Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
প্যারিস অলিম্পিকে অংশগ্রহণ

রিকার্ভ মিশ্র দলের সম্ভাবনা দেখেন ফ্রেডরিখ

বাংলাদেশের আর্চারি নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন মার্টিন ফ্রেডরিখের। ছবি:  ওয়ার্ল্ড আর্চারি
বাংলাদেশের আর্চারি নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন মার্টিন ফ্রেডরিখের। ছবি: ওয়ার্ল্ড আর্চারি
Picture of বদিউজ্জামান মিলন

বদিউজ্জামান মিলন

ছয় বছর আগে জাতীয় আর্চারি দলের কোচ হয়ে এসেছিলেন বাংলাদেশে। তার হাত ধরেই বাংলাদেশের আর্চারিতে এসেছে বাঁক বদল। একাধিক পদক জিতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জায়গা করে নিয়েছেন বাংলাদেশের আর্চাররা। তার অধীনেই এসএ গেমসে এসেছে ‘দশে দশ’। আর্চারিতে বাংলাদেশের সম্ভাবনা, বাস্তবতা ও অলিম্পিক স্বপ্নসহ অন্যান্য প্রসঙ্গ নিয়ে জার্মান কোচ মার্টিন ফ্রেডরিখ কথা বলেছেন সকাল সন্ধ্যার জেষ্ঠ্য প্রতিবেদক বদিউজ্জামান মিলনের সঙ্গে। 

প্রশ্ন: কেমন কেটেছে এবারে বড় দিনের ছুটি?

মার্টিন ফ্রেডরিখ:  কিছুদিন আগে জার্মানি গিয়েছিলাম বড়দিনের ছুটি কাটাতে। বেশ আনন্দেই কেটেছে দিনগুলি। অনেক দিন পর পরিবারের সবার সঙ্গে দেখা হলো।

প্রশ্ন: তাও কত দিন পর দেখা হয়েছে?

ফ্রেডরিখ : গত বছর ‍জুলাই মাসে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ হয়েছিল জার্মানির বার্লিন শহরে। তখন আমি জার্মানিতে গিয়েছিলাম দল নিয়ে। কিন্তু কাজের চাপে পরিবারের কারো সঙ্গে দেখা করতে পারিনি। এবার সবার সঙ্গে বড় দিনের আনন্দ উদযাপন করতে পেরে বেশ ভালো লেগেছে।

দিয়া সিদ্দিকীর সঙ্গে আনন্দ ভাগ করছেন কোচ। ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন: এবার বলুন আর্চারদের অনুশীলন কেমন চলছে?

ফ্রেডরিখ : ফেডারেশন একটি ক্যালেন্ডার দিয়েছে জাতীয় দলের প্রস্তুতির জন্য। সামনে এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপের মতো বড় বড় টুর্নামেন্ট। জুনে তুরস্কে অলিম্পিকের ফাইনাল বাছাই। এসব নিয়ে দীর্ঘমেয়াদে পরিকল্পনা আছে। এগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। আপাতত ক্যাম্প বন্ধ। জাতীয় নির্বাচনের পর ক্যাম্প শুরু হবে। এখন আর্চাররা যার যার সংস্থায় অনুশীলন করছে। নির্বাচনের পর আবারও ক্যাম্প শুরু করবো।

প্রশ্ন: আপনার ক্যাম্পে যেসব আর্চার আছে তাদের মধ্যে সম্ভাবনা কেমন দেখেন?

ফ্রেডরিখ: দেখুন পুরো ডিসেম্বর জুড়েই ট্রেনিংয়ে বিরতি। বর্তমানে নতুন ২৩ আর্চার নিয়ে কাজ করছি। এদের আরও সময় দিতে হবে ভালো প্রস্তুতির জন্য। অবশ্যই এই দলে অনেক সম্ভাবনাময় আর্চার আছে। এশিয়ান গেমসে আমরা পদক মঞ্চের কাছাকাছি চলে গিয়েছিলাম। ওদের মধ্যে সম্ভাবনা ছিল বলেই কিন্ত হয়েছে এটা। এই আর্চারদের সঠিক নির্দেশনা দিলে অলিম্পিকে কোটা প্লেস পাওয়া যাবে।

প্রশ্ন : প্রায় ছয় বছর বাংলাদেশ দল নিয়ে কাজ করছেন। এত দিনে কেমন উন্নতি দেখছেন আর্চারিতে?

ফ্রেডরিখ: আপনি যদি কিছুটা পেছনে ফিরে তাকান তাহলে দেখবেন অনেক উন্নতি হয়েছে। অনেক প্রতিযোগিতায় পদক জিতেছি। এশিয়া কাপে, বিশ্বকাপে ভালো অবস্থানে ছিলাম। যদিও এটা ধারাবাহিক সাফল্য না। এটা নিয়ে আরও কাজ করতে হবে। এশিয়া কাপে আমরা মেডেল পেয়েছি। কিন্তু এটাও ভাবতে হবে এশিয়ায় অনেক কঠিন প্রতিপক্ষ ছিল। সেখান থেকে ব্রোঞ্জ পদক আনাও মন্দ না। তাছাড়া গত বছর জাতীয় প্রতিযোগিতায় স্কোরে নতুন নতুন রেকর্ড গড়েছে। ওরা সঠিক পথেই আছে।

প্রশ্ন:  বর্তমানে আর্চারির পাইপলাইনের কি অবস্থা?

ফ্রেডরিখ: এটা একটা দুশ্চিন্তার বিষয়। বিশেষ করে রিকার্ভ মেয়েদের ইভেন্টে সেভাবে আর্চার উঠে আসছে না। গত বছর অনেক সমস্যা ছিল। অনেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত ছিল। এজন্য খেলেনি। আবার অনেকে সেনাবাহিনীর আর্চার। এদের আন্তর্জাতিক মিশনে (জাতিসংঘ মিশন) যেতে হয়েছে। কেউ চোটে আক্রান্ত। যদিও পাইপলাইনে খেলোয়াড় বাড়ানোর জন্য ফেডারেশন নিয়মিত কাজ করে চলেছে।

প্রশ্ন : এবার আসি রোমান সানা প্রসঙ্গে। র‌্যাঙ্কিং রাউন্ডে ভালো না করায় সর্বশেষ এশিয়ান গেমসের আর্চারিতে রিকার্ভ এককের দলে সুযোগ পাননি তিনি।  বিওএকে দেওয়া প্যারিস অলিম্পিকের ওয়াইল্ড কার্ডের তালিকাতেও নেই রোমান।

ফ্রেডরিখ: আপনি জানেন রোমান সানার জন্য বাজে একটা সময় কেটেছে গত বছর। তাকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। সে অল্প কিছু আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পেরেছে। খেলায় ফিরেই আগের ফর্মে ফেরত যাওয়াটা খুব সহজ কাজ ছিল না। অবশ্যই সে চ্যাম্পিয়ন আর্চার। যে কোনো সময় ফিরে আসবে। তার ভেতরে এখনও সাফল্য পাওয়ার ক্ষুধা আছে। এশিয়ান গেমসে সে ছিল গুরুত্বপর্ণ খেলোয়াড়। ওর অভিজ্ঞতা অন্যদের কাজে লেগেছে। এখনও অলিম্পিকে সুযোগ পাওয়ার দরজাটা উন্মুক্ত আছে রোমানের সামনে। এজন্য ওকে অবশ্যই ভালো প্রস্তুতি নিতে হবে।

প্রশ্ন: রোমানের বাজে ফর্ম। অলিম্পিকে সরাসরি সুযোগ পাওয়াটা নিশ্চয় কঠিন হবে বাংলাদেশের জন্য ?

ফ্রেডরিখ: এটা সত্যি যে এখনও রোমান অনেক সম্ভাবনাময় আর্চার। সে ফুরিয়ে যাইনি। আবার অন্যরাও ভালো ট্রেনিং নিচ্ছে। রোমান যখন দলে ঢোকে তখন দলের শক্তি অনেক বেড়ে যায়। অতীতে যেটা আমরা দেখেছি। পুরো শক্তির দল পাওয়া রোমানের জন্যও ভালো। আমরা আশাবাদী।

প্রশ্ন: টোকিও অলিম্পিকে দিয়া ও রোমান জুটি গড়ে চূড়ান্ত পর্বে খেলেছিল। শুধু আর্চারি না বাংলাদেশের যে কোনো খেলার ক্ষেত্রেই যেটা প্রথম ছিল। প্যারিস অলিম্পিকে কি তেমন কোনো সম্ভাবনা দেখেন?

ফ্রেডরিখ: আপনি জানেন এখনও কোটা প্লেস পাওয়ার সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়নি আমাদের। জুনে শেষ প্রতিযোগিতা হবে এটার জন্য। আমি চাই নিজেদের যোগ্যতায় যেন অলিম্পিকে খেলে বাংলাদেশ। বিওএ চেষ্টা করছে ওয়াইল্ড কার্ডের জন্য। কিন্তু আমি চাই যেন নিজেরাই সেটা করে দেখাতে পারিস এবং সেটা নিজেদের যোগ্যতা দিয়েই। আমরা এখনও নিশ্চিত না যে একজন ছেলে বা একজন মেয়েই পাবে। এখানে পুরো দলও পেতে পারে। রিকার্ভ মিশ্র দলগত ইভেন্টে আমাদের জোরালো সম্ভাবনা আছে সরাসরি খেলার। টোকিওতে শেষ ষোলোতে খেলেছি। সেখানে কোরিয়ার মতো কঠিন প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াই করেছি। আসলে আমাদের মিশ্র দলটা খুবই ভালো। আমরা আরও ভালো করতে পারি। মিশ্র দলটার ওপর ভরসা করা যায়। কিন্তু এখনও সবার জন্যই সুযোগ রয়েছে কোটা প্লেস পাওয়ার। যেটা জুন শেষে জানা যাবে।

হাকিম আহমেদ ও দিয়া সিদ্দিকীর সঙ্গে কোচের খুনসুটি। ছবি: ওয়ার্ল্ড আর্চারি

প্রশ্ন: যখন বাংলাদেশে এসেছিলেন তখন ‘গো ফর গোল্ড’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল আর্চারি ফেডারেশন। সেটার কি অবস্থা?

ফ্রেডরিখ: দেখুন সারা বিশ্বেই আর্চারি অনেক উন্নতি করেছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে প্রতিটি টুর্নামেন্টে। এশিয়ান গেমস শেষে যেটা বুঝলাম উন্নতি হয়েছে আমাদের। কিন্তু ধীরগতিতে। সেখানে আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতা আশা করেছিলাম। আমাদের ‘গো ফর গোল্ড’ পরিকল্পনা এখনও আছে। এটা নিয়ে অবশ্যই কাজ করছি। কিন্তু বিশ্বের অন্য দেশের আর্চাররাও পিছিয়ে নেই। জার্মানির কথায় ধরুন। ওরা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। ওদের সারা দেশে ৫৩ হাজার আর্চার আছে। কিন্তু আমাদের মাত্র ৫শ জন। পার্থক্যটা এখানেই। কিন্তু এশিয়ান অঞ্চলের বিবেচনায় দেখলে আমাদের মিশ্র দল ভালো করছে। এটা নিয়ে আরও কাজ করতে হবে।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের আর্চারদের তো ধারবাহিকতার অভাব। এটাকে কিভাবে দেখেন?

ফ্রেডরিখ: এখন যে অবস্থায় ছেলেমেয়েরা আছে তা একেবারে মন্দ না। তবে আমি আরও ধারাবাহিকতা চাই। কখনো কখনো সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও পদক মঞ্চে উঠতে পারেনা বাংলাদেশে। সেরা জায়গায় যেতে পারেনি ওরা। গত বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিলাম। আর দুটি জয় হলেই পদক মঞ্চে যেতাম। কিন্তু আমাদের সামর্থ্য, ধারাবাহিকতা বিশ্বমানের না। এটা মানতেই হবে। এসব ক্ষেত্রে আরও মনোযোগি হতে হবে। এজন্য কঠোর পরিশ্রমের বিকল্প নেই।

 প্রশ্ন: বাংলাদেশে কাজ কতটা উপভোগ করেন?

ফ্রেডরিখ: উপভোগ করি বলেই এখানে এখনও আছি। আমি বাংলাদেশের আর্চারদের একদিন সবার ওপরে দেখতে চাই। এজন্য সবার আগে দরকার প্রচুর পরিমান কোচ। পাইপলাইনে আর্চারি দরকার। কঠোর পরিশ্রম করা দরকার। আমাদের একটা চমৎকার অর্গানাইজেশন দরকার। ভালো অবকাঠামো দরকার। এখনও অনেক কাজ বাকি। আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে আর্থিক।  প্রতিটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে গেলেও আপনাকে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হবে। সেখানে গিয়ে হয়তো কখনো হারবেন। কখনো লড়াই করবেন। কখনো জিতবেন। আর এসবের মধ্যেই আপনার অভিজ্ঞতাটা ঋদ্ধ হবে। আপনি যদি ফিরে তাকান শুধু কম্পাউন্ড ইভেন্টের দিকে, দেখতে পাবেন গত বছর প্রচুর কম্পিটিশন ছিল। কিন্তু আমরা সেখানে অংশ নিতে পারিনি। আমরা নজর দিয়েছি রিকার্ভ ইভেন্টে। তাহলে কম্পাউন্ডের আর্চাররা এশিয়ান গেমস, সাফ গেমসের মতো পরবর্তী প্রতিযোগিতার জন্য কিভাবে উন্নতি করবে? কম্পাউন্ড খেলোয়াড়দেরও বিশ্বকাপ হয়। আরও অনেক কিছুই তো আছে। নিশ্চয় বুঝতে পারছেন প্রচুর আর্থিক সহায়তা ছাড়া এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব না।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত