কক্সবাজারের টেকনাফের হ্নীলায় অপহৃত শিশুটির খোঁজ চার দিনেও মেলেনি। তবে তার পরিবার পেয়েছে অপহরণকারীদের ফোন। তাতে মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছে ২০ লাখ টাকা।
এদিকে শিশুটি অপহরণের ঘটনা তদন্তে পুলিশ চার রোহিঙ্গাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গনি।
অপহৃত ছোয়াদ বিন আব্দুল্লাহ (৬) হ্নীলা ইউনিয়নের পূর্ব পানখালী এলাকার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর ছেলে। সে পূর্ব পানখালী এলাকার আবু হুরাইরা মাদ্রাসার প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
গত ৯ মার্চ দুপুরে ক্লাস শেষে বাড়ি ফেরার সময় অপহরণকারীকে তাকে অটোরিকশায় তুলে নিয়ে যায় বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
বুধবার শিশুটির মা নুরজাহান বেগম সাংবাদিকদের বলেন, কারা, কী কারণে ছোয়াদকে অপহরণ করেছে, তা বুঝতে পারছেন না তারা। তবে মঙ্গলবার রাতে অজ্ঞাত পরিচয়ের এক ব্যক্তির ফোন এসেছিল। ওই ব্যক্তি ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছেন। বিষয়টি পুলিশকেও জানিয়েছেন তারা।
বিকালেই ওসি মুহাম্মদ ওসমান গনি পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানান। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন,
টেকনাফ উপজেলার মোচনী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা উম্মে সালমা (২৪), লায়লা বেগম, কোবরা বেগম ও মোহাম্মদ হাশেম এবং উদ্ধার করা অটোরিকশার চালক নাছির উদ্দিন (২৬)।
ওসি বলেন, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় শিশু ছোয়াদের মা নূরজাহান বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থল ও আশপাশের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে, অটোরিকশাটিও চিহ্নিত করা হয়।
পরে গত ১০ মার্চ সন্ধ্যায় কক্সবাজার শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে অটোরিকশাসহ চালক নাছির উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার স্বীকারোক্তি ও সিসিটিভির ফুটেজ দেখে ১২ মার্চ টেকনাফের মোচনী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে উম্মে সালমা বুধবার ঘটনায় জড়িত থাকার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন বলেও জানান ওসি। তিনি বলেন, অপহরণকারীরা সংঘবদ্ধ চক্র। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বাকিদের ধরতে অভিযান চলছে।
এর আগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার সদর থেকে অপহৃত মাদ্রাসা শিক্ষার্থী রাশিকুল ইসলামকে (১৫) এখনো উদ্ধার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
র্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারি পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী জানান, ২ মার্চ রাতে উখিয়া উপজেলার থাইংখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এরা হলেন, উখিয়ার ১২ নম্বর ক্যাম্পের আবদুল্লাহ (৩৪), আমিন উল্লাহ (১৯) ও কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের মুহুরী পাড়ার মো. তারেক (১৮)।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি চকরিয়া ফাঁসিয়াখালি দারুল উলুম মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাশিকুল ইসলাম নিখোঁজ হয়। এ ঘটনায় তার মা নাছিমা ইয়াসমিন সদর থানায় একটি অভিযোগ করেন। সেখানে বলা হয়, ৭ ফেব্রুয়ারি অপরিচিত একটি ফোন নম্বর থেকে কল দিয়ে জানানো হয় যে, রাশিকুলকে অপহরণ করা হয়েছে। মুক্তিপণ হিসেবে দুই লাখ টাকা না দিলে তাকে মেরে ফেলা হবে।
এরপর পর্যায়ক্রমে অপহরণকারীদের দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ দেয় রাশিকুলের পরিবার। সবশেষ আবারও দুই লাখ টাকা দাবি করে অপহরণকারীরা। তবে এ ঘটনায় এক মাসের বেশি সময় পার হলেও রাশিকুলকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
র্যাব জানিয়েছে, রাশিকুল অপহরণের ঘটনায় তিনজনতে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি অপহরণ কাজে ব্যবহৃত একটি স্মার্ট ফোন, একটি সাধারণ ফোন ও একটি সিম কার্ড উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, মো. তারেক কৌশলে রাশিকুলকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে থাইংখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখান থেকে পরিকল্পনা অনুযায়ী একটি অটোরিকশায় করে তাকে টেকনাফে নিয়ে গিয়ে চক্রের আরেক সদস্যের কাছে তাকে হস্তান্তর করা হয়। ওই রাতেই তাকে মিয়ানমারে পাচার করে দেওয়া হয়। সে হিসেবে রাশিকুল এখন মিয়ানমারে জিম্মি রয়েছে।
এদুটি ঘটনা নিয়ে ২০২৩ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ এর মার্চ পর্যন্ত কেবল টেকনাফেই ১০১টি অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে ৫১ জন স্থানীয় এবং ৫০ জন রোহিঙ্গা।
এদের মধ্যে ৪৬ জন মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন।