দীর্ঘ ২৯ বছরের সংসারের ইতি টেনেছেন সঙ্গীত শিল্পী এ আর রহমান ও তার স্ত্রী সায়রা বানু।
মঙ্গলবার সকালে ভারতীয় গণমাধ্যমে এ খবর আসার পর অনেকটাই বিস্মিত হয়েছেন অস্কারজয়ী এই গায়কের ভক্তরা।
‘ভালোবাসার ঘাটতি না থাকলেও’ স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে মানসিক দ্বন্দ্ব ও দূরত্ব বাড়ায় সম্পর্ক আর এগোনো সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন দুইজনই। সেই প্রেক্ষাপটেই এই জুটির ডিভোর্স হলো বলে দুইজনের পক্ষ থেকেই নিশ্চিত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার আইনজীবী বন্দনা শাহের মাধ্যমে এক অফিসিয়াল বিবৃতি দিয়ে এ আর রহমানের সঙ্গে আলাদা হওয়ার বিষয়টি প্রথমে জানান তার স্ত্রী সায়রা বানু।
সেই বিবৃতিতে বলা হয়, “বিয়ের অনেক বছর পর, মিসেস সায়রা তার স্বামী জনাব এ আর রহমানের কাছ থেকে আলাদা হওয়ার কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাদের সম্পর্কের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মানসিক চাপের পরে এই সিদ্ধান্ত এসেছে। একে অপরের প্রতি গভীর ভালোবাসা থাকা সত্ত্বেও, দম্পতি খুঁজে পেয়েছেন যে উত্তেজনা এবং অসুবিধাগুলো তাদের মধ্যে একটি অপ্রতিরোধ্য ব্যবধান তৈরি করেছে, যা এই সময়ে কোনও পক্ষই সেই ঘাটতি পূরণ করতে সক্ষম বলে মনে করে না।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “মিসেস সায়রা জোর দিয়ে বলেছেন, ব্যথা এবং যন্ত্রণা থেকে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে তিনি তার জীবনের এই কঠিন অধ্যায়টি পার করার সময় সবার কাছ থেকে গোপনীয়তা এবং তাদের ব্যাপারটি বোঝার অনুরোধ করেছেন।”
এর পরপরই নিজের বিচ্ছেদের খবর নিয়ে শিল্পী এর আর রহমান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে এক পোস্ট দেন।
এ আর রহমান X (পূর্বের টুইটার)-এ লেখেন, “আমরা গ্র্যান্ড ত্রিশে পৌঁছানোর কথা ভেবেছিলাম, কিন্তু মনে হয় সব কিছুরই একটা অজানা সমাপ্তি আছে। এমনকি ভগ্ন হৃদয়ের ভারে ঈশ্বরের সিংহাসনও কেঁপে উঠতে পারে। আমরা ছিন্নভিন্ন হয়েও অর্থ খুঁজি, যদিও এই টুকরোগুলি আর আগের মতো হবে না। আমাদের বন্ধুদের বলি, যখন আমরা এই হৃদয়বিদারক অধ্যায়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, তখন আপনারা উদারতার সঙ্গে আমাদের গোপনীয়তাকে সম্মান করেছেন বলে আপনাদের ধন্যবাদ।”
“We had hoped to reach the grand thirty, but all things, it seems, carry an unseen end. Even the throne of God might tremble at the weight of broken hearts. Yet, in this shattering, we seek meaning, though the pieces may not find their place again. To our friends, thank you for…
— A.R.Rahman (@arrahman) November 19, 2024
এই দম্পতি ১৯৯৫ সালের মার্চে চেন্নাইতে গাঁটছড়া বাঁধেন। তাদের রয়েছে তিন সন্তান- খাতিজা, রাহিমা এবং আমীন।
যেভাবে পরিচয় হয় এ আর রহমান-সায়রা বানুর
একটি পুরানো সাক্ষাৎকারে, এ আর রহমান সায়রা বানুর সঙ্গে তার প্রথম দেখা এবং পরিচয়ের স্মৃতিচারণ করেছিলেন। তার মা এবং বোন প্রথম চেন্নাইতে সুফি সাধক মতি বাবার মাজারে সায়রাকে দেখতে পেয়েছিলেন। “আমার মা সায়রা বা তার পরিবারকে চিনতেন না, কিন্তু যেহেতু তারা মাজার থেকে মাত্র পাঁচটি বাড়ি দূরে থাকত, তাই তারা হেঁটে তার সাথে কথা বলে। সবকিছু খুব স্বাভাবিকভাবেই ঘটেছে”, বলেছিলেন এ আর রহমান।
সায়রার সঙ্গে তার প্রথম সাক্ষাতের কথা স্মরণ করে রহমান বলেন, “তিনি ছিলেন সুন্দরী এবং ভদ্র। আমরা ১৯৯৫ সালের ৬ জানুয়ারি একে অপরের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ করি। সেটি আমার ২৮ তম জন্মদিনও ছিল। এটি একটি সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎ ছিল। পরে, আমরা বেশিরভাগই ফোনে যোগাযোগ করেছি। সায়রা কুচি (স্থানীয় ভাষা) এবং ইংরেজিতে কথা বলে। আমি তাকে ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করলাম সে আমাকে বিয়ে করতে চায় কিনা। তখন, সে খুব চুপ ছিল, কিন্তু এখন সে তা ছাড়া (স্ত্রী) অন্য কিছু।”
ভারতের অন্যতম বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পীর সঙ্গে বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও, সায়রা এবং এ আর রহমান মূলত ব্যক্তিগত ব্যক্তিগত জীবন বজায় রেখেছিলেন। এই দম্পতি খুব কমই তাদের পরিবার সম্পর্কে বিশদ প্রকাশ করেন, তাদের কাজে স্পটলাইট রাখতে পছন্দ করতেন। তারা সবসময়ই বড় জমায়েত এবং বলিউড পার্টিতে উপস্থিত থেকেছেন। অনন্ত আম্বানির বিয়েতেও এ দম্পতি হাতে হাত রেখে অনুষ্ঠানে প্রবেশ করেন।
আইনজীবী বন্দনা শাহের কথা
এদিকে সায়রা বানু যে আইনজীবীর মারফতে নিজের বিয়ে বিচ্ছেদের ঘোষণা দিলেন, সেই বন্দনা শাহ বলিউডের একজন সেলিব্রিটি আইনজীবী। সাম্প্রতিক একটি পডকাস্টে, বন্দনা শাহ সেলিব্রিটিদের বিয়ে ভেঙে যাওয়ার কারণগুলো নিয়ে আলোচনা করেন।
তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, এই ধরনের বিয়েতে, বিশেষ করে বলিউডে, অবিশ্বাস নয় বরং একঘেঁয়েমি থেকে প্রায়ই বিচ্ছেদের দিকে নিয়ে যায়।
তবে কি এ আর রহমান ও সায়রা সম্পর্ক ভেঙে গেল একঘেঁয়েমি থেকে?