Beta
শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

এক হারিকেনে গোটা দ্বীপ ধ্বংসস্তূপ

২৪০ কিলোমিটার বেগে চার নম্বর ক্যাটেগরির হারিকেন বেরিল সোমবার দ্বীপটিতে আঘাত হানে।
২৪০ কিলোমিটার বেগে চার নম্বর ক্যাটেগরির হারিকেন বেরিল সোমবার দ্বীপটিতে আঘাত হানে।
[publishpress_authors_box]

হারিকেন বেরিলের থাবায় নিজের মনোরম বাড়িটি হারানোর পর প্রাণে বেঁচে গেলেও ধ্বংসযজ্ঞ দেখে হতবাক ক্যাটরিনা কোয়।

গত সোমবার ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের ইউনিয়ন দ্বীপে আঘাত হানে বেরিল। এটি ক্যাটাগরি-৪ অর্থাৎ শক্তির নিরিখে ধ্বংসাত্মক ঘূর্ণিঝড় হয়ে উঠেছিল।

ক্যাটরিনা বলেন, সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড গ্রেনাডাইনসের কাছে অবস্থিত দ্বীপটির কার্যত প্রতিটি ভবন ধ্বংস বা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এক ভিডিও বার্তায় ক্যাটরিনা বলেন, “বেরিলের আঘাতের পর ইউনিয়ন দ্বীপটি ভয়ানক অবস্থায় রয়েছে। আক্ষরিক অর্থেই প্রায় পুরো দ্বীপটি গৃহহীন হয়ে পড়েছে।

“এখানে আর কোনও ভবন দাঁড়িয়ে নেই বললেই চলে। বাড়িঘর সব ভেঙে পড়েছে, রাস্তা অবরুদ্ধ, বিদ্যুতের খুঁটি রাস্তায় পড়ে আছে।”

জেলে এবং মাছ ধরার গাইড সেবাস্তিয়ান সাইলিও তার কথায় সায় দেন- “সবকিছু হারিয়ে গেছে। আমার এখন থাকার জায়গাটাও নেই।”

সাইলি ১৯৮৫ সাল থেকে ইউনিয়ন দ্বীপের বাসিন্দা। ২০০৪ সালের ভয়ঙ্কর হারিকেন ইভানের পরও বেঁচে ছিলেন। কিন্তু হারিকেন বেরিল তার চেয়েও ভয়াবহ ঠেকেছে তার কাছে।

সাইলি বলেন, “যেন একটা টর্নেডো এখান দিয়ে গেছে। দ্বীপের ৯০ শতাংশ মাটিতে মিশে গেছে।”

তার কণ্ঠে আতঙ্ক আর ভয়ের মাত্রা এখনও স্পষ্ট।

“আমি আমার স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছিলাম এবং সত্যি বলতে কি, আমি নিশ্চিত ছিলাম না যে আমরা বাঁচবো কি না?”

তার চাচাতো ভাই আলিজি তার পরিবার নিয়ে একটি হোটেল চালান। তিনিও হারিকেন বেরিলের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন।

আলিজি বলেন, তারা ঝড় থেকে বাঁচতে দরজা এবং জানালাগুলো ভারী আসবাবপত্র দিয়ে ঠেস দিয়ে কোনোমতে বন্ধ করে রাখতে পেরেছিলেন।

“বাতাসের চাপ ও গতি এত তীব্র ছিল যে তা কানে তালা লাগিয়ে দিচ্ছিল। আমরা শুনতে পাচ্ছিলাম, আশেপাশের এক বাড়ির ছাদ ভেঙে অন্য বাড়ির ওপর পড়ছে। জানালা ভেঙে বানের পানিতে ভেসে যাচ্ছে।”

“কেউ জানত না যে এটা এতটা ভয়ঙ্কর হবে, সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল,” বলেন আলিজি।

হারিকেন বেরিলের আঘাতে ইউনিয়ন দ্বীপের ৯০ শতাংশ বাড়ি ধসে পড়েছে।

সাইলি মূলত একজন কৃষক; মৌমাছি পালনের পাশাপাশি মাছও ধরেন তিনি। তার দুটি কৃষি খামার এবং খামারের মৌচাকগুলোও সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে।

তবে দ্বীপের বাসিন্দাদের তাৎক্ষণিক অগ্রাধিকার হল আশ্রয়। লোকে তাদের পরিবারের জন্য একটি অস্থায়ী বাসস্থানের তৈরি করতে কাঠ এবং প্লাস্টিকের শিট সংগ্রহ করার চেষ্টা করছে।

