ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে আসছেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা।
অন্যদিকে পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, দুপুরের পর থেকেই সমাবেশে যোগ দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জড়ো হতে থাকেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
বিকাল ৪টার দিকে শহীদ মিনারে সামনে দেখা যায়, হকিস্টিক, বাঁশ, লাঠি ইত্যাদি হাতে নিয়ে আসছেন কোটাবিরোধীরা। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে মিছিলও করা হয়।
এছাড়া শহীদ মিনারের সামনে দিয়ে যাওয়ারে পথে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীবাহী একটি বাসে হামলা করে আন্দোলনকারীরা।
তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ বলেন, “আমরা এখনও অহিংস আন্দোলনে আছি। কিন্তু আমাদের উপর যদি হামলা হয়, কোনও উস্কানি আসে, আমরা তার জবাব দিতে প্রস্তুত। গতকাল আমাদের বোনদের মেরেছে ছাত্রলীগ। আজকে যদি আবার আসে তাহলে বোনদের নিরাপত্তা দিতে আমরা শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়ব।”
রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নেওয়া ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতেও ছিল বাঁশ, লাঠি, হকিস্টিকের মতো দেশি অস্ত্র। অনেকের মাথায় ছিল হেলমেট।
ছাত্রলীগের অবস্থান কর্মসূচিতে বহিরাগত কিশোরদের উপস্থিতি দেখা গেছে। এদের হাতেও ছিল লাঠি, রড, বেসবল ব্যাট, হকিস্টিক, স্টিলের পাত।
রুমেল নামে এক কিশোর জানায়, সে লেখাপড়া করে না। তবে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজ মাহমুদের সঙ্গে আদাবর থেকে রাজু ভাস্কর্যে এসেছে।
ছাত্রলীগের সমাবেশে সংগঠনের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, “আন্দোলন আসবে আন্দোলন যাবে, তবে ছাত্রলীগ থাকবে। প্রতিটি ঘটনার জবাব দেওয়া হবে। কারা হল ভাঙচুর করছে, কারা হামলা চালাচ্ছে, কারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করছে, সব দেখা হচ্ছে। সবাইকে উচিত জবাব দেওয়া হবে।”
রাজাকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বিকৃতভাবে প্রচার করা হচ্ছে দাবি করে ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বিকৃতভাবে ছড়িয়ে সারা দেশে অস্থিরতা ছড়ানো হচ্ছে। এই সহিংসতা মেনে নেওয়া হবে না। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এর শেষ দেখে ছাড়বে।”
গত আট দিন ধরে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চললেও কোথাও ছাত্রলীগ বাধা দেয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “গতকাল আন্দোলনের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। এটা মেনে নেবে না ছাত্রলীগ। সাধারণ শিক্ষার্থীরা আক্রান্ত হলে ছাত্রলীগ প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।”
কোটাবিরোধীদের আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “আন্দোলনকারীরা ব্যর্থতা বুঝতে পেরেই সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছে। তারা দেশিয় অস্ত্র নিয়ে হলে হলে ঢুকে ভাংচুর করেছে, লুটপাট করেছে, ছাত্রলীগ নেতাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। তারা আসলে কোটার সংস্কার চায় না, কোটার নামে বিভ্রান্ত ছড়িয়ে অন্য ফায়দা লুটতে চায়।”
মঙ্গলবার দিনভর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে অচল হয়ে পড়ে ঢাকা শহর। বন্ধ হয়ে যায় রেল যোগাযোগও।
এছাড়া বিচ্ছিন্ন সহিংসতায় ঢাকাসহ কয়েকটি স্থান থেকে শিক্ষার্থী নিহতের খবরও এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ চার জেলায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
বিজিবি বলছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মঙ্গলবার দুপুরের পর ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও বগুড়ায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।