Beta
মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

মমতার পদত্যাগ দাবিতে রণক্ষেত্র কলকাতা

Kolkata
[publishpress_authors_box]

আর জি কর মেডিকেল কলেজের নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় উত্তাল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে মঙ্গলবার ‘নবান্ন অভিযান’ বা সচিবালয় ঘেরাওয়ের ডাক দেয় ছাত্র-জনতা।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সামাল দিতে পুলিশকে ব্যবহার করতে হয়েছে জলকামান, টিয়ার গ্যাস। মঙ্গলবার বেলা ১টার দিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সচিবালয়ে গেলে কলকাতার কলেজ স্কয়ার থেকে মিছিল শুরু হয়। এতে ভারতের জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে অংশ নেন বহু শিক্ষার্থী ও জনতা।

দুপুর ১টা ২০ মিনিটের দিকে বিক্ষোভকারীরা হাওড়ার সাঁতরাগাছি তথা হাওড়া ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় পৌঁছালে পুলিশ তাদের গতিরোধ করে। বিক্ষোভকারীরা তখন পুলিশকে লক্ষ্য করে তাদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ড ও লাঠি ছুড়ে মারে। এক পর্যায়ে তারা ব্যারিকেড ভেঙে সামনে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন পুলিশ প্রথমে জলকামান, পরে টিয়ার গ্যাস ছোড়ে।

এতেও শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ না হলে লাঠিচার্জ করতে বাধ্য হয় পুলিশ। এতে আন্দোলনকারীরা পুলিশকে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। এরপর কলকাতার আরও কয়েকটি জায়গায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে দিনভর পুরো কলকাতা পরিণত হয় রণক্ষেত্রে।

রাজ্য সরকার সচিবালয় ‘নবান্ন’ সংলগ্ন এলাকায় ৩৬৩ ধারা জারি করেছে। অর্থাৎ একসঙ্গে পাঁচজনের বেশি মানুষ জমায়েত নিষিদ্ধ করেছে।

ধর্ষকদের শাস্তির দাবিতে শুরু হওয়া বিক্ষোভ প্রতিবাদ এখন এক দফা দাবিতে রূপ নিয়েছে।

বিক্ষোভকারীরা বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যর্থ হয়েছেন। মমতা পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

শিক্ষার্থীদের এই এক দফা দাবির আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছে রাজ্যের বিরোধীদল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ও বামপন্থীরা।

এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার রাজ্যে কোনও বিক্ষোভ-মিছিলের অনুমতি দেওয়া হয়নি। বিরোধীরা অস্থিতিশীলতা তৈরির লক্ষ্যে ষড়যন্ত্র করছে বলে সোমবার অভিযোগ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক দল তৃণমূল কংগ্রেস। বিক্ষোভকারীদের পদযাত্রা ঠেকাতে সচিবালয়ের চারপাশের রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা বসিয়ে কলকাতা পুলিশ নবান্নকে কার্যত একটি দুর্গে পরিণত করে।

বিক্ষোভকারীদের যেকোনও পথ থেকে সচিবালয়ের দিকে অগ্রসর হতে বাধা দিতে প্রায় ৬ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। বিক্ষোভকারীদের ওপর নজর রাখতে ড্রোনও ব্যবহার করা হয়।

তারপরও সব নিরাপত্তা ব্যারিকেড ভেঙ্গে বিক্ষোভকারীরা নবান্নের দিকে যেতে চাইলে তাদের ওপর টিয়ার গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ। এতে বিক্ষোভকারীরাও পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছুড়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এতে এখন পর্যন্ত প্রাণহানির কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, দুপুর থেকেই কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে পুলিশের বসানো ব্যারিকেড ভেঙে নবান্ন অভিমুখে অগ্রসর হচ্ছিলেন বিক্ষোভকারীরা। ব্যারিকেডের ওপরে উঠে স্লোগান দিতে দেখা যায় তাদের। বিক্ষোভকারীরা ‘দাবি এক, দফা এক, মমতার পদত্যাগ’ সহ বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিচ্ছেন। বিক্ষোভকারীদের অনেকের হাতে কালো পোস্টারেও লেখা রয়েছে স্লোগান। কারও কারও হাতে রয়েছে জাতীয় পতাকা

বিক্ষোভকারীরা বলেছেন, আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে তারা নবান্নে যেতে চান। কিন্তু পুলিশ তাদের বাধা দিচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় এখনও সংঘর্ষ চলছে।

মমতার তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, এই বিক্ষোভ মিছিল মূলত বিজেপি সমর্থিত।

তবে আয়োজকেরা বলছেন, এটি ছাত্র সংগঠনগুলোর পরিকল্পিত মিছিল। তবে যেসব ছাত্র সংগঠনের কথা বলা হয়েছে সেগুলোর অধিকাংশেরই নিবন্ধন নেই। এরই মধ্যে অধিকাংশ পরিচিত ছাত্র সংগঠনগুলো, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছাত্র সংগঠনগুলো বিক্ষোভ থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিয়েছে।

অন্যদিকে রাজ্যের বিধানসভায় বিরোধী দল বিজেপির নেতা শুভেন্দু অধিকারী জানান, প্রতিবাদ পরিকল্পনায় অংশ নেওয়া চার ছাত্রকর্মী নিখোঁজ হয়েছেন।

বিক্ষোভকারী চারজনকে গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ জানিয়েছে, আজকের বিক্ষোভ মিছিলের সময় বড় ধরনের সহিংসতা সংঘটনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এমনকি হত্যা বা হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্রও করা হয়েছিল। জনসাধারণের নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাদের পরিবারকে জানানো হয়েছে।

তৃণমূল বলেছে, এই মিছিল ছাত্রদের বিক্ষোভের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা।

রাজ্যমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য সোমবার গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘এটা বিজেপি-এবিভিপির গোলযোগ তৈরির চক্রান্ত। পুলিশের ইউনিফর্মে অপরাধীদের গুলি চালানোর চক্রান্ত। আগামীকাল পরীক্ষা আছে। ছাত্ররা কি এটা করতে পারে? তারা লাশের রাজনীতি করছে।’

দুটি ভিডিও প্রকাশ করে তৃণমূল কংগ্রেস দাবি করে যে, বিরোধীরা অশান্তি সৃষ্টির চক্রান্ত করেছে। ভিডিওগুলোতে বেশ কয়েকজন পুরুষকে বলতে শোনা যায়, ‘আমাদের লাশ দরকার।’

তৃণমূল নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, ‘বিজেপি নেতৃত্বকে বলা হয়েছে, নন্দীগ্রামের মতো ঘটনা না ঘটলে এবং লাশ না পড়লে গণজোয়ার বিজেপির পক্ষে যাবে না।’

সোমবার বিজেপির ডাকে রাজ্যের বিভিন্ন থানা ঘেরাও করেও মুখ্যমন্ত্রী মমতার পদত্যাগের দাবি করেন দলটির নেতা-কর্মীরা। মমতার পদত্যাগের দাবিতে কোচবিহারের মাথাভাঙ্গা, শিলিগুড়ি, মাটিগাড়া, নিউ জলপাইগুড়ি, পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম, মেদিনীপুর, কাঁকসা, বারাবনী, বীরভূমের সিউরি, বারাকপুরের নোয়াপাড়া এবং উত্তর ২৪ পরগনার ঘোলায় থানা ঘেরাও করা হয়।

তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, আজকের আন্দোলন সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক কর্মসূচির অংশ। তারপরও রাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলো তাদের এই আন্দোলনকে রাজনৈতিক রং দেওয়ার চেষ্টা করছে।

গত ৯ আগস্ট (শুক্রবার) ভোরে কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে মৌমিতা দেবনাথ নামে এক তরুণী শিক্ষানবীশ ডাক্তারের মরদেহ পাওয়া যায়। ওই তরুণী সেখান থেকেই এমবিবিএস পড়ার পর পোস্টগ্র্যাজুয়েট শেষ করে হাসপাতালে যোগ দেন।

জানা যায়, আগের রাতে তিনি টানা ৩৬ ঘণ্টার ‘অন-কল’ ডিউটিতে ছিলেন। ডিউটি শেষে সহকর্মীদের সঙ্গে অনলাইনে আনানো খাবার খেয়ে তিনি চারতলায় পালমোনোলজি বিভাগের সেমিনার হলে কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম নিতে যান।

পরদিন সকালে সহকর্মীরা ওই হলের ভেতরেই তার মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। কলকাতার শহরতলীতে সোদপুর এলাকার একটি অতি সাধারণ নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে মৌমিতা।

পরিবারের অভিযোগ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ তাদের প্রথমে জানিয়েছিল তাদের মেয়ে ‘আত্মহত্যা’ করেছে। পরে ময়নাতদন্তে ধরা পড়ে তাকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।

দুদিন বাদে এই খবর প্রকাশের পর কলকাতাসহ ভারতের বিভিন্ন শহরের রাস্তায় নেমে আসেন হাজার হাজার চিকিৎসক। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় সাধারণ জনতাও।

কিন্তু এতোদিনেও সেই ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের দোষীদের সনাক্ত করে বিচারের আওতায় না আনতে পারায় সেই আন্দোলন এখন রুপ নিয়েছে মমতার পদত্যাগ দাবির আন্দোলনে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত