Beta
রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫

আনারের আসন এখনও শূন্য নয়, সংসদের দিকে তাকিয়ে ইসি

anar-parliament-290524
[publishpress_authors_box]

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের মৃত্যুর খবর প্রায় দুই সপ্তাহ হতে চললেও তার আসন শূন্য ঘোষণা করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশন সংসদ সচিবালয়ের দিকে তাকিয়ে আছে বলে জানিয়েছেন কমিশনার মো. আলমগীর।

সোমবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা জানিয়ে তিনি বলেন, “স্পিকার যখন মৃত্যু সনদ পাবেন, তখন সংসদ আসটি শূন্য ঘোষণা করবেন। শূন্য ঘোষণা করলে গেজেট আমাদের কাছে পাঠিয়ে দেবেন। এরপর আমরা নির্বাচনের ব্যবস্থা করব।”

৫৬ বছর বয়সী আনার গত ১২ মে গিয়েছিলেন পাশের দেশ ভারতে। ধারণা করা হচ্ছে, পরদিনই তিনি খুন হন। কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জিবা গার্ডেন্সের একটি ফ্ল্যাটে আনার খুনের বিষয়টি ২২ মে নিশ্চিত করে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেদিন আনারের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন। শোক প্রকাশ করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

এর কদিন পর নিউ টাউনের সঞ্জিবা গার্ডেন্সের সেপটিক ট্যাক থেকে মাংসের কিছু টুকরা উদ্ধার করা হয়। সেগুলো আনারের দেহের অংশ কি না, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তার লাশের সন্ধানে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশেরই গোয়েন্দারা।

আনারের মৃত্যুর খবর জানার প্রায় দুই সপ্তাহ হতে চললেও আসন শূন্য ঘোষণা করতে গিয়ে এক ধরনের জটিলতা তৈরি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কমিশনের পক্ষ থেকে সোমবারই প্রথম মুখ খুললেন কমিশনার আলমগীর।

নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন কমিশনার মো. আলমগীর। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

সংসদ সদস্যের সাধারণ মৃত্য কিংবা অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে ওই আসনে কী হবে- এমন প্রশ্নে নির্বাচন কমিশনার আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, “সংবিধানের ৬৬ বা ৬৭তে এ বিষয়ে আমরা কোনও কিছু উল্লেখ দেখি না। মৃত্যুজনিত কারণে সংসদ সদস্য পদ শূন্য হবে- এটি আমি এ পর্যন্ত সংবিধানে দেখিনি। সাধারণত এটি ধরে নেওয়া হয়, যদি সংসদ সদস্য মৃত্যুবরণ করেন তার পক্ষে তো আর সংসদে আসা সম্ভব নয়। এটি ধরে নিয়েই আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয় এবং আমাদেরকে যখন জানানো হয়, আমরা সংবিধানের ১২৩ অনুযায়ী নির্বাচন করি।”

ঝিনাইদহ-৪ আসনের ক্ষেত্রে কী হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “স্বাভাবিক বা অপমৃত্যু যাই হোক না কেন- এটা হলো সংসদের দায়িত্ব। স্পিকার যখন মৃত্যু সনদ পাবেন তখন সংসদ আসটি শূন্য ঘোষণা করবে। শূন্য ঘোষণা করলে গেজেট আমাদের কাছে পাঠিয়ে দেবেন। এরপর আমরা নির্বাচনের ব্যবস্থা করব।”

সংসদ সদস্যের মৃত্যুর কারণে আসন শূন্য হবে- এ বিষয়ে সংবিধানে স্পষ্ট করে কেন উল্লেখ নেই জানতে চাইলে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, “এটি তো আমি বলতে পারব না। সংসদ সচিব সাহেবকে জিজ্ঞেস করবেন, ওখানে যারা মাননীয় সংসদ সদস্যরা আছেন, উনারা বললে বলতে পারেন।”

সংবিধানে না থাকার বিষয়টি অসঙ্গতি কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “থাকলে ভালো হতো। যেহেতু টানা ৯০ দিন অনুপস্থিত থাকলে স্পিকার সংসদ সদস্য পদ শূন্য ঘোষণা করেন। যদিও সংবিধানে স্পষ্ট করে বলা নাই- মৃত্যুজনিত কারণে সংসদ সদস্য পদ শূন্য হবে।”

নির্বাচন কমিশনার আলমগীর বলেন, ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনার মারা গেছেন কি না- সে বিষয়টি কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে জানে না।

তিনি বলেন, “আমরা অফিসিয়ালি জানি না। এটি সংসদ থেকে গেজেট করে যখন জানাবে তখন আমরা জানতে পারব- উনি মারা গেছেন কি না। সংসদ যদি আসনটি শূন্য ঘোষণা করে তখন আমরা নির্বাচনের ব্যবস্থা করব।”

‘ধাপে ধাপে ভোটের সিদ্ধান্ত কমিশন নিতে পারে না’

ধাপে ধাপে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারে না বলে জানান মো. আলমগীর।

তিনি বলেন, “আমাদের বক্তব্য হলো- পদ্ধতি যেটাই হোক না কেন, পদ্ধতি ঠিক করবেন রাজনৈতিক দল, সংসদ, ভোটার- তারাই ঠিক করবেন। যে পদ্ধতিই অনুসরণ করা হোক না কেন, সংবিধানে যে অবস্থা থাকবে, সেই অবস্থার মধ্যে আমরা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব নির্বাচনটা সুষ্ঠু করার। ওটা নিয়ে আমাদের ব্যক্তিগত পছন্দ, অপছন্দ নাই।”

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল গতকাল রবিবার ধাপে ধাপে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগ্রহের কথা জানান। 

সোমবার সাংবাদিকরা এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে নির্বাচন কমিশনার আলমগীর বলেন, “ওইটা হলো কমিশনের কোনও সিদ্ধান্ত হিসেবে বলেননি উনি। উনি যেটা বলেছেন সেটা হলো যে, একাডেমিক ডিসকাশনের ক্ষেত্রে উনি মনে করেন সেইটা। এই রকম সিদ্ধান্ত দেয়নি যে কমিশন মনে করে এই পদ্ধতিটা ভালো। সেটি ব্যক্তিগত আলোচনা।”

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) সঙ্গে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের ভালো দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি।

আলমগীর বলেন, “ইভিএমে বিশ্বাস করা উচিত। কারণ ইভিএমে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, কোনও প্রার্থী বলেনি কারচুপি হয়েছে। এই ধরনের একটি অভিযোগও আমরা পাইনি। সব রাজনৈতিক দল যদি ইভিএমের ভোটের বিষয়টি সমর্থন করতো তাহলে ভালো হতো- সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।”

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ধাপে ধাপে নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা আছে কি না- জানতে চাইলে এই কমিশনার বলেন, “এখানে আমার ব্যক্তিগত কোনও পছন্দ-অপছন্দের বিষয় নেই। এটা হলো জাতীয় সংসদ, দেশের রাজনৈতিক দল যে পদ্ধতি নির্ধারণ করবেন। কমিশন সেই পদ্ধতি অনুসরণ করে নির্বাচন করবে।”

তিনি জানান, নির্বাচন কমিশন কোনও গাইডলাইন দিতে পারে না, সুপারিশ করতে পারে না। বরং সংবিধানে যা আছে, সে অনুযায়ী চলে।

মো. আলমগীর বলেন, “রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরাই ঠিক করে দেবেন যে, এই দেশের শাসন ব্যবস্থা কেমন হবে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কেমন হবে, সরকার ব্যবস্থা কেমন হবে, নির্বাচন ব্যবস্থা কেমন হবে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত