দিল্লির ইন্দ্রপ্রস্থ অ্যাপোলো হাসপাতালের এক জ্যেষ্ঠ কনসালটেন্ট ও কিডনি প্রতিস্থাপন সার্জনকে গ্রেপ্তার করেছে দিল্লি পুলিশ। বিজয়া কুমারী নামের এই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ভারত ও বাংলাদেশে সক্রিয় অবৈধ কিডনি প্রতিস্থাপন চক্রের সঙ্গে জড়িত তিনি।
পুলিশের বরাতে ভারতের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, এই চক্র থেকে প্রতিটি কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য ২-৩ লাখ রুপি করে নিতেন ৫০ বছর বয়সী ডা. বিজয়া। এছাড়া অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য বাংলাদেশি রোগীদের প্রলোভনও দেখাতেন তিনি।
গত সপ্তাহে এই চিকিৎসককে গ্রেপ্তারের আগে জুনে দিল্লির জাসোলা এলাকা থেকে তিন বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হলেন কুষ্টিয়া জেলার রাসেল (২৯), ঢাকার মোহাম্মদ সুমন মিঞা (২৮) ও মোহাম্মদ রোকন (২৬)। এছাড়া বিক্রম নামে ডা. বিজয়ার একজন সহকারীকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, অবৈধ কিডনি প্রতিস্থাপন চক্রের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে ইন্দ্রপ্রস্থ অ্যাপোলো হাসপাতাল থেকে ডা. বিজয়াকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
২০২১-২০২৩ সাল পর্যন্ত উত্তর প্রদেশ রাজ্যের নয়ডা শহরের ইয়াথার্থ হাসপাতালে ১৫-১৬টির মতো কিডনি প্রতিস্থাপন করেন ডা. বিজয়া। আর এই চক্রের সঙ্গে ভারতীয় চিকিৎসক হিসেবে একাই কাজ করতেন তিনি।
অভিযোগ আছে, দিল্লির গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালগুলোতে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য বাংলাদেশি রোগীদের প্রলোভন দেখাতেন ডা. বিজয়া, দালাল ও তাদের সহযোগীরা।
দিল্লিতে বাংলাদেশ হাই কমিশনের নামে জাল নথিও বানাত এই চক্র। সেসব নথিতে কিডনি দাতা এবং গ্রহীতার (উভয়ই বাংলাদেশি) মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে-এমনটা উল্লেখ থাকত।
ভারতের আইনে বলা আছে, অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য দাতা ও গ্রহীতার মধ্যে সম্পর্ক থাকা অত্যাবশ্যক।
দিল্লির জাসোলা এলাকা থেকে গত মাসে তিন বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তারের সময় বাংলাদেশ হাই কমিশনের নামে বানানো জাল নথি জব্দ করা হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় ১৫ বছর আগে জুনিয়র চিকিৎসক হিসেবে ইন্দ্রপ্রস্থ অ্যাপোলো হাসপাতালে যোগ দেন ডা. বিজয়া। হাসপাতালের পে রোলে ছিলেন না তিনি। ফি-ফর-সার্ভিসের ভিত্তিতে অর্থাৎ সেবা দেওয়ার ভিত্তিতে তাকে পারিশ্রমিক দেওয়া হতো।
নয়ডার ইয়াথার্থ হাসপাতালের অতিরিক্ত মেডিকেল সুপারিনটেনডেন্ট সুনীল বলিয়ান বলেন, “ভিজিটিং কনসালটেন্ট হিসেবে আমাদের হাসপাতালে কাজ করতেন ডা. বিজয়া। এখানে তিনি অঙ্গ প্রতিস্থাপন করতেন।
“তবে অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা রোগীদের তিনিই এখানে আনতেন। ইয়াথার্থ হাসপাতালের কোনও রোগীকে তাকে অস্ত্রোপচারের জন্য দেওয়া হয়নি। শেষ তিন মাসে এই হাসপাতালে তিনি একটি অস্ত্রোপচার করেন।”
ডা. বিজয়াকে বরখাস্তের বিষয়ে ইন্দ্রপ্রস্থ অ্যাপোলো হাসপাতালের মুখপাত্র বলেন, “কিডনি প্রতিস্থাপন চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ডা. বিজয়া কুমারীকে হাসপাতাল থেকে বরখাস্ত করা হয়।
“এর আগে তদন্তের অংশ হিসেবে ডা. বিজয়া সম্পর্কে তথ্য জানতে আমাদের কাছে গোয়েন্দা সংস্থা এসেছিল। হাসপাতালের পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতা করা হয়েছে।”
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছে, বাংলাদেশের রাসেল, সুমন মিঞা, মোহাম্মদ রোকন ও ইফতি এবং ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রতিশ পাল বাংলাদেশ ও ত্রিপুরা থেকে সম্ভাব্য কিডনি দাতাদের প্রলুব্ধ করে দিল্লি আনতেন। এই দাতারা ৪-৫ লাখ রুপিতে তাদের কিডনি বেচতেন। আর গ্রহীতাদের থেকে ২৫-৩০ লাখ রুপি নেওয়া হতো।
এই চার বাংলাদেশির মধ্যে ইফতি ছাড়া বাকি সবাই এখন পুলিশের হেফাজতে।
ওই সূত্রটি বলেছে, “রাজস্থানে কিডনি প্রতিস্থাপনের একটি চক্র ধরা পড়ার পর আমাদের কাছে তথ্য আসতে শুরু করে। প্রায় তিন মাস আগে এনিয়ে কাজ শুরু করে পুলিশ।
“অভিযুক্তদের প্রত্যেকেই এই অপরাধে নতুন। প্রতিটি প্রতিস্থাপনের জন্য চিকিৎসককে ২-৩ লাখ রুপি দিত তারা। দিল্লির জাসোলা এলাকায় একটি ফ্ল্যাট ভাড়া করেন রাসেল। সেখানে দাতারা থাকতেন। ওই ফ্ল্যাটে গ্রহীতাদের সঙ্গে দাতাদের দেখাও হতো।”
একাধিক সূত্রের মাধ্যমে জানা গেছে, আল শিফা নামের একটি মেডিকেল ট্যুরিজম কোম্পানির মাধ্যমে দাতা-গ্রহীতারা ভারতে থাকা, চিকিৎসা, শারীরিক পরীক্ষা সমন্বয় করতেন।
জাসোলার ওই ফ্ল্যাট থেকে বাংলাদেশিদের গ্রেপ্তারের সময় একটি কক্ষ থেকে নয়টি পাসপোর্ট, দুটি ডায়েরি ও একটি নামের তালিকা জব্দ করা হয়।
এসব পাসপোর্ট কিডনি দাতা ও গ্রহীতাদের। আর ডায়েরি দুটিতে দাতা ও গ্রহীতাদের মধ্যে অর্থ লেনদেনের বিস্তারিত রয়েছে।