চলচ্চিত্রের আকাশে এমন কিছু তারকা আছেন যারা মাত্র একটি সিনেমা দিয়েই আজও আছেন আলোচনায়। আর এক সিনেমা দিয়েই ইতি ঘটেছে এইসব তারকাদের বড় পর্দার বিচরণ। এরপর আর কোন সিনেমায় তাদের আর অভিনয় করতে দেখা যায়নি যে!
ক্যারি হেন
জেমস ক্যামেরুনের ‘এলিয়েন’ (১৯৮৬) সিনেমায় নিউট চরিত্রে অভিনয় করে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন ক্যারি হেন। কিন্তু তার পরিবার লন্ডন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেলে সিনেমায় আর মন দেওয়া হয়নি হেনের।
বড় হয়ে শিক্ষকতা পেশা বেছে নেওয়া ক্যারি হেন চিরকাল থেকে গেলেন ওই এক সিনেমার তারকা।
ক্যামেরুনের এই ব্লকবাস্টার মুভির ৩০ বছর উদযাপন অনুষ্ঠানে ক্যারি হেন গণমাধ্যমকে বলেন, শুটিং সেটে তার তিনি নাকি সাবলীলই ছিলেন।
তবে অভিনয় শিল্পীর পরিচয় কেন ঝেড়ে ফেললেন সে এক রহস্য বটে।
জানা যায়, অভিনয়ে না ফিরলেও অ্যানিমেটেড মুভি ‘থান্ডার আইল্যান্ড’ এ ভয়েস রোল প্লে করেছিলেন এক সময়ের সম্ভাবনাময় এই তারকা।
তামি স্ট্রোনাচ
তামি স্ট্রোনাচের কাহিনী শুনলে আপনি নিশ্চিত অবাক হবেন। ‘দ্য নেভার এনডিং স্টোরি’ সিনেমায় অভিনয় করে খ্যাতি যখন তুঙ্গে, স্ট্রোনাচের বয়স তখন মাত্র ১২ বছর। এমন অবাঞ্ছিত মনোযোগ এড়াতেই কিনা তামির বাবা-মা তাকে সিনেমা থেকে দূরে রাখবার সিদ্ধান্তটি নিয়ে ফেলেন। কারণ এতে তাদের কন্যার স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হতে পারতো।
পারিবারিক সিদ্ধান্তেই তাই সিনেমাকে টাটা গুডবাই! এই যুগে ফেইসবুকের কল্যানে রাতারাতি তারকা বনে যাচ্ছে বহু শিশু। তাদের বাবা-মার সুখী চেহারাটি একটু ভাবুন। মেলাতে কষ্ট হচ্ছে তাইতো?
তবে স্ট্রোনাচ বর্তমানে একজন পেশাদার নৃত্যশিল্পী এবং মঞ্চাভিনেত্রী।
ইমানুয়েল স্কোট
ছিলেন পেশাদার সৈনিক। এরপর নাম লেখালেন অভিনয়ে। ১৯৯৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ফরাসি সিনেমা ‘লু ম্যানিটি’ (‘L’humanite’)-তে অভিনয়ের জন্য কান চলচ্চিত্র উৎসবে জিতে নেন সেরা অভিনেতার পুরস্কার। বলছি ইমানুয়েল স্কোট এর কথা।
বাংলায় লুম্যানিটি অর্থ দাঁড়ায় মানবতা। এটি ছিল ইমানুয়েলের প্রথম এবং শেষ ছবি।
কানে আনকোরা ইমানুয়েলের পুরস্কার জেতা সমালোচকদের রীতিমতো বিস্মিত করে।
অবশ্য ২০১৮ সালে ইমানুয়েল ফ্রেঞ্চ টিভি সিরিজ ‘কয়েনকয়েন অ্যান্ড দ্য এক্সট্রা হিউম্যান’ দিয়ে ছোট পর্দায় ফিরে আসেন।
ডেনিস উইলসন
রক ব্যান্ড ‘দ্য বিচ বয়েজ’ এর অন্যতম সদস্য ডেনিস উইলসনকে ‘টু লেন ব্ল্যাকটপ’ সিনেমায় মেকানিকের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায়। এটি ছিল তার এক এবং একমাত্র অভিনীত সিনেমা।
১৯৭১ সালে মুক্তি পাওয়া এই আমেরিকান সিনেমা প্রচলিত অর্থে ব্যবসায় সফল হতে পারেনি। তবে চমৎকার নির্মাণশৈলীর কারণে এই সিনেমার পরিচালক মন্টে হেলম্যান সমালোচকদের ব্যাপক প্রশংসা কুড়ান।
ডরোথি ম্যাকগোয়ান
সুপার মডেল ডরোথি ম্যাকগোয়ান অভিনয় করেন ফরাসি ফিল্ম ‘হু আর ইউ, পলি ম্যাগগু’ তে। ১৯৬৬ সালে মুক্তি পাওয়া এই সিনেমায় ম্যাকগোয়ান ‘পলি ম্যাগু’ এর চরিত্রে অভিনয় করেন। আর তারপরই ঘটে রহস্যময় এক ঘটনা। কোন এক অজানা কারণে ডরোথি ম্যাকগোয়ান চলে যান লোকচক্ষুর অন্তরালে।
২০১৩ সালে আমেরিকান ফ্যাশন ম্যাগাজিন হারপার্স বাজারে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ম্যাকগোয়ান জানান, ‘হু আর ইউ, পলি ম্যাগু’ সিনেমার পরিচালক উইলিয়াম ক্লেইনের সঙ্গে তার ছিল চমৎকার বোঝাপড়া। তার সঙ্গে কাজ করতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন এই সুপার মডেল। যদিও এরপর তিনি বিনোদন জগত থেকেই স্বেচ্ছায় বিদায় নেন।
কী ছিল এই স্বেচ্ছা নির্বাসনের কারণ?
জানা যায়, সংসারী হতেই শোবিজকে বিদায় জানান এই তারকা। তাই ‘হু আর ইউ, পলি ম্যাগগু’ হয়ে রইলো তার একমাত্র সিনেমা।
অ্যাম্বার স্কট
কোথায় হারিয়ে গেলেন অ্যাম্বার স্কট?
১৯৯১ সালে শিশু শিল্পী হিসেবে কাজ করেছিলেন স্টিভেন স্পিলবার্গের ‘হুক’ সিনেমায়। কিন্তু এরপর আর কোন সিনেমায় তাকে আর দেখা যায়নি।
ব্লকবাস্টার হিট ‘হুক’ এ কাজ করা এই অভিনেত্রী পরে ভয়েসওভার দিয়েছিলেন টিভি ডকুমেন্টারি সিরিজ ‘আমেরিকান এক্সপেরিয়েন্সে’। পর্দার সামনে আর কাজ না করলেও ‘ক্যাননবল’ এর প্রডিউসার ছিলেন অ্যামবার স্কট। ক্যাননবল ২০১৯ সালে নির্মিত শর্টফিল্ম।
মারিয়া ক্যালাস
বিশ্ববিখ্যাত অপেরা সংগীত শিল্পী মারিয়া ক্যালাস অভিনয়ও করেছিলেন। তার একমাত্র অভিনীত সিনেমার নাম ‘মেডিয়া’। মুক্তি পেয়েছিল ১৯৬৯ সালে। সিনেমাটি ব্যবসায়িক সফলতা না পেলেও সমালোচকদের কাছে ইতিবাচক সাড়া পায়। আশ্চর্যের বিষয় হলো, সিনেমায় ক্যালাস গান করেননি।
এই সিনেমার পর মারিয়া ক্যালাসকে আর অভিনয় করতে দেখা যায়নি।
সারা পিকারিং
কিন্তু সারা পিকারিং এর খোঁজ কেউ জানেনা! চার্লস ডিকেন্সের উপন্যাস ‘লিটল ডরিট’ অবলম্বনে একই নামে নির্মিত সিনেমায় সারা পিকারিং নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন। ১৯৮৭ সালে মুক্তি পাওয়া এই সিনেমা মোট ৮টি আন্তর্জাতিক মঞ্চে নমিনেশন পেয়ে ৩টি জিতে নেয়।
জিতে নেওয়া এই পুরস্কারগুলোর মধ্যে আছে বাফটার মতো নাম।
‘লিটল লরিট’ এ অভিনয়ের পর বিনোদন জগত থেকে একেবারে গায়েব হয়ে যান পিকারিং। তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
যদিও ওয়ার্ল্ডসভিলেজ ডট ব্লগস্পট ডট কম (woldsvillage.blogspot.com) এর একজন মন্তব্যকারী দাবি করেছেন যে পিকারিং এখন ৫০ বছর বয়সের কাছাকাছি এবং বেশ আনন্দের সঙ্গেই লিসেস্টারশায়ারে থিয়েটার এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন।