ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যার প্রতিবাদে সোমবার বিক্ষোভ হয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশজুড়ে। বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলি পণ্য বিক্রির অভিযোগ তুলে ভাঙচুর চালিয়েছে কেএফসি, বাটা ও ইউনিমার্টের শোরুমে।
গাজায় ইসরায়েলের চলমান গণহত্যার প্রতিবাদে ফিলিস্তিনের পক্ষে সোমবার গোটা বিশ্বে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে হয় বিক্ষোভ ও সমাবেশ। ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এর মধ্যেই বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।
ঢাকায় সোমবারই শুরু হয়েছে চারদিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলন। সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ ৪০টি দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রায় ৬ শতাধিক দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী অংশ নিচ্ছেন।
তারা যখন এদেশে বিনিয়োগের উপযুক্ততা-সম্ভাব্যতা যাচাই করছেন এমন সময়ে বিভিন্ন স্থানে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ওপর এ ধরনের হামলা হলো।
এদিন গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর অব্যাহত গণহত্যা ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ।
ঢাকা
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য ও অপরাজেয় বাংলার সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।
এ সময় তাদের হাতে ‘বয়কট ট্রাম্প’, ‘সেভ ফিলিস্তিন’, ‘বয়কট ইউএসএ’ লেখা প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। পোড়ানো হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কুশপুত্তলিকাও।
এদিন বিক্ষোভ হয়েছে ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস সড়কে। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে প্রগতি সারণিতে মিছিল করে মার্কিন দূতাবাসের সামনের সড়কে অবস্থান নেন বিক্ষোভকারীরা।
এসময় দূতাবাসের নিরাপত্তায় সেখানে অবস্থান নেয় সেনা ও পুলিশ সদস্যরা। বিক্ষোভের কারণে প্রগতি সারণিতে যান চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর, মিরপুর, মহাখালী, বসুন্ধরা আবাসিকসহ বিভিন্ন এলাকায় ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ হয়।
সিলেট
সিলেটে মিছিলের পরে ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান অভিযোগ তুলে নগরীর মীরবক্সটুলায় কেএফসি রেস্টুরেন্টে ভাঙচুর চালায় একদল মানুষ। দরগাহ গেইট এলাকায় বাটার শোরুম ও আম্বরখানা এলাকায় ইউনিমার্ট সুপারশপও ভাঙচুর করা হয়।
বিকাল ৩টার দিকে নগরের বিভিন্ন স্থান থেকে মিছিল নিয়ে বিক্ষোভকারীরা চৌহাট্টা এলাকায় সমবেত হয়। সেখান থেকে বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ ‘তৌহিদী জনতা’ ব্যানারে নগরের মীরবক্সটুলায় ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান দাবি করে কেএফসি রেস্টুরেন্টে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে।
এসময় তারা ‘নারায়ে তাকবির’, ‘ফিলিস্তিন, ফিলিস্তিন’ স্লোগান দিয়ে রেস্টুরেন্টের ভেতরে থাকা বিভিন্ন কোমল পানীয় নষ্ট করে। এসময় একটি ট্রাকে থাকা কোকা-কোলাসহ বিভিন্ন কোমল পানীয়র বোতল ভেঙে ফেলা হয়। মূল সড়ক থেকে ইটপাটকেল ছুড়ে কেএফসির সামনের প্রায় সম্পূর্ণ গ্লাস ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনার পর রেস্টুরেন্টটি বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ।
এক বিক্ষোভকারী বলেন, “নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের গণহত্যাকারী ইসরায়েলি কোনও প্রতিষ্ঠানের ঠাঁই এ দেশে হবে না। কেএফসি রেস্টুরেন্টে ইসরায়েলি বিভিন্ন কোমল পানীয় বিক্রি করা হচ্ছে। এটি মেনে নেওয়া যায় না। এ জন্য ভাঙচুর চালানো হয়েছে।”
এর আগে দুপুর ১২টা থেকে নগরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় সমবেত হয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। বিএনপি, বাসদ, আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়া বিক্ষোভ মিছিল শেষে প্রতিবাদ সমাবেশ করে।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, “চলমান হামলা শুধু একটি অঞ্চলের নয়, সমগ্র মানবতার প্রতি আঘাত। এই অমানবিকতা বন্ধে বিশ্ব নেতাদের এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।”
শহরজুড়ে প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে জানিয়ে সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়াউল হক সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ কেএফসিতে ভাঙচুর চালিয়েছে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।”
এছাড়া জিন্দাবাজার বারুতখানা রোডে বাটার শোরুমে প্রায় আধা ঘণ্টা ব্যাপী ভাঙচুর চালানো হয়। শোরুমের জিনিসপত্র রাস্তায় বের করে এনে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
কক্সবাজার
একই অভিযোগে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে কক্সবাজার শহরেও। মিছিল থেকে কলাতলী মোড়ে কেএফসি, পিৎজা হাটসহ কয়েকটি দোকানের সাইনবোর্ড লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে।
বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিভিন্ন পেশার মানুষ মিছিল নিয়ে প্রথমে পাবলিক লাইব্রেরির দৌলত ময়দানে জড়ো হয়। পরে সেখান থেকে কলাতলী মোড়ে যাওয়ার পথে কেএসসি ও পিৎজা হাটের ব্রাঞ্চ সামনে পড়ে। ব্রাঞ্চ দুটিতে ইসরায়েলি পণ্য রয়েছে অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ মিছিল থেকে সাইনবোর্ড লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়া হয়।
কক্সবাজার সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইলিয়াস খান জানান, সেখানে কোনও ভাঙচুর হয়নি। উত্তেজিত জনতা শুধু কেএফসি, পিৎজা হাট, কোক, পেপসির লোগো দেখে ঢিল ছুড়েছে।
নারায়ণগঞ্জ
নারায়ণগঞ্জ শহরে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। বেলা ১১টার দিকে নগরের চাষাঢ়া গোলচত্বর এলাকায় শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেয়। এতে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে সৃষ্টি হয় যানজটের।
চাঁদপুর
বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে চাঁদপুরেও। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শহরের হাসান আলী উচ্চবিদ্যালয় মাঠ থেকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সমাবেশ করে।
রাজশাহী
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে সমাবেশে অংশ নেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।