছাড়তেও বলা হয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবারের সংঘাতে এক শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সন্ধ্যায়ই বন্ধ ঘোষণা করে বুধবার দুপুর ১২টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে সকাল সন্ধ্যাকে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা বিভাগের কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী।
তিনি বলেন, “ক্যাম্পাসে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
এদিন দুপুর ১ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের সংঘর্ষের সময় মারা যান রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। তিনি বৈষম্যরোধী ছাত্র আন্দোলনে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সমন্বয়ক ছিলেন।
মঙ্গলবার যে ছয়জন নিহত হন, তাদের মধ্যে একমাত্র সাঈদই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।