গাজার পর লেবাননেও ইসরায়েলি হামলায় ক্ষোভে ফুঁসছেন আরব ও মুসলিম আমেরিকানরা। তার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিস তাদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন।
অন্যদিকে, তিনি বারবার ইসরায়েলের প্রতিও তার অটল সমর্থনের কথা বলে যাচ্ছেন। ফলে কমলা আরব ও মুসলিম আমেরিকানদের সমর্থন কতটা অর্জন করতে পারবেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ও তার প্রচার দল আরব ও মুসলিম ‘সম্প্রদায়ের নেতাদের’ সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ইতোমধ্যে তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টির সঙ্গে জোটবদ্ধ মুসলিম ব্যক্তি এবং গোষ্ঠীগুলোর কাছ থেকে অনুমোদনও পেয়েছেন।
তবে অনেক পরামর্শক বলছেন, যতক্ষণ হ্যারিস ইসরায়েলকে অস্ত্র দেওয়ার প্রতিশ্রুতি বজায় রাখবেন এবং প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ইসরায়েলের প্রতি নিঃশর্ত সমর্থন থেকে নিজেকে দূরে রাখতে অস্বীকার করবেন, ততক্ষণ কিছুতেই তিনি আরব ও মুসলিম ভোটারদের মন জয় করতে পারবেন না।
তদুপরি সমালোচকরা হ্যারিস ও তার শীর্ষ জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের বাছাই করা কিছু লোকের সঙ্গে ব্যক্তিগত বৈঠকের নিন্দা করেছেন। কারণ তারা যাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন তারা আরব ও মুসলিমদের আমেরিকানদের প্রকৃত প্রতিনিধি নন এবং তাদের পরিচয়ও প্রকাশ করা হচ্ছে না।
ওয়াশিংটন ডিসির ফিলিস্তিনি আমেরিকান অ্যাকটিভিস্ট লরা আলবাস্ট আল জাজিরাকে বলেন, “ডেমোক্রেটিক পার্টি এই ধরনের গ্রুপ এবং অপরিচিত ব্যক্তিদের শুধু লোক দেখানোর জন্য ব্যবহার করছে। তাদেরকে কমলা হ্যারিসের প্রচারণা শিবিরই বাছাই করেছে। কমলা হ্যারিস অর্থপূর্ণ নীতির পরিবর্তে ট্রেন্ড ও মিম অনুসরণের উপর বেশি মনোযোগ দেন।”
তিনি বলেন, আরব ও মুসলিম ভোটাররা তাদের মতো দেখতে কিছু লোকের সঙ্গে কমলা হ্যারিসের হাত মেলানো দেখেই তাকে ভোট দেবেন এবং যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত ইসরায়েলি নৃশংসতাকে ভুলে যাবেন– এমন ভাবাটা ‘বাতুলতা’।
বৈঠক
আরব ও মুসলিম ভোটারদের কাছে পৌঁছানোর জন্য কমলা হ্যারিস এমন এক সময়ে এই প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন যখন ইসরায়েল গাজার পর লেবাননেও হামলা শুরু করেছে এবং এই পরিস্থিতি ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের আরব ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভ ও উদ্বেগ বাড়ছে।
এদিকে নির্বাচনেরও আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ বাকি। আগামী ৫ নভেম্বর ভোটগ্রহণ হবে।
জুলাইয়ের শেষদিকে কমলা হ্যারিস ডেমোক্রেট প্রার্থী হওয়ার পর থেকেই এসব সম্প্রদায়ের সদস্যরা তাকে বাইডেনের অবস্থান থেকে সরে আসার এবং ইসরায়েলের প্রতি সামরিক সহায়তায় লাগাম টানার আহ্বান জানিয়ে আসছেন।
কিন্তু কমলা হ্যারিস সেসব আহ্বানে কান দেননি। আগস্টে তার প্রচারণা শিবির শিকাগোতে ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কনভেনশনে একজন ফিলিস্তিনি আমেরিকান বক্তাকে কথা বলার অনুমতি দেওয়ার আবেদনও প্রত্যাখ্যান করে।
আর গত সপ্তাহে তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে এক ফোন কলে বাইডেনের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন, যেখানে তারা ইসরায়েলের প্রতি দৃঢ় সমর্থন প্রকাশ করেন।
হ্যারিস গত রবিবার মিশিগানের ডেট্রয়েটের উত্তরে ফ্লিন্টে আরব ও মুসলিম পরামর্শকদের সঙ্গে দেখা করেন। মিশিগানে বিশাল সংখ্যক আরব ভোটার রয়েছে এবং এটি নির্বাচনের মূল যুদ্ধক্ষেত্রগুলোর একটি। তার কয়েকদিন আগে কমলার শীর্ষ জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাও কার্যত একই ধরনের বৈঠক করেছিলেন।
ডেট্রয়েট এলাকার লেবানিজ আমেরিকান রাজনৈতিক পরামর্শদাতা হুসেইন দাবাজেহ স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে অভিযোগ তুলে এই ধরনের বৈঠকের নিন্দা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, কমলা হ্যারিসের প্রচারদল আরব ও মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে খোলামেলা সংলাপ করতে ‘ভয়’ পাচ্ছে। তাই তারা তাদের কথা শোনার ভান করে দরজার আড়ালে বৈঠক করছেন। ডেমোক্রেটিক পার্টি দেখাতে চায় যে তাদের প্রার্থী অন্তর্ভুক্তিমূলক ও যত্নশীল।
দাবাজেহ আল জাজিরাকে বলেন, “এসব বৈঠক শুধু লোক দেখানো। এগুলোর কোনও সারবত্তা নেই।
“আমাদের মানুষদের ওপর এক বছরের বেশি সময় ধরে গণহত্যার পরেও এই ভুয়া মিটিংগুলো যে কাজ করবে বলে তারা বিশ্বাস করে– এটা দুর্ভাগ্যজনক।”
বাইডেনের প্রচারদলও তার প্রার্থতা প্রত্যাহারের আগে একই ধরনের সভা করেছিল। কিন্তু সেসব বৈঠকও আরব ও মুসলিম আমেরিকানদের মধ্যে তার ভোট বাড়াতে বা গাজা যুদ্ধের প্রতি তার সমর্থনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রশমিত করতে ব্যর্থ হয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে বছরে কমপক্ষে ৩.৮ বিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তা দেয়। এর বাইরে বাইডেন প্রশাসন চলমান যুদ্ধে অর্থায়নে সহায়তা করার জন্য আরও ১৪ বিলিয়ন ডলারের প্যাকেজ অনুমোদন করেছে।
‘সঙ্কটজনক সময়’
ফ্লিন্টের সভায় যোগদানকারীদের মধ্যে একটি পক্ষ ছিল ‘এমগেজ অ্যাকশন’। এটি একটি মুসলিম আমেরিকান রাজনৈতিক পরামর্শক গ্রুপ।
গ্রুপটি এক বিবৃতিতে বলেছে, “এমগেজ অ্যাকশন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে ক্ষমতায় আসার পর গাজা যুদ্ধের অবসান ঘটানো এবং যুক্তরাষ্ট্রের নীতি বদলানোর আহ্বান জানিয়েছে।
“আমরা সেই সংকট মোকাবেলায় আমাদের সংস্থা এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের হতাশার কথাও পুনর্ব্যক্ত করেছি। আমরা বলেছি আমাদের সম্প্রদায়ের মানুষদের জীবন বিপন্ন এবং এখন তা একটি বৃহত্তর আঞ্চলিক যুদ্ধে রূপ নিচ্ছে।”
ডেপুটি ওয়েন কাউন্টি এক্সিকিউটিভ আসাদ তুর্ফ, যিনি লেবাননে ইসরায়েলের ২০০৬ সালের যুদ্ধের সময় পরিবারের সদস্যদের হারিয়েলেন, তিনিও সভায় উপস্থিত ছিলেন।
সোশাল মিডিয়ায় দেওয়া এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, “আমি ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের সঙ্গে দেখা করেছি এবং আমার এই গভীর ব্যক্তিগত ক্ষতির কথা জানিয়েছি। আমি জোর দিয়েছিলাম যে, সহিংসতার অবসান ঘটাতে সাহায্য করার জন্য আমাদের এখন তার নেতৃত্বের প্রয়োজন।
“আমি আশা করি যে তার প্রশাসন এই আহ্বানটি গুরুত্ব সহকারে নেবে এবং অতি প্রয়োজনীয় ত্রাণ এবং বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে দ্রুত কাজ করবে, যা আমরা সবাই আশা করি।”
আসাদ জানান, তিনি লেবাননে বাস্তুচ্যুত মানুষের সমস্যা, লেবাননে আটকে পড়া আমেরিকান নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা এবং অবিলম্বে মানবিক সহায়তার বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন।
তিনি বলেন, “এই সংকটময় সময়ে, আমরা সবাই কৌশলের বিষয়ে একমত নাও হতে পারি, তবে আমাদের অবশ্যই একসঙ্গে কাজ করতে এবং এই যুদ্ধের অবসান ঘটাতে হবে। এ ছাড়া এখনই লেবানন ও গাজার জনগণকে ত্রাণ সহায়তা দিতে হবে!
“আমাদের অবশ্যই এমন পদক্ষেপের জন্য চাপ দিতে হবে, যা কেবল জীবনই বাঁচাবে না, বরং যারা কষ্ট পাচ্ছে তাদের আশা এবং মর্যাদাও ফিরিয়ে আনবে।”
হ্যারিসকে সমর্থন
লেবাননে ইসরায়েলের বিধ্বংসী বোমা হামলার কয়েকদিন আগে গত মাসের শেষদিকে এমগেজ যখন ঘোষণা করেছিল তারা কমলা হ্যারিসকে সমর্থন দেবে, তখন অনেকেই ভ্রু কুঁচকেছিলেন।
এমগেজ প্রায় একচেটিয়াভাবে ডেমোক্র্যাটদের সমর্থন করে এবং ডেমোক্রেটিক প্রশাসনে কাজ করেছেন– এমন ব্যক্তিদের দ্বারা পরিচালিত হয়। তাদের যুক্তি হলো– রিপাবলিকান প্রার্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ঠেকানোর জন্যই তারা কমলা হ্যারিসকে সমর্থন দিয়েছে।
এক বিবৃতিতে গ্রুপটি বলেছে, “এই সমর্থন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের সঙ্গে সমস্ত বিষয়ে কোনও চুক্তি নয় বরং আমাদের ভোটাররা ব্যালট বাক্সে যে কঠিন পছন্দের মুখোমুখি হয়েছেন সে বিষয়ে একটি সৎ নির্দেশনা।”
ফেডারেল চাকরিতে মুসলিম-আমেরিকানদের নিয়োগের জন্যও বাইডেন-হ্যারিস প্রশাসনের প্রশংসা করেছে এমগেজ।
তবে কিছু পরামর্শক কমলার প্রতি সমর্থনকে বিভ্রান্তিকরই নয় বরং অপমানজনকও হিসাবেও দেখছেন।
মিশিগানের আরব ও মুসলিম আমেরিকান সম্প্রদায়ের পরামর্শক সুয়েহাইলা আমেন এমগেজের জন্য একটি ভয়ঙ্কর বার্তা দেন। তিনি বলেন, “আমি বিরক্ত যে, আপনাদের কারোরই কোনো মর্যাদা বা সম্মান নেই। বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের ওপর গণহত্যা চালানোর পরও আপনারা মাথা উঁচু করে রাখতে পারেন না।”
লেবানিজ-আমেরিকানদের একটি বড় অংশের বাস মিশিগানে। তাদের মধ্যে কয়েক হাজার এসেছেন লেবাননের দক্ষিণের গ্রাম ও শহর থেকে, যেসব স্থানে ইসরায়েল এখন ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে।
এমগেজ ও এর দুই প্রতিনিধি তাদের অবস্থানের সমালোচনার বিষয়ে মন্তব্যের জন্য আল জাজিরার বারবার অনুরোধেও সাড়া দেননি।
ফিলিস্তিনি অ্যাকটিভিস্ট এবং কৌতুক অভিনেতা আমের জাহর, কমলা হ্যারিসের প্রতি এমগেজের সমর্থনকে ‘নিজ সম্প্রদায়ের মুখে থুতু’ দেওয়ার শামিল বলে অভিহিত করেছেন।
কমলা হ্যারিসের অবস্থান
এমগেজ ছাড়াও জর্জিয়া এবং ওয়াশিংটন ডিসি এলাকার ২৫ জন মুসলিম ইমাম ও সম্প্রদায়ের ব্যক্তিত্বরা গত সপ্তাহে কমলার সমর্থনে একটি যৌথ বিবৃতি দেন।
সর্বপ্রথম এনবিসি নিউজে প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে তারা কমলা হ্যারিসকে ‘গাজায় ধ্বংসাত্মক প্রাণহানি এবং উদ্ভূত মানবিক সংকট’ এর বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য কৃতিত্ব দেন। তবে তারা ইসরায়েলের প্রতি কমলার সমর্থনের বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, “যখন গাজায় যুদ্ধ শুরু হয়, তখন কমলা হ্যারিস মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে আঞ্চলিক নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং স্পষ্ট করেন যে, যুক্তরাষ্ট্র একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান অনুসরণ করবে। গাজার পুনর্গঠন কেমন হবে সে বিষয়েও তিনি কথা বলেন। কমলা এটাও স্পষ্ট করেছিলেন যে, আন্তর্জাতিক মানবিক আইনকে অবশ্যই সম্মান করতে হবে।”
বাইডেন প্রশাসনের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাও গাজার দুর্ভোগ নিয়ে নিন্দা করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেছেন, বাস্তুচ্যুত এবং বোমাবর্ষণ সহ্য করা ফিলিস্তিনি শিশুদের চোখে তিনি তার ‘নিজের সন্তানদের’ দেখেন।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কর্মকর্তা যখন বলেন যে, ইসরায়েল গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে দিচ্ছে না তখন তিনি তা অস্বীকার করেন। তিনি প্রত্যায়ন করেন যে, ইসরায়েল গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে দিচ্ছে এবং ইসরায়েলকে অস্ত্র সহায়তা অব্যাহত রাখার আদেশ দেন।
ব্লিনকেনের মতো কমলা হ্যারিসও যখন গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর নৃশংসতা নিয়ে কথা বলেন তখন ভাববাচ্য ব্যবহার করেন এবং সরাসরি ইসরায়েলকে দায় দেওয়া এড়িয়ে যান।
এ ছাড়াও হ্যারিস প্রায়ই জোর দিয়ে বলেন যে, ইসরায়েলের প্রতি তার সমর্থন ‘অটুট’ আছে। তিনি এমন একটি প্রশাসনের অংশ ছিলেন, যা গাজার উপর নৃশংস যুদ্ধের জন্য নিঃশর্ত সমর্থন দিয়েছে এবং সম্প্রতি লেবাননে ইসরায়েলি হামলাকেও স্বাগত জানিয়েছে।
বাইডেনের জায়গায় থাকলে ভিন্ন কী করতেন– সম্প্রতি কমলা হ্যারিসকে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “তেমন কিছু মাথায় আসছে না”। এ ছাড়া তিনি জোর দিয়ে বলেন, হোয়াইট হাউসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তিনিও অংশ নিয়েছিলেন।
জো বাইডেন-কমলা হ্যারিস প্রশাসন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো তিনটি প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে।
গত সপ্তাহে কমলা হ্যারিস, রাশিয়া বা চীন নয়, ইরানকে আমেরিকার সবচেয়ে বড় শত্রু হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি কার্যত ইসরায়েলের নেতানিয়াহু সরকারের সঙ্গে সুর মেলান।
‘রাজনৈতিক এজেণ্ডা’
কমলা হ্যারিসের রেকর্ড এবং তার রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পেরও ইসরায়েলের প্রতি সমানভাবে দৃঢ় সমর্থন সেইসঙ্গে তার অভিবাসী বিরোধী বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে, অনেক আরব ও মুসলিম ভোটার যুক্তরাষ্ট্রের দ্বি-দলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে হতাশ বোধ করেন।
সোমবার মিশিগান-ভিত্তিক মুসলিম গোষ্ঠী অ্যাবানডন হ্যারিস ক্যাম্পেইন বলে যে, তাদের লক্ষ্য হলো ডেমোক্রেটিক প্রশাসনকে ‘গাজা গণহত্যার জন্য দায়ী’ করা। এজন্য তারা গ্রিন পার্টির প্রার্থী জিল স্টেইনকে সমর্থন করেছেন।
এক বিবৃতিতে গ্রুপটি বলে, “আমাদের আন্দোলন এটা নিশ্চিত করার জন্য নিবেদিত রয়েছে যে, আমেরিকান জনগণ, বিশেষ করে মুসলিম-আমেরিকান সম্প্রদায়, নিপীড়নের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর এবং গণহত্যা বন্ধ করার জন্য আমাদের সমস্ত শক্তি ব্যবহার করার দায়িত্ব স্বীকার করে— বিশ্বের যেখানেই তা ঘটুক না কেন।
“তাই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আমরা জিল স্টেইনকে সমর্থন করি।”
স্টেইনের কার্যত প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। তবে ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে তার সমর্থনের কারণে সাম্প্রতিক জরিপগুলোতে আরব ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে তার সমর্থনের ঢেউ দেখা গেছে।
ট্রাম্প আরব ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে তার ভোট বাড়তে দেখেছেন। গত মাসে, দক্ষিণ-পূর্ব মিশিগানের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ শহর হ্যামট্রামকের ইয়েমেনি আমেরিকান মেয়র ট্রাম্পকে সমর্থন দেন।
নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সাম্প্রতিক নির্বাচনী প্রচারণায় যুক্তরাষ্ট্রে আরব ও মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব এবং অগ্রাধিকার সম্পর্কে বিতর্ক উঠেছে। তারা একই রকম সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় অনুশীলন অনুসরণ করলেও সব বিষয়ে একমত নয়।
আমেরিকান-আরব বৈষম্যবিরোধী কমিটি রবিবার এক বিবৃতিতে বলেছে, “আমরা আমাদের সম্প্রদায়ের যারা তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডার জন্য আরব জনগণের রক্ত শোষণ করে চলেছে, তাদের দ্ব্যর্থহীনভাবে নিন্দা করছি।
“এর মধ্যে আমাদের সম্প্রদায়ের কিছু ব্যক্তি এবং সংস্থা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যারা ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান পার্টির সঙ্গে যুক্ত। তারা নিজ সম্প্রদায়ের মানুষদের চেয়ে দল, ন্যায়বিচারের চেয়ে রাজনীতিকে বেশি প্রাধান্য দেয় এবং নিজেদের সুবিধার জন্য গণহত্যার অপরাধও উপেক্ষা করে।”
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা