বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে শুক্রবার সকাল থেকে তিস্তা নদীতে পানি বাড়তে থাকে। নদীতে পানির প্রবাহ বিপৎসীমার কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়ায় চাপ সামলাতে লালমনিরহাটের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা ব্যারাজের সবগুলো জলকপাট খুলে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় ডালিয়াস্থ তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার (৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার) ৫৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।
উত্তরাঞ্চল পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব জানান, শুক্রবার বিকাল ৩টায় লালমনিরহাটের ডালিয়ায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি রেকর্ড হয়েছে ৫১ দশমিক ৩০ সেন্টিমিটার, যা ছিল বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৮৫ সেন্টিমিটার নিচে।
এর আগে এই পয়েন্টে শুক্রবার সকাল ৬টায় ৫১ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার, সকাল ৯টায় ৫১ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার ও বেলা ১২টায় ২৮ দশমিক ৪৬ সেন্টিমিটার পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয়।
এছাড়া রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে শুক্রবার বিকাল ৩টায় পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ২৮ দশমিক ৬৩ সেন্টিমিটার, যা ছিল বিপৎসীমার দশমিক ১২ সেন্টিমিটার নিচে। পানি আরও বৃদ্ধি পাওয়ার শঙ্কায় ইতোমধ্যে ডালিয়ায় তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড রংপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, উজানের ঢল আর গত কয়েক দিনের বৃষ্টিপাতে শুক্রবার সকাল থেকে তিস্তায় পানি বাড়তে থাকে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ব্যারাজের ৪৪টি গেটই খুলে রাখা হয়েছে। বিকালের দিকে ডালিয়া পয়েন্টে পানি কিছুটা কমতে শুরু করলেও ভাটির দিকে কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার কাছ দিয়ে প্রবাহিত হয়।
তিনি আরও বলেন, “উজানে ভারতে বৃষ্টিপাত বেশি হলে নেমে আসা ঢলে আমাদের এখানে নদীর পানি আরও বাড়তে পারে।”
তিস্তায় পানি বৃদ্ধির কারণে লালমনিরহাট সদর, জেলার পাটগ্রাম, হাতিবান্ধা, কালিগঞ্জ, আদিতমারী, নীলফামারীর ডিমলা, জলঢাকা, রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা, কুড়িগ্রামের রাজারহাট, উলিপুর এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তা অববাহিকার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যাচ্ছে। নিমজ্জিত হচ্ছে বাদাম, শাক-সবজিসহ বিভিন্ন ফসল।
গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদ তামান্না জানান, এখনও প্লাবন পরিস্থিতি হয়নি। নদীর চরাঞ্চলে বসবাস করা বাসিন্দাদের উঁচু জায়গায় গবাদি পশু ও অন্যান্য সামগ্রী রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। বন্যা হলে রেসকিউ করার জন্য টিম প্রস্তুত রয়েছে।
রংপুরের ডিসি মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান জানান, বন্যা মোকাবেলায় মাঠ পর্যায়ে প্রশাসনকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সম্ভাব্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছেন তারা।
রংপুর বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এখন পর্যন্ত বন্যার আভাস পাওয়া যায়নি। তবে বন্যা হলে যাতে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য সরকারিভাবে সব ধরনের আগাম প্রস্তুতি নেওয়া আছে। প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সার্বক্ষণিক নদীপাড়ের পরিস্থিতির খোঁজখবর রাখছেন।