Beta
বুধবার, ১৪ মে, ২০২৫
Beta
বুধবার, ১৪ মে, ২০২৫

রাগ ঝাড়লেই কি রাগ কমে

anger-venting-can-not-help-to-reduce-this-emotion
[publishpress_authors_box]

রেগে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রকাশ করলেই কমে যাবে- আমাদের মুরুব্বীরা এবং প্রচলিত জ্ঞান এমনটাই বলে। রেগে যাওয়ার পর এই প্রকাশকে অনেক সময়ই তুলনা করা হয় ‘প্রেশার কুকার’ থেকে বাষ্প বের হওয়ার সঙ্গে।

কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা। যুক্তরাষ্ট্রের ওহিও স্টেট ইউনিভার্সিটিতে এই নিয়ে ১৫৪টি গবেষণা হয়েছে। সেসব গবেষণায় পাওয়া তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করেই আরেকটি গবেষণা চালিয়ে বিজ্ঞানীরা বলছেন, রাগ প্রকাশ করার পর সেটি কমে যাবে- এমন কোনও প্রমাণ তারা পাননি। বরং উল্টা ফল এসেছে। কিছু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, ভেন্টিং বা রাগ প্রকাশ করলে সেটি আরও বেড়ে যেতে পারে।

এ প্রসঙ্গে প্রবীণ লেখক এবং যোগাযোগ বিজ্ঞানী ব্র্যাড বুশম্যান বলেন, ” আপনি রেগে গেলে সেটি ঝেড়ে বা প্রকাশ করে ফেলে বুক হালকা করার মিথটি সত্যিকার অর্থেই উড়িয়ে দেয়ার মতো একটি ব্যাপার। রাগের প্রকাশ ঘটানোর কথা শুনতে ভালো লাগলেও, ক্যাথারসিস (গ্রিক শুদ্ধিকরণ প্রক্রিয়া) তত্ত্বকে সমর্থনে বিজ্ঞানে কোনও জায়গা নেই।”

তার মানে এই নয় যে রাগ উপেক্ষা করা উচিত। এই অনুভূতির প্রতিফলন আমাদের বুঝতে সাহায্য করে- কেন আমরা উন্মাদ হয়ে উঠি এবং এর পরে অন্তর্নিহিত সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করি।

রাগ কোনও কোনও ক্ষেত্রে মানবিক আবেগের ভারসাম্যকেও সহায়তা করে। এটি মন নিয়ন্ত্রণের গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ।

অনেক সময় আমরা রাগ বা হতাশা দূর করতে সেটি প্রকাশ করি। কোনও কোনও সময় এই প্রকাশ সীমা অতিক্রম করে বেশি ক্ষতি বয়ে আনতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, অনেকে রাগ দূর করতে শারীরিক পরিশ্রমেরও আশ্রয় নেন, যা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হলেও, তাৎক্ষণিকভাবে মন খারাপের মাত্রা কমানোয় ভূমিকা নাও রাখতে পারে।

ওহিয়োর ওই গবেষণাগুলোর আওতায় বিভিন্ন বয়স, লিঙ্গ, সংস্কৃতি ও জাতিভেদে মোট ১০ হাজার ১৮৯জন অংশগ্রহণ করেছেন। গবেষকরা বলছেন, রাগ কমাতে শারীরিক উত্তেজনাকে বরং নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী।

বিজ্ঞানী ব্র্যাড বুশম্যান বরং বলছেন ভিন্ন তরিকার কথা। তার মতে, “রাগ কমাতে, উত্তেজনার মাত্রা হ্রাস করে এমন ক্রিয়াকলাপে জড়িত হওয়া ভাল।

তিনি বলেন, “প্রচলিত জনপ্রিয় জ্ঞান এমন অনেক কথা বললেও রেগে গেলে এমনকি দৌড়ের মতো শারিরীক পরিশ্রম থেকেও বিরত থাকা উচিত, কেননা এটি উত্তেজনার মাত্রা বাড়ায় এবং উলটা ফল দিতে পারে।“

গবেষণাপত্রটির মূল লেখক ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটির যোগাযোগ বিজ্ঞানী সোফি কেজারভিক বলেন, “গবেষণাটি আংশিকভাবে ‘রেজ রুম’-এর জনপ্রিয়তা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিল, যেখানে লোকেরা অর্থের বিনিময়ে রাগ মুক্তির আশায় নানা ধরনের জিনিস ভাঙচুর করেন।”

তিনি বলেন, “প্রকাশের মাধ্যমে রাগ কমানোর তত্ত্বটিকে ভুল প্রমাণ করতে চেয়েছিলাম। আমরা দেখাতে চেয়েছি যে, রাগের উত্তেজনা কমানোর ক্ষেত্রে শারীরিক দিক থেকেও সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ।”

গবেষণাকারী দলটি নিজেদের গবেষণার জন্য মনোবিজ্ঞানী শেক্হতার-সিঙ্গার এর তত্ত্বকে ভিত্তি করে এগিয়েছেন। এ তত্ত্বে

রাগ (এবং অন্যান্য সমস্ত আবেগ)- এর মতো অনুভূতিকে শারীরিক এবং একটি মনোজগত দিয়ে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে।

কেজারভিক এবং বুশম্যানের মতে, রাগ নিয়ে আগের গবেষণাগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কেবল মনোজগতের ওপর জোর দিয়ে হয়েছে। কগনিটিভ বিহেভিয়েরাল (জ্ঞানীয় আচরণগত) থেরাপি মেনে হওয়া ওইসব গবেষণায় মূলত রাগকে কেন্দ্র অংশগ্রহণকারীদের মানসিক ভারসাম্য রক্ষার ব্যাপারটি পরীক্ষা হয়েছে।

নতুন গবেষণাটি, ক্রোধ প্রশমিত করার ক্ষেত্রে বিকল্প অনুসন্ধানের চেষ্টা চালিয়েছে। তারা দেখানোর চেষ্টা করেছে যে, রাগ কমাতে যে যে ধরনের পদ্ধতি আমরা বহুলভাবে ব্যবহার করি- তার মধ্যে কোনগুলো অকার্যকর।  

তাদের গবেষণায় বক্সিং, সাইক্লিং এবং জগিং থেকে শুরু করে গভীর শ্বাস নেওয়া, ধ্যান করা এবং যোগব্যায়াম পর্যন্ত উত্তেজনা-বর্ধক এবং উত্তেজনা-হ্রাসকারী ইত্যাদি পরীক্ষা করা হয়েছে।

কেজারভিক এবং বুশম্যানের গবেষণা অনুযায়ী, ধীরগতির যোগব্যায়াম, মননশীলতা, পেশি শিথিলকরণ, গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস, এবং একটু বিরতি নেওয়ার মতো শান্তিমূলক কার্যক্রমগুলো বিভিন্ন পরিস্থিতি এবং মানুষের ক্ষেত্রে রাগ কমাতে সাহায্য করে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, পেশি শিথিলকরণের মতো সাধারণ বিশ্রামের কৌশল মননশীলতা বা ধ্যানের মতোই কার্যকর হতে পারে। যোগব্যায়াম তুলনামূলক বেশি উদ্দীপনামূলক হলেও এটি শ্বাসপ্রশ্বাসে মনোযোগ দিতে সাহায্য করে এবং রাগ কমাতে সহায়তা করে।

গবেষকরা বলছেন, রাগ প্রকাশের চেয়ে তা ঠাণ্ডা করার দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। চাপ কমানোর জন্য কার্যকর প্রমাণিত কৌশলগুলো রাগের শারীরবৃত্তীয় উৎসও দমিয়ে দিতে পারে। মজার খেলার মতো শারীরিক কার্যক্রম কিছু ক্ষেত্রে সাহায্য করলেও দৌড়ানোর মতো উচ্চ উদ্দীপনা সৃষ্টি করা ক্রিয়াকলাপ কখনো কখনো রাগ বাড়াতে পারে।

রাগ প্রকাশে সাময়িক ভালো লাগতে পারে, কিন্তু এটি আগ্রাসনকে আরও বাড়িয়ে তোলে। রাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য বিরতি নেওয়া, ১০ পর্যন্ত গোনা ভালো কৌশল।

ফ্রি ইউটিউব ভিডিও কিংবা অ্যাপগুলো থেকেও গাইড লাইন নেয়া যেতে পারে। তবে সবচেয়ে ভালো শরণাপন্ন হওয়া।

গবেষণাটি এ বছরের এপ্রিলে ক্লিনিকাল সাইকোলজি রিভিউ জার্নালে প্রকাশ হয়েছে।

সায়েন্স অ্যালার্ট এর নিবন্ধ অনুসরণে

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত