Beta
বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫
সরকারের ১০০ দিন

সংস্কার ও নির্বাচনের পথনকশা চান আনু মুহাম্মদ

বৃহস্পতিবার ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘অন্তর্বর্তী সরকারের আশু করণীয় : প্রস্তাব ১০০ দিনে কতটা বাস্তবায়ন হলো’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
বৃহস্পতিবার ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘অন্তর্বর্তী সরকারের আশু করণীয় : প্রস্তাব ১০০ দিনে কতটা বাস্তবায়ন হলো’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
[publishpress_authors_box]

অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পার হয়েছে। সংস্কার আগে না, নির্বাচন আগে- এই বিতর্ক চলছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। এমন প্রেক্ষাপটে ১০০ দিনের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে সরকারকে সংস্কার ও নির্বাচনের পথনকশা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। সরকার এসব কাজে বেশি সময় নিলে অনাস্থা তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি আয়োজিত ‘অন্তর্বর্তী সরকারের আশু করণীয় : প্রস্তাব ১০০ দিনে কতটা বাস্তবায়ন হলো’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।

অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পূর্ণ হয়েছে ১৫ নভেম্বর। এই সময় সরকার বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী ও যুগোপযোগী করতে সংস্কারসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

এরই মাঝে গত ৫ অক্টোবর গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ১৩ দফা দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে সেগুলোর অগ্রগতি পর্যালোচনা করেন কমিটির অন্যতম সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।

ছাত্র-জনতার যে আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়, সেই আন্দোলনে শিক্ষক নেটওয়ার্কের পক্ষে সক্রিয় ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, যিনি বিভিন্ন নাগরিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “সংস্কারের মধ্য দিয়েই নির্বাচনে যেতে হবে। বাংলাদেশে ২০০৮ এর পরে আর কার্যত কোনও নির্বাচন হয়নি। ২০১৪ থেকে হাসিনার সরকার ছিলেন মেয়াদোত্তীর্ণ সরকার বা অনির্বাচিত সরকার। সুতরাং, নির্বাচন ব্যবস্থায় যে ধস নেমেছিল, সেটি মেরামত বা সংস্কার করতে হবে।

“সেটা সংস্কার করে যথাযথভাবে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের কাঠামো তৈরি করা সরকারের দায়িত্ব। সেটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেই বিষয়ে সরকারের উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার।”

দীর্ঘ মেয়াদী সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে অনেকগুলো ভিত্তি তৈরি করতে হবে বলে মনে করছেন অর্থনীতির এই অধ্যাপক।

তিনি বলেন, “বিভিন্ন কমিশন হয়েছে, তার মধ্য দিয়ে তৈরি হবে। সেই প্রক্রিয়াটা চলতে পারে। কিন্তু নির্বাচনের ব্যাপারে একটি প্রস্তুতি বা পথনকশা বা উদ্যোগ গ্রহণ করা, কবে নাগাদ নির্বাচন হবে, কী কী পদ্ধতিতে তারা অগ্রসর হবে, সেটার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজন।

“যথাযথভাবে এই ঘোষণা না এলে, এটি যদি দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে একটি অনাস্থা বা অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেটা থেকে বাঁচার জন্য একটা সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ বা পথনকশা ঘোষণা করা উচিত বলে আম মনে করি।”

‘জোর-জবরদস্তি করে সমস্যার সমাধান হবে না’

নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ যেসব দাবি-দাওয়া জানাচ্ছে সেগুলো খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করার আহ্বান জানান আনু মুহাম্মদ।

তিনি বলেন, “বহু বছরে মানুষের মধ্যে বঞ্চনা আছে, মানুষের মধ্যে অনেক রকমের ক্ষোভ আছে, অনেক রকম সমস্যা আছে। সেগুলো সরকারের গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত। জোর-জবরদস্তি কিংবা ধরপাকড় কিংবা কেউ আন্দোলন করলে তাকে ট্যাগ লাগানো এই প্রবণতা, যেটা অতীতের সরকারের সময়ে ছিল, এটা যেন অব্যাহত না থাকে।

“যেমন অটোরিকশা বলেন কিংবা অন্যান্য পেশাজীবী বলেন, তাদের জোর-জবরদস্তি করে তো সমস্যার সমাধান হবে না। এটা তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করতে হবে, সমাধানের পথে যেতে হবে।

আনু মুহাম্মদ বলেন, “জনগণের প্রতি শ্রদ্ধা ও তাদের মর্যাদা দিয়ে সরকারের ভূমিকা পালন করলে আমি মনে করি, অনেক সমস্যার সমাধান এমনিতেই হবে। সমাজের মধ্যে সহিংসতা কিংবা জোর-জবরদস্তির প্রবণতা থেকে আমরা রক্ষা পাব।”

সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “সংবিধানে স্বৈরশাসন বা ক্ষমতা ও সম্পদের কেন্দ্রিকতার জন্য যে ধারাগুলো যোগ করা হয়েছে, সেগুলো বাতিল করা আমাদের প্রধান দাবি। আরেকটা হচ্ছে, বাংলাদেশে যে বিভিন্ন জাতি, ধর্ম,লিঙ্গের মানুষজন আছে তাদের সবাইকে এক করার ধারা যুক্ত করতে হবে। সংবিধানে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা একটা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব হিসেবে থাকবে এবং জনগণের সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত হবে।”

নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ভূমিকা দেখা যায়নি বলে মনে করেন অর্থনীতির এই অধ্যাপক।

তিনি বলেন, “দ্রব্যমূল্য আসলে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নেই। তেল, ডিম, পেঁয়াজের মতো পণ্যের ক্ষেত্রে দেখা যায়, মাত্র কয়েকটা কোম্পানি এগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। অনেক সময় কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়। এই জায়গাটায় সরকারের যথাযথ ভূমিকা দেখা যায়নি।”

আনু মুহাম্মদ বলেন, “ব্যাংক লুট, অর্থ পাচার বা শেয়ার কারসাজির বিষয়ে বিগত সরকারের সময়ে হওয়া দুটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে। সেখানে অপরাধী হিসেবে সুনির্দিষ্টভাবে যাদের শনাক্ত করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানও ছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কীভাবে বিলিয়ন ডলার পাচার হয়ে গেল, সে বিষয়ে বর্তমান গভর্নরের পরিষ্কার বক্তব্য দাবি করছি।”

সংবাদ সম্মেলনে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহা মির্জা তাদের ১৩ দফা প্রস্তাব পড়ে শোনান।

আনু মুহাম্মদ সেগুলোর অগ্রগতি পর্যালোচনা করে বলেন, “শহীদ, নিখোঁজ ও আহতদের পূর্ণ তালিকা এখনও কেন প্রকাশিত হয়নি, তা আমাদের বোধগম্য নয়। শহীদ ও আহতদের পরিবারের দায়িত্ব এখনও গ্রহণ করা হয়নি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরু হয়েছে। কিন্তু মামলাগুলো সুনির্দিষ্ট না হওয়ার ফলে এটা সম্পর্কে আমাদের সংশয় আছে যে কতটা হবে। ১৫ বছরে হওয়া মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা এখনও প্রত্যাহার হয়নি।”

তিনি বলেন, “সংবিধান সংস্কার কমিশন অচিরেই একটা রূপরেখা জাতির সামনে উপস্থিত করবে। তার ভিত্তিতে জনমত যাচাই করে একটা চূড়ান্ত রূপরেখা আমরা দেখতে পাব। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে আরও অনেক কাজ করার বাকি আছে। ইতোমধ্যে বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠেছে। এগুলো সরকারের গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত।”

‘নতুন একটা চাঁদাবাজ দল আবার আবির্ভূত হচ্ছে’

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অনেক বিষয়ে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হয়নি বলে মনে করেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। অনেক জায়গায় নতুন করে চাঁদাবাজি শুরু হয়েছে বলে অভিযোগও করেন তিনি।

আনু মুহাম্মদ বলেন, “সাইবার নিরাপত্তা আইন এখনও পুরোপুরি বাতিল হয়নি, শ্রমিক পরিষেবা বিল এখনও আছে। পুলিশ বাহিনী পুনর্গঠনের রূপরেখা নিয়ে কিছু কাজ হলেও যথাযথ ব্যবস্থা হয়নি। র‌্যাব বিলুপ্ত করা কিংবা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর জবাবদিহির বিষয়ে কোনও অগ্রগতি দেখা যায়নি। জনগণের ওপর নজরদারির বিষয়ে এখন পর্যন্ত স্বচ্ছতা আসেনি।

“অনেক জায়গায় নতুন করে চাঁদাবাজি শুরু হচ্ছে। নতুন একটা চাঁদাবাজ দল আবার আবির্ভূত হচ্ছে। এ ব্যাপারে আমরা সরকারের সক্রিয় ভূমিকা দাবি করছি।”

শ্রমিক আন্দোলন নিয়ে আনু মুহাম্মদ বলেন, “ন্যূনতম জাতীয় মজুরি এখনও ঘোষণা করা হয়নি, যা অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে সম্ভব ছিল। এ বিষয়ে তাদের উদ্যোগ আশা করি। শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি পরিশোধে সরকারের আরও সক্রিয় উদ্যোগ দরকার।

“ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য শিল্প পুলিশ বাতিল করার প্রস্তুতি বা প্রক্রিয়াটা শুরু করা উচিত। চা শ্রমিকদের মজুরি এখনও শেখ হাসিনার নির্ধারিত মানবেতর মজুরিই আছে। তাদের ভূমির অধিকার ও বাসস্থানের বিষয়েও আমরা পরিষ্কারভাবে জানি না।”

কৃষি বিষয়ক কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “কৃষি সংস্কারের জন্য একটা বড় ধরনের উদ্যোগ দরকার। রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল খোলার ব্যাপারে নীরবতা দেখা যাচ্ছে। পাট মন্ত্রণালয়ে নতুন যে উপদেষ্টা এসেছেন, তিনি বা তার ব্যবসায়িক গ্রুপের সঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ বা বেসরকারিকরণের সুবিধাভোগীদের যোগাযোগ আছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে।

“পাটকলের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে পরিষ্কার বক্তব্য ও অবস্থান আশা করছি। অকৃষি খাতে কৃষি জমির ব্যবহার, হাটবাজারে ইজারাদারদের জুলুম এখনও বন্ধ হয়নি। এ ব্যাপারে সরকারের অবস্থান ও নীতিমালা আরও পরিষ্কার করা দরকার।”

‘তাদের জ্বালানি অপরাধী হিসেবে বিচারের আওতায় আনতে হবে’

রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল চুক্তি নবায়ন না করার প্রতিশ্রুতি সুনির্দিষ্টভাবে বাস্তবায়ন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন আনু মুহাম্মদ। এসময় তিনি রামপাল-রূপপুরসহ ‘দেশবিরোধী প্রাণবিনাশী’ প্রকল্প বাতিলের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান সরকারকে।

আদানির সঙ্গে হওয়া বিদ্যুৎচুক্তিকে জাতীয় স্বার্থবিরোধী দাবি করে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, “এটা অবিলম্বে বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত। ফুলবাড়ি চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে। জাপানের জাইকার সঙ্গে যে মহাপরিকল্পনাটা আছে, সেটা বাংলাদেশের জন্য ভয়াবহ বিপজ্জনক। এটা বিদেশি ঋণনির্ভর, আমদানিনির্ভর ও প্রাণবিনাশী।

“আমাদের দাবি, অন্তর্বর্তী সরকার এ বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান নেবে। বাপেক্সের মাধ্যমে জরুরিভিত্তিতে গ্যাস অনুসন্ধানের ব্যবস্থা করতে হবে। অবিলম্বে জাতীয় সক্ষমতার ভিত্তিতে প্রাকৃতিক গ্যাস ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির সংমিশ্রণে আমাদের জ্বালানি মহাপরিকল্পনা করতে হবে। শেখ হাসিনার সময়ে যারা দেশের জন্য সর্বনাশা চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন, তাদের জ্বালানি অপরাধী হিসেবে বিচারের আওতায় আনতে হবে।”

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহতদের সুচিকিৎসার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা আশা করি, এই সরকার স্বাস্থ্য খাতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিতে পারত। কিন্তু আমরা কোনও উদ্যোগই দেখিনি। আহতদের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও যথেষ্ট অদক্ষতা বা ব্যর্থতার স্বাক্ষর দেখা গেছে।

“ওষুধের দাম বাড়ছে। এই সরকারের পক্ষে সম্ভব ছিল পাবলিক বা সর্বজনের হাসপাতালের মান বৃদ্ধির জন্য সরকারের সঙ্গে সম্পর্কিত সব ব্যক্তি, মন্ত্রী, উপদেষ্টা, সংসদ সদস্যসহ সরকারি কর্মতাদের সবার পাবলিক হাসপাতালে চিকিৎসা বাধ্যতামূলক করা। এই ঘোষণাটা দিয়ে এই সরকার একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।”

ঢাকা শহর ও দেশের বিভিন্ন স্থান, মাঠ ও পার্কগুলো দখল হয়ে আছে উল্লেখ করে আনু মুহাম্মদ বলেন, “এগুলো উন্মুক্ত করাটা এই সরকারের পক্ষে খুবই সম্ভব ছিল। পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করতে হলে বিকল্প নিয়ে আসতে হবে। সংবিধানের রূপরেখায় পাহাড় ও সমতলের সব জাতিগোষ্ঠীর সাংবিধানিক স্বীকৃতি নিশ্চিত করতে হবে।

“সারা দেশে স্বৈরশাসনের পতন হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন হয়নি, যা দুঃখজনক ও উদ্বেগজনক। পার্বত্য চট্টগ্রামে কীভাবে গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে এবং সেখানে হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে আমরা সরকারের সক্রিয় উদ্যোগ দাবি করি। পাশাপাশি বিভিন্ন জাতি ও পণ্য পরিবহনে বিধিনিষেধ প্রত্যাহার দাবি করছি।”

এসময় তিনি বলেন, সব প্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়নবিরোধী নীতিমালা কার্যকর করার দাবি জানান। লিঙ্গ বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সরকারের স্পষ্ট বক্তব্যও চান তিনি।

প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য বিমানবন্দরে বিশেষ লাউঞ্জ উদ্বোধন করার প্রশংসা করে আনু মুহাম্মদ বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা বিমানবন্দরে প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য বিশেষ লাউঞ্জ উদ্বোধন করেছেন। এটা ভালো উদ্যোগ। কিন্তু এর পাশাপাশি প্রবাসে গিয়ে শ্রমিকরা যে বিভিন্ন জালিয়াতি ও অত্যাচারের মধ্যে পড়ছেন, অকাল মৃত্যু হচ্ছে, এসব বিষয়ে দূতাবাসগুলো যাতে আরও সক্রিয় উদ্যোগ নেয়, তার জন্য পররাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আরও সক্রিয় উদ্যোগ দাবি করছি।”

এসময় জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক পানি কনভেনশনে অন্তর্বর্তী সরকারকে অনুস্বাক্ষর করার পরামর্শও দেন আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, এই কনভেনশন অনুযায়ী সরকার নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করতে পারে।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এসময় জনগণের সম্মতি ছাড়া কোনও ধরনের রাষ্ট্রীয় বা জনগণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ চুক্তি না করার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, “ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যেসব চুক্তি আছে, বিশেষ করে সরকার পতনের কয়েকদিন আগে ট্রানজিটের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার করা বিশেষ কিছু চুক্তি এখনও প্রকাশিত হয়নি। এগুলো প্রকাশ করা দরকার। চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া, জাপান- এই দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কটা স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এই চুক্তিগুলো জনগণের কাছে প্রকাশ করতে হবে।

“জনগণের সম্মতি ছাড়া কোনও ধরনের রাষ্ট্রীয় বা জনগণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ চুক্তি করা যাবে না। ভারত সরকারের যে ভূমিকা এখন দেখা যাচ্ছে, নানা রকম অপপ্রচার ও চাপ সৃষ্টির বিষয়ে সমাধানের প্রধান পথ হচ্ছে সবকিছু জনগণের কাছে প্রকাশ করা।”

সংবাদ সম্মেলনে আনু মুহাম্মদ জানান, গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির ব্যানারে ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ শিরোনামে আগামী শনিবার বিকাল ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বাংলাদেশের সব শ্রেণিগত, ধর্মীয়, লিঙ্গীয়, জাতিগত, পেশাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের সমাবেশ কর্মসূচি পালন করা হবে।

গত ২ আগস্ট ছাত্র জনতার ‘দ্রোহযাত্রা’ কর্মসূচি থেকে সরকারের পদত্যাগ দাবি করেছিলেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। সেই সমাবেশের পর এক দফার দিকে গতিমুখ পায় এই আন্দোলন। সরকার পতনের আগের দিন ৪ আগস্ট সংবাদ সম্মেলন করে অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখাও ঘোষণা করে শিক্ষক নেটওয়ার্ক।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ ও আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন ও সদস্য অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা রিতু বক্তব্য দেন। কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সীমা দত্ত, চলচ্চিত্র নির্মাতা আকরাম খান, গুম থেকে ফিরে আসা মাইকেল চাকমা উপস্থিত ছিলেন।

অধ‍্যাপক আনু মুহাম্মদ ২০০৫-২০২১ পর্যন্ত বাংলাদেশের তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন। তিনি ২০০৬ সালে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে উন্মুক্ত কয়লা খনি বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।

সেসময় এশিয়া এনার্জিকে বাংলাদেশ থেকে বহিঃস্কার ও উন্মুখ খনি নিষিদ্ধসহ বিভিন্ন দফা সম্বলিত একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় সরকার ও জনগণের মধ্যে যেটি ফুলবাড়ী সমঝোতা চুক্তি নামে পরিচিত। অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ সেই ফুলবাড়ী সমঝোতা চুক্তিতে জনগণের পক্ষে স্বাক্ষর করেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত