Beta
শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫

ফিলিস্তিনের বিপক্ষে কেন ভোট দিল আর্জেন্টিনা

আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেই।
আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেই।
[publishpress_authors_box]

ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যের স্বীকৃতি দিতে একটি প্রস্তাবের ওপর বিশ্বসংস্থাটির সাধারণ পরিষদে শুক্রবার ভোটাভুটি হয়। প্রস্তাবে ফিলিস্তিনকে পূর্ণ সদস্যপদ দেওয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নিরাপত্তা পরিষদকে সুপারিশ করা হয়।

সাধারণ পরিষদের ১৯৩টি সদস্য দেশের মধ্যে এ প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটি হয়। ১৪৩টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে, বিপক্ষে ৯ ও ভোটদান থেকে বিরত ছিল ২৫টি দেশ।

পক্ষে ভোট দেওয়া দেশগুলো হলো- আলজেরিয়া, অ্যান্ডোরা, অ্যাঙ্গোলা, অ্যান্টিগা এবং বারবুডা, আর্মেনিয়া, অস্ট্রেলিয়া, আজারবাইজান, বাহামা, বাহরাইন, বাংলাদেশ, বার্বাডোস, বেলারুশ, বেলজিয়াম, বেলিজ, বেনিন, ভুটান, বলিভিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, বতসোয়ানা, ব্রাজিল, ব্রুনাই, বুরকিনা ফাসো, বুরুন্ডি, কাবো ভার্দে, কম্বোডিয়া, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, শাদ, চিলি, চীন, কলম্বিয়া, কমোরস, কোস্টারিকা, কিউবা, সাইপ্রাস, গণতান্ত্রিক গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়া (উত্তর কোরিয়া), গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, ডেনমার্ক, জিবুতি, ডোমিনিকা, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র, পূর্ব তিমুর, মিশর, এল সালভাদর, নিরক্ষীয় গিনি, ইরিত্রিয়া, এস্তোনিয়া, ইথিওপিয়া, ফ্রান্স, গ্যাবন, গাম্বিয়া, ঘানা, গ্রিস, গ্রেনাডা, গুয়াতেমালা, গিনি, গিনি-বিসাউ, গায়ানা, হাইতি, হন্ডুরাস, আইসল্যান্ড, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইরাক, আয়ারল্যান্ড, আইভরি কোস্ট, জ্যামাইকা, জাপান, জর্ডান, কাজাখস্তান, কেনিয়া, কুয়েত, কিরগিজস্তান, লাওস, লেবানন, লেসোথো, লিবিয়া, লিখশটস্টাইন, লুক্সেমবুর্গ, মাদাগাস্কার, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মালি, মাল্টা, মৌরিতানিয়া, মরিশাস, মেক্সিকো, মঙ্গোলিয়া, মন্টিনিগ্রো, মরক্কো, মোজাম্বিক, মিয়ানমার, নামিবিয়া, নেপাল, নিউজিল্যান্ড, নিকারাগুয়া, নাইজার, নাইজেরিয়া, নরওয়ে, ওমান, পাকিস্তান, পানামা, পেরু, ফিলিপাইন, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, কাতার, কোরিয়া প্রজাতন্ত্র (দক্ষিণ কোরিয়া), রাশিয়া, রুয়ান্ডা, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস, সেন্ট লুসিয়া, সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড দ্য গ্রেনাডাইনস, সান মারিনো, সৌদি আরব, সেনেগাল, সার্বিয়া, সেশেলস, সিয়েরা লিওন, সিঙ্গাপুর, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া, সোমালিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, স্পেন, শ্রীলঙ্কা, সুদান, সুরিনাম, সিরিয়া, তাজিকিস্তান, থাইল্যান্ড, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, তিউনিসিয়া, তুর্কমেনিস্তান, তুরস্ক, উগান্ডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, তানজানিয়া ইউনাইটেড রিপাবলিক, উরুগুয়ে, উজবেকিস্তান, ভিয়েতনাম, ইয়েমেন, জাম্বিয়া ও জিম্বাবুয়ে।

বিপক্ষে ভোট দিয়েছে- আর্জেন্টিনা, চেক প্রজাতন্ত্র, হাঙ্গেরি, ইসরায়েল, মাইক্রোনেশিয়া, নাউরু, পালাউ, পাপুয়া নিউ গিনি ও যুক্তরাষ্ট্র।

আর ভোটদানে বিরত ছিল- আলবেনিয়া, অস্ট্রিয়া, বুলগেরিয়া, কানাডা, ক্রোয়েশিয়া, ফিজি, ফিনল্যান্ড, জর্জিয়া, জার্মানি, ইতালি, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, মালাউই, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ, মোনাকো, নেদারল্যান্ডস, উত্তর মেসিডোনিয়া, প্যারাগুয়ে, মলদোভা প্রজাতন্ত্র, রোমানিয়া, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, ইউক্রেন, যুক্তরাজ্য ও ভানুয়াতু।

ফিলিস্তিনের বিপক্ষে যে দেশগুলো ভোট দিয়েছে, সেগুলোর অবস্থান বহুদিন ধরেই একই রকম। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল আর্জেন্টিনা।

দেশটির এই পদক্ষেপ ফিলিস্তিন প্রশ্নে আর্জেন্টিনার ঐতিহাসিক অবস্থানকে নাড়িয়ে দিয়েছে। বলা হচ্ছে, দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেইর অধীনে আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রনীতি এখন অনেকটাই পশ্চিমঘেঁষা।

তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, আর্জেন্টিনার মিত্র পশ্চিমাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া প্রায় সবাই ফিলিস্তিনের পক্ষেই ভোট দিয়েছে।

আর্জেন্টিনা যে ফিলিস্তিনের বিপক্ষে ভোট দেবে তা আগেই বোঝা গিয়েছিল। কারণ গাজায় ইসরায়েলের হামলাকে লাতিন আমেরিকার দেশ কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো ও ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা যখন গণহত্যা বলছিলেন, তখন মিলেই ইসরায়েলি টুপি পরে দেশটির প্রতি সংহতি জানান।

২০২৩ সালে আর্জেন্টিনার রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে প্রায় হঠাৎ করেই ক্ষমতায় আসেন ৫৪ বছর বয়সী অর্থনীতিবিদ হাভিয়ের মিলেই। নিজে ডানপন্থী মতাদর্শে বিশ্বাসী হওয়ায় ক্ষমতায় বসেই আরেক ডানপন্থী নেতা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে দেখা করতে যান তিনি।

তখনই মিলেই ইসরায়েলে অবস্থিত নিজেদের দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেন।

অথচ আর্জেন্টিনার সঙ্গে ফিলিস্তিনের আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্কের শুরু সেই ১৯৮২ সাল থেকে। দেশটিতে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের একটি দল কয়েক দশক ধরে বাস করছে। ১৯৯৯ সালের ১৫ নভেম্বর বুয়েন্স এইরেসে ফিলিস্তিনের দূতাবাসও খোলা হয়। এছাড়া ২০১০ সালের ৬ ডিসেম্বর আর্জেন্টিনার তৎকালীন সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে ‘স্বাধীন রাষ্ট্র’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল।

জাতিসংঘে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মানসুর।

জাতিসংঘে ফিলিস্তিনকে ‘পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র’ হিসাবে মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল ২০১২ সালে। নতুন প্রস্তাবটি অনুমোদনের ফলে, ফিলিস্তিন জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্মেলনগুলোতে নিজস্ব প্রস্তাব জমা দিতে ও সম্পূর্ণভাবে অংশগ্রহণ করতে পারবে।

সাধারণ পরিষদ ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ দেওয়ার পক্ষে প্রস্তাবটি গ্রহণ করেছে। একই সঙ্গে নিরাপত্তা পরিষদকে ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদের আবেদন পুনর্বিবেচনা করার জন্য সুপারিশও করা হয়েছে।

তবে যুক্তরাষ্ট্র এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বলেছে, প্রস্তাবটি নিরাপত্তা পরিষদে আসলে তারা ভেটো দিয়ে একে আটকে করবে।

শুক্রবার ভোটাভুটির আগে জাতিসংঘে নিযুক্ত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মানসুর বলেন, “আমি এই মঞ্চে অসংখ্যবার দাঁড়িয়েছি। কিন্তু আজকের ভোটের মতো গুরুত্বপূর্ণ ভোটের জন্য কখনোই নয়। এটি একটি ঐতিহাসিক ভোট। সেই দিন আসবে যখন ফিলিস্তিন স্বাধীন দেশগুলোর মধ্যে তার যথাযথ স্থান পাবে।”

সাধারণ পরিষদে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফিলিস্তিন প্রশ্নে আনীত প্রস্তাবের নিন্দা জানিয়েছে ইসরায়েল।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত