Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪

বঙ্গভবন ঘেরাওয়ের হুমকি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের

sohid minar-4
[publishpress_authors_box]

চলতি সপ্তাহের মধ্যেই রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ ও আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

এ সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে রাষ্ট্রপতির বাসভবন বঙ্গভবন ঘেরাওয়ের হুমকিও দিয়েছে সংগঠনটি, যাদের ব্যানারে তীব্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার।

মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গণজমায়েত কর্মসূচি থেকে এ ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।

ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে সৃষ্ট ধূম্রজালের মধ্যে তার পদত্যাগপত্র নিয়ে সম্প্রতি নতুন তথ্য দেন প্রবীণ সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরী। তিনি দাবি করেন, শেখ হাসিনার কোনও পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতি পাননি।

মতিউর রহমান চৌধুরীর গত ১৯ অক্টোবর সেই প্রতিবেদন প্রকাশের পর তা নিয়ে তুমুল আলোচনা শুরু হয়।

গতকাল ‘সন্ত্রাসী ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ও ফ্যাসিবাদের দোসর রাষ্ট্রপতি চুপ্পুর (রাষ্ট্রপতির ডাকনাম) পদত্যাগের দাবিতে বিপ্লবী ছাত্র-জনতার গণজমায়েত’ কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এর অংশ হিসেবে মঙ্গলবার বিকাল ৩টা থেকে শহীদ মিনারে অবস্থান নেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।

বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে সমাবেশ শুরু হয়। প্রথমে সেখানে কিছুক্ষণ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়।

তখন কয়েকজন সমন্বয়ক- রিফাত রশীদ, আবু বাকের মজুমদার, আব্দুল হান্নান মাসুদকে পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে সমন্বয়করা সমাবেশে যোগ দেন ।

এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “চুপ্পু মসনদে বসে ফ্যাসিবাদের চর্চা করে যাচ্ছেন। তার পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। আমাদের বিপ্লব শেষ হয় নাই। আমরা হাসিনাকে হটিয়েছি। কিন্তু রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করতে পারি নাই। যতদিন পর্যন্ত ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলগুলো সুস্থ ও গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে পারছি ততোদিন এই আন্দোলন চলবে।”

তিনি বলেন, “ছাত্রলীগ গত ১৬ বছর ধরে একটি সন্ত্রাসী সংগঠনের মতো কাজ করেছে। এদের হাতে নিহত বা আহতের তালিকা অনেক বড়। এদের অবিলম্বে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করতে হবে।”

এসময় ডানপন্থী ও বামপন্থী সব গণতান্ত্রিক শক্তিকে জাতীয় ঐক্যের প্রশ্নে এক হওয়ার আহ্বান জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই সমন্বয়ক।

মানবজমিন পত্রিকার রাজনৈতিক সাময়িকী জনতার চোখে গত ১৯ অক্টোবর মতিউর রহমান দাবি করেন, রাষ্ট্রপতি তাকে বলেছেন, “আমি শুনেছি তিনি (শেখ হাসিনা) পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু আমার কাছে কোনও দালিলিক প্রমাণ নেই। বহু চেষ্টা করেও আমি ব্যর্থ হয়েছি।”

এ নিয়ে আলোচনার মধ্যে গতকাল সোমবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ তোলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, “অসত্য বলার মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি তার পদের শপথ ভঙ্গ করেছেন।”

এই প্রেক্ষাপটে সোমবার রাতে বঙ্গভবনের প্রেসউইং থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। সেখানে শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। তিনি বলেছেন, ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা নিয়ে সব প্রশ্নের উত্তর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মতামতে মীমাংসিত হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ইস্যুতে মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে উদ্ধৃত করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে যে প্রচারণা চালানো হয়েছে, তা জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে।  

তবে সেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতি পেয়েছিলেন কি না- তা নিয়ে কোনও বক্তব্য নেই।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। তারপর থেকে আত্মগোপনে আছেন দলটির প্রথম সারির প্রায় সব নেতাই। এর মধ্যে গত আড়াই মাসে অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন, অনেকে আবার দেশ ছেড়েছেন বলে খবর মিলছে।

সমাবেশ থেকে হাসনাত আব্দুল্লাহ ৫ দফা দাবি ঘোষণা করেন। সেগুলো হলো-

১. অনতিবিলম্বে ৭২ এর সংবিধান বাতিল করতে হবে। সে জায়গায় ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের পক্ষ থেকে নতুন করে সংবিধান লিখতে হবে।

২. এই সপ্তাহের মধ্যে ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে চিহ্নিত করে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। তাদেরকে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করতে হবে।

৩. এই সপ্তাহের মধ্যে বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দীনকে পদচ্যুত করতে হবে।

৪. জুলাই বিপ্লব ও গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটের আলোকে ২৪ পরবর্তী বাংলাদেশ বিনির্মাণে এই সপ্তাহের মধ্যে নতুন করে রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে।

৫. ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণা করতে হবে। এসব নির্বাচনে যারা নির্বাচিত হয়েছিল তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। একই সঙ্গে তারা যেন ২৪ পরবর্তী বাংলাদেশে কোনোভাবেই প্রাসঙ্গিক হতে না পারে ও নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সেজন্য আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত