সারাক্ষণ ডাগ আউটে বসে সতীর্থদের খেলা দেখলেন লিওনেল মেসি। এক ম্যাচ নিষিদ্ধ আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনিকে দেখা গেল কাচঘেরা একটা কক্ষে। চিলির বিপক্ষে আর্জেন্টিনার সর্বশেষ ম্যাচে চোটের কথা জানিয়েছিলেন মেসি। ‘শতভাগ’ ফিট না থাকার পরও সে ম্যাচে খেলার কারণ ব্যাখ্যা করেন ইন্টার মায়ামি তারকা। কিন্তু পরীক্ষা-নিরীক্ষার করার পর মেসিকে এক ম্যাচ বিশ্রাম দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন আর্জেন্টিনার কোচিং স্টাফ। ডান পায়ের ঊরুতে চোট পেয়েছিলেন মেসি।
মায়ামির হার্ডরক স্টেডিয়ামে রবিবার মেসিকে ছাড়াই কোপা আমেরিকার গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে জয় পেয়েছে আর্জেন্টিনা। লাওতারো মার্তিনেজের জোড়া গোলে পেরুকে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই কোয়ার্টার ফাইনালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। ৩ ম্যাচে টানা ৩ জয়ে ৯ পয়েন্ট নিয়ে শেষ ষোলোতে আর্জেন্টিনা। এদিন অন্য ম্যাচে কানাডার সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করেছে চিলি।
আর্জেন্টিনা একাদশে মেসি, অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার, রদ্রিগো দি পলের মতো নিয়মিত মুখ নেই। আগেই কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলায় এদিন সেরাদের বিশ্রামে রাখেন কোচ লিওনেল স্কালোনি। আগের ম্যাচের একাদশের ৯ জনকেই এদিনি বেঞ্চে বিশ্রামে রাখেন কোচ। মেসির সঙ্গে মার্কাস অ্যাকুনিয়া ছিটকে গিয়েছিলেন চোটে। তিনিও ছিলেন বিশ্রামে।
কিন্তু তারপরও আর্জেন্টিনাকে আটকে রাখে কার সাধ্য? আরও স্পষ্ট করে বললে লাওতারো মার্তিনেজের কাছেই যেন হেরেছে পেরু।
প্রথম ম্যাচে কানাডার বিপক্ষে বদলি নেমে করেন গোল। এরপর চিলির বিপক্ষেও বদলি নেমে পেলেন একমাত্র গোল। এরপর রবিবার পেরুর বিপক্ষে অদম্য মার্তিনেজ। টানা ৩ ম্যাচে গোল করে রেকর্ড গড়েছেন ইন্টার মিলান স্ট্রাইকার।
২০০১ সালের পর থেকে কোপা আমেরিকায় গ্রুপ পর্বের ৩ ম্যাচেই গোল করার রেকর্ড আগে ছিল না কোনও ফুটবলারের। ২৩ বছর পর সেই কীর্তি গড়লেন আর্জেন্টাইন তারকা। ৪ গোল করে আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতাও তিনি। এদিন আর্জেন্টিনার গোলের ব্যবধান আরেকটু বাড়তে পারতো। যদিও ৭২ মিনিটে পেনাল্টি মিস করে বসেন বার্থডে বয় লিয়ান্দ্রো পারেদেস।
পারেদেসও পেনাল্টি মিস করে নাম লিখিয়েছেন ইতিহাসে। গত ২৫ বছরে আর্জেন্টিনার জার্সিতে কোপা আমেরিকায় প্রথম পেনাল্টি (শ্যুটআউট ছাড়া) মিস করলেন তিনি। এর আগে সর্বশেষ এমন মিস করেছিলেন রবার্তো আয়ালা। ১৯৯৯ সালে ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যাচে মিস করেন তিনি।
আগের দুই ম্যাচে বদলি নামা আনহেল দি মারিয়া এবং মার্তিনেজকে একাদশে রেখে এদিন দল সাজিয়েছিলেন স্কালোনি। শুরুটা আর্জেন্টিনা করে ধীরগতিতে। খুব একটা আক্রমণাত্মক খেলেনি। যদিও ১০ মিনিটে ৩টি কর্নার আদায় করে আক্রমণের আভাস দিয়েছিল তারা।
টানা কর্নার থেকে আর্জেন্টিনার গোল আসেনি। ম্যাচের ২৬ মিনিটে প্রথম বলার মতো আক্রমণ ছিল আর্জেন্টিনার। পারেদেসের বক্সের বাইরে থেকে নেয়া শট অবিশ্বাস্য সেভে ফিরিয়ে দেন পেদ্রো গালাসি।
এরপর বারবার চেষ্টা করেও পেরুর রক্ষণ ভাঙতে পারছিল না ডি মারিয়া, মার্তিনেজরা। দুরপাল্লার শটও ফেরান পেরুর গোলরক্ষক। আর ম্যাচের ৪৪ মিনিটে জিওভানি লো সেলসোর আগুনে গোলা শট ডান পায়ে ঠেকান গালাসি।
বিরতির পর আক্রমণের ধার আরও বাড়ে আর্জেন্টিনার। ৪৭ মিনিটে দি মারিয়ার ডিফেন্স চেরা থ্রো বল ধরে মার্তিনেজের অসাধারণ ফিনিশিং। গোলরক্ষক গালাসির মাথার ওপর দিয়ে আস্তে করে বল তুলে দিলেন জালে (১-০)। গোল করেই বেঞ্চে বসা মেসির দিকে ছুটে যান মার্তিনেজ। জড়িয়ে ধরেন অধিনায়ককে।
৫৫ মিনিটে ব্যবধান ২-০ হতে পারতো আর্জেন্টিনার। কিন্তু পেরুর গোলরক্ষক গালাসিকে বক্সের মধ্যে ধাক্কা দেওয়ায় নিকোলাস তাগলিয়াফিকোর গোলটি বাতিল করে দেন রেফারি। তাগলিয়াফিকো যখন পোস্টে শট নেন, গালাসির সামনে থাকা সেলসো তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন।
পেরুও সুযোগ পেয়েছিল গোলের। কিন্তু ৬৭ মিনিটে পেরুর মার্কেস লোপেজের নেওয়া দুর্দান্ত শট ফিস্ট করেন মার্টিনেজ। কর্নার থেকে অবশ্য গোল পঅয়নি পেরু।
ম্যাচে ৭২ মিনিটে আবারও এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ আলবেসিলেস্তেদের সামনে। বক্সের মধ্যে জেসাস কাস্তিলোর হ্যান্ডবল হলে পেনাল্টি পায় আর্জেন্টিনা। কিন্তু পেনাল্টি মিস করেন পারদেস। তার শট সাইড পোস্টে লেগে ফেরে। এরপর ৮৬ মিনিটে মার্তিনেজের দ্বিতীয় গোল। মাঝ মাঠ থেকে বল পেয়ে দারুণ গতিতে বক্সে ঢোকেন। এরপর পেরুর ডিফেন্ডার আলদো কোরজোকে কাটিয়ে বল জড়ান জালে (২-০)।
মায়ামিকে নতুন ঠিকানা বানিয়েছেন মেসি। গত বছর জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) দল ইন্টার মায়ামিতে যোগ দেন আর্জেন্টাইন তারকা।
এরপর থেকেই মায়ামি যেন হয়ে উঠেছে এক টুকরো আর্জেন্টিনা। শুধু মেসি খেলছেন বলেই মায়ামিতে বেড়ে গেছে আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের সমর্থক। ৬৪ হাজার দর্শকের বেশিরভাগেই যেন ‘মেসি-ম্যানিয়া তে ভুগেছেন। অনেকে পরে এসেছিলেন মেসির ১০ নম্বর জার্সি।
এই হার্ডরক স্টেডিয়ামেই ১৪ জুলাই হবে কোপার ফাইনাল। এটা সত্যি, রবিবার মেসিকে মাঠে না দেখে কিছুটা হতাশ মায়ামির আর্জেন্টাইন সমর্থকেরা। তবে ফাইনালে নিশ্চয় মেসির হাতেই তারা দেখতে চাইবেন কোপা আমেরিকার ট্রফি।