তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, বিগত সরকারের সময় যারাই দেশের ছাত্র-জনতাকে গুম, খুন বা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, পর্যায়ক্রমে তাদের সবার বিচার করা হবে।
বাসস জানিয়েছে, মঙ্গলবার দুপুরে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে জুলাই শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি একথা বলেন।
মাহফুজ আলম বলেন, “অঙ্গীকার নিয়ে এসেছিলাম যে বিচারের কাজ শুরু করব, আমরা সেই বিচারের কাজ শুরু করতে পেরেছি। যারা দেশের ছাত্র-জনতা হত্যা ও গুমের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাদের সবারই বিচার হবে।”
তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাসহ অনেকের বিচার কাজই ট্রাইব্যুনালে চলমান রয়েছে। পরবর্তীতে জনগণের ভোটে যে সরকার নির্বাচিত হবেন, তারা এ বিচার কাজকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবেন।
উপদেষ্টা মাহফুজ বলেন, “আমার এলাকা রামগঞ্জ, তথা লক্ষ্মীপুরে মাদক নিরাময়কেন্দ্র, নার্সিং কলেজ স্থাপন, সদর হাসপাতাল উন্নতিকরণ ও শিক্ষা ব্যবস্থাসহ অনেকগুলো কমিশন সংস্কারের প্রস্তাবনা প্রস্তুত করেছে।:
তিনি বলেন, “খুব শিগগিরই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্যের ভিত্তিতে যে সংস্কার না করলেই নয়, নির্বাচনের পূর্বে আমরা সেসব সংস্কার করতে চাই।”
মাহফুজ আলম বলেন, “শেখ হাসিনা যে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে, যে প্রতিষ্ঠানগুলো হাসিনাকে টিকিয়ে রেখেছিল— সেই প্রতিষ্ঠানগুলোকে একই রকম রেখে আমরা নির্বাচন করতে পারি না।”
তিনি বলেন, “নির্বাচন করার আগে অবশ্যই হাসিনার দালালদেরকে উৎখাত করে এবং খুনি হাসিনাসহ তার দোসরদের বিচার করে আমাদের নির্বাচনের দিকে এগোতে হবে।”
উপদেষ্টা মাহফুজ আলম লেন, “আগামী সাপ্তাহে ফ্যাসিস্ট, খুনী শেখ হাসিনার বিচার হবে এবং আমরা একটি রায় পাব। এতে জুলাই শহীদদের পরিবার, যারা অবর্ণনীয় কষ্টের ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন, তাদের ব্যথা কিছুটা হলেও লাঘব হবে।”
তিনি বলেন, “সংস্কার কাজে আমরা অনেক দূর অগ্রসর হয়েছি। রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যমত হয়ে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছেন— এটা বাংলাদেশের জন্য বড় একটি প্রাপ্তি। এর ভেতর দিয়ে বাংলাদেশ একটা নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করল।”
তিনি আরও বলেন, “জুলাই সনদ ও সংস্কার কার্যক্রমের মাধ্যমে পরবর্তীতে যে নির্বাচিত সরকার আসবে, তারা যদি সংস্কার কাজগুলোকে যথাযথভাবে করতে পারে তাহলে যে নতুন বাংলাদেশ আমরা চেয়েছিলাম, সে রকম একটা বাংলাদেশ দেখতে পাব। যেখানে সবার ক্ষমতার ভারসাম্য থাকবে, বিচারে আইনের শাসন থাকবে, সুবিচার থাকবে। গুম খুন আর ফেরত আসবে না।”
রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে মাহফুজ আলম বলেন, “আসুন, বাংলাদেশপন্থার মধ্য দিয়ে আমরা যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তি আছি, ঐক্যবদ্ধ হই। সংস্কারগুলো করার জন্য সরকারকে সহযোগিতা করুন। প্রয়োজনে আমরা আবার লড়াই করব, শহীদদের পথ অনুসরণ করে আমরা শাহাদাতের পথ বেছে নেব।”
তিনি বলেন, শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট শাসনব্যবস্থা উৎখাত করে সন্তুষ্ট হলে চলবে না, বরং আওয়ামী লীগ ফ্যাসিজমের যত বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন প্রান্তে, প্রশাসনে, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে রয়ে গেছে, তাদেরকেও বিচারের আওতায় আনতে হবে।
সভা শেষে তথ্য উপদেষ্টা রামগঞ্জের দরিদ্র কৃষকদের মাঝে কৃষি প্রণোদনা বিতরণ, জুলাই শহীদ পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ ও সাবেক এমপি ও প্রতিমন্ত্রী জিয়াউল হক জিয়ার ৯ম মৃত্যুবার্ষিকী অনুষ্ঠানে যোগদান করেন।
রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম রবিন শীষের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন— এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-আহবায়ক মাহাবুব আলমসহ উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, সুশীল সমাজ ও নাগরিকরা।
এর আগে সকালে উপদেষ্টা রামগঞ্জ পৌঁছালে তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার ও পুলিশ সুপার মো. আকতার হোসেনসহ প্রশসানের কর্মকর্তারা।