কিন্তু এখন পানি ও খাবার খুঁজে পাওয়াও কঠিন হয়ে যাচ্ছে, বলেন সাইলি।

আলিজি বলেন, ইউনিয়ন দ্বীপে অন্যান্য অনেক পণ্যও জরুরিভাবে প্রয়োজন, যেমন- টিনজাত খাবার এবং গুঁড়ো দুধ থেকে শুরু করে স্যানিটারি পণ্য, প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং তাঁবু। আর বিদ্যুতের জন্য অবশ্যই জেনারেটর।

বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ এখনও বন্ধ থাকায় এখন তিনি শুধু ইলন মাস্কের স্পেসএক্সের চালু করা স্টারলিংক নেটওয়ার্কে সংযোগ করে বার্তা পাঠাতে সক্ষম হয়েছেন।

সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড গ্রেনাডাইনস এর সরকার বলেছে, তারা সমস্যার মাত্রার তীব্রতা স্বীকার করে।

মঙ্গলবার সকালের ভাষণে সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড গ্রেনাডাইনস এর প্রধানমন্ত্রী র‌্যালফ গনসালভেস বলেন, “হারিকেন বেরিল— এক বিপজ্জনক এবং বিধ্বংসী হারিকেন— এসেছে এবং চলে গেছে। তবে এটি তার চিহ্ন অপরিমেয় ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে রেখে গেছে। আমাদের দেশজুড়ে শুধু ব্যথা এবং যন্ত্রণা।”

যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হারিকেন-পরবর্তী পুনর্গঠনের কাজ শুরু করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি।

তবে সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় অর্থ তহবিল, সংস্থান এবং জনবল আছে কি না, তা নিয়ে ইউনিয়ন দ্বীপের বাসিন্দাদের মধ্যে সংশয় রয়েছে।

সাইলি বলেন,“আমি আশা করি, তারা আমাদের সাহায্য করার জন্য সেনাবাহিনী এবং কোস্টগার্ড পাঠাতে পারবে। তারা দ্বীপটি পুনর্নির্মাণ করতে সক্ষম কি না, সে বিষয়ে আমার কোনও ধারণা নেই। এতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার লাগবে, এক বছর বা তারও বেশি সময় লাগবে এবং আন্তর্জাতিক সাহায্যের প্রয়োজন হবে।”

মানচিত্রে ইউনিয়ন দ্বীপের অবস্থান।

ইউনিয়ন আইল্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল অ্যালায়েন্সের ডিরেক্টর ক্যাটরিনা কোয় প্রবাসী ক্যারিবিয়ানদের প্রতি যে কোনও উপায়ে সাহায্য পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “আমাদের সাহায্যের খুব প্রয়োজন। ইমার্জেন্সি কিট, খাবার, উদ্ধার, এই মুহূর্তে সবই দরকার।”

ক্যাটরিনা গত কয়েক বছর ধরে ইউনিয়ন দ্বীপের পানীয় জলের সুরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন। পানি ক্যারিবিয়ানের এই ছোট্ট দ্বীপের বাসিন্দাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ।

ক্যাটরিনার আন্তর্জাতিক সহকর্মীরা বলছেন, হারিকেন বেরিলের ফলে তার সব কাজ ধ্বংস হয়ে গেছে।

২৪০ কিলোমিটার গতির বাতাসের শক্তি নিয়ে হারিকেন বেরিল সোমবার ক্যারিবিয়ান দ্বীপটিতে আঘাত হানে।

হাজার হাজার মানুষ এখনও বিদ্যুৎহীন এবং অনেকে সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড গ্রেনাডাইনস ও গ্রেনাডা অ্যান্ড সেন্ট লুসিয়াতে অস্থায়ীভাবে আশ্রয়ে রয়েছেন।

দ্বীপের প্রতিটি ইঞ্চিজুড়ে ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে দাঁড়িয়ে সাইলি বেঁচে থাকাটাকেই পরম সৌভাগ্য ভাবছেন।

“সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, আমরা এখনও বেঁচে আছি। যে অবস্থার ভেতর দিয়ে আমরা গেছি, ঝড়ের যে শক্তি দেখেছি, তারপরও আজ আমি ও আমার প্রতিবেশীরা যে বেঁচে আছি, তাতেই খুশি।”

তথ্যসূত্র : বিবিসি

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত