ক্রেমলিনের সঙ্গে পিয়ংইয়ংয়ের সামরিক সখ্য বৃদ্ধি নিয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। তাতে ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের একটি সূত্র বিবিসিকে বলেছে, উত্তর কোরিয়ার তিন হাজার সেনা নিয়ে একটি ইউনিট গঠন করছে রাশিয়ার সেনাবাহিনী।
রাশিয়ার সুদূর পূর্বে এমন বিশাল কোনও ইউনিটের উপস্থিতি এখন পর্যন্ত বিবিসির চোখে পড়েনি। তাছাড়া ইউক্রেনের ওই সূত্রের দাবিকে নাকচও করে দিয়েছে ক্রেমলিন।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রেস সচিব দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে উত্তর কোরিয়ার কেউ নেই।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিতে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন সম্পর্কে তিনি বলেন, “কেবল ব্রিটিশ নয়, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারাও এ জাতীয় খবর সবসময় ছড়ায়। কিন্তু তারা কোনও প্রমাণ দিতে পারে না।”
এ বিষয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ক্রেমলিন ও পিয়ংইয়ংয়ের সহযোগিতার মাত্রা বেড়েছে।
গত সপ্তাহেই পুতিনকে জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়ে তাকে ‘সবচেয়ে কাছের কমরেড’ বলেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী কিম ইয়ং হিউন সম্প্রতি বলেছেন, ইউক্রেনে উত্তর কোরিয়ার সেনাদের মোতায়েন করার ভালোই সুযোগ আছে।
একই কথা বলেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও।
প্রশ্ন উঠেছে, রাশিয়া যদি ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে উত্তর কোরিয়ার সেনা ব্যবহার করে, সেক্ষেত্রে তাদের সংখ্যা কত হবে।
উত্তর এশিয়ার অঞ্চল রাশিয়ান ফার ইস্টের এক সামরিক সূত্র বিবিসিকে নিশ্চিত করে বলেছে, উত্তর কোরিয়ার কয়েকজন সেনা সেখানে পৌঁছেছে। তাদের রাশিয়ার ভ্লাদিভসতক শহরের উত্তরে আসুরিস্ক শহরের কাছে একটি সামরিক ঘাঁটিতে মোতায়েন করা হয়েছে।
তবে ঠিক কতজন সেনা সেই ঘাঁটিতে অবস্থান করছে, তা স্পষ্ট করতে রাজি হয়নি ওই সূত্র।
সামরিক বিশ্লেষকরা বিবিসিকে জানিয়েছেন, উত্তর কোরিয়ার সেনাদের রুশরা নিজেদের বাহিনীতে সফলভাবে অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে, এ বিষয়ে সন্দেহ আছে।
এই সামরিক বিশ্লেষকদের একজন থাকেন রাশিয়ায়। এ কারণে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বিবিসিকে বলেছেন, “যুদ্ধের শুরুতে হাজার হাজার রুশ বন্দিকে সেনাবাহিনীতে যুক্ত করা হয়েছিল। কাজটি অত সহজ ছিল না। তারা সবাই রুশভাষী ছিল।”
রাশিয়া যদি সত্যি সত্যি তাদের সেনাবাহিনীতে উত্তর কোরিয়ার তিন হাজার সেনা নিয়োগ দিয়ে থাকে, তাহলে তা নিয়ে চিন্তার কিছু দেখছেন না বিশ্লেষকরা। কারণ লড়াইয়ের ময়দানে এটি এমন কোনও বড় সংখ্যা নয়।
তবে বিশ্লেষকরা না দেখলেও এরই মধ্যে এটি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলতে দ্বিধা করেননি, “এই ঘটনা রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার সম্পর্ককে আরও মজবুত করবে। যুদ্ধক্ষেত্রে হেরে যাচ্ছে দেখে মরিয়া হয়ে রাশিয়া এই কাজ করছে।”
এ বছরের জুনে কিম জং উনের সঙ্গে ‘শান্তিপূর্ণ ও প্রতিরক্ষামূলক’ চুক্তি করেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। উত্তর কোরিয়া যে রাশিয়ার কাছে অস্ত্র, গোলাবারুদ সরবরাহ করছে, তার প্রমাণ পশ্চিমারা জোগাড় করেছে।
ইউক্রেনের সন্দেহ, মঙ্গোলিয়া সীমান্তের কাছে রাশিয়ার উলান-উদা অঞ্চলে উত্তর কোরিয়ার সেনাদের একটি ইউনিট যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ইউক্রেনের পত্রিকা ডিফেন্স এক্সপ্রেসের সম্পাদক ভালেরি রায়াবিখ বলেন, “উত্তর কোরিয়ার সেনারা রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্ত পাহারা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে রুশ সেনাদের সেখান থেকে সরিয়ে অন্য জায়গায় মোতায়েন করা হতে পারে।
“তবে উত্তর কোরিয়ার সেনাদের এখনই ইউক্রেনে সম্মুখ সমরে ঠেলে দেওয়া হবে, সে সম্ভাবনা আমি একেবারেই দেখছি না।”