বুদ্ধিমত্তা, সৌন্দর্য এবং সাহচর্যের জন্য অনেকের কাছেই তোতাপাখি সবচেয়ে প্রিয় পোষা প্রাণী। সেই তোতাপাখিই যে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে এসে জনজীবনে বিপত্তি ঘটাবে সেটি কেউ কখনো ভেবেছে? সম্প্রতি এমনটিই ঘটল আর্জেন্টিনার একটি শহরের বাসিন্দাদের সঙ্গে।
আর্জেন্টিনার পূর্বাঞ্চলের আটলান্টিক উপকূলীয় শহর হিলারিও আসকাসুবি ছেয়ে গেছে হাজার হাজার সবুজ-হলুদ-লাল রঙের তোতাপাখিতে। পাখিদের মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে শহরটির বাসিন্দারা।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাজার হাজার তোতাপাখি পাহাড় থেকে ঝাঁক বেঁধে উড়ে আসছে শহরে। পাখিগুলো বৈদ্যুতিক তার কামড়ে দিয়ে ছিড়ে ফেলছে। এতে শহরে বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটছে।
এ ছাড়া অনবরত চিৎকার করে বাসিন্দাদের চরম বিরক্ত করে তুলছে। সারা শহরে মলত্যাগ করে সব নোংরা করে ফেলছে। রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ির সামনে সর্বত্র পড়ে আছে পাখির মল।
জীববিজ্ঞানীরা বলছেন, আশেপাশের পাহাড়ি এলাকায় বনভূমি ধ্বংসের কারণে এই পাখিরা প্রায়ই শহরে চলে আসে।
জীববিজ্ঞানী ডায়ানা লেরা বলেন, আশেপাশের পাহাড়ি এলাকার বনভূমি ধ্বংস হওয়ার কারণে পাখিরা খাবার, আশ্রয় ও পানির খোঁজে প্রায়ই শহরগুলোতে হানা দেয়।
আর্জেন্টিনার বনাঞ্চলের বড় একটি অংশ গত কয়েক বছরে ধ্বংস হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।
ডায়ানা লেরা আর্জেন্টিনার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সাউথের একজন জীববিজ্ঞানী।
তিনি বলেন, “পাখিগুলো তাদের খাবার ও বাসস্থানের জন্য পাহাড়ি বনাঞ্চলের ওপর নির্ভরশীল ছিল। বর্তমানে পাহাড়ি এলাকার বনগুলো অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। জরিপে দেখা গেছে, বুয়েনোস আইরেস প্রদেশের দক্ষিণে প্রতি বছর ৪ শতাংশ হারে বন হারিয়ে যাচ্ছে।
“ফলে তোতাপাখিগুলো খাবার ও বাসস্থানের অভাবে ক্রমাগতভাবে শহরগুলোর কাছাকাছি চলে যাচ্ছে, যেখানে তারা খাবার, আশ্রয় এবংপানি খুঁজে পায়।”
লেরার মতে, অবিলম্বে প্রাকৃতিক পরিবেশ পুনরুদ্ধার করা দরকার। তবে সেটা না হওয়া পর্যন্ত মানুষকে রঙিন পাখিগুলোকে সঙ্গে নিয়ে বাঁচার উপায়গুলো নিয়ে ভাবতে হবে।
গত কয়েক বছর ধরে এই তোতাপাখিরা শরৎ ও শীতকালে শহরে আশ্রয় নিচ্ছে। শহরটির বাসিন্দা মাত্র ৫ হাজার। কখনও কখনও শহরের প্রতি একজন বাসিন্দার বিপরীতে ১০টি করে তোতাপাখি থাকে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
গ্রীষ্মকালে প্রজনন মৌসুমে এই পাখিরা দক্ষিণের প্যাটাগোনিয়া পাহাড়ে চলে যায়।
বিভিন্ন মানুষের তোলা ছবিতে শহরের বিদ্যুতের তার ও খুঁটিতে শত শত পাখি বসে থাকার কিংবা সূর্যাস্তের আলোয় বিভিন্ন ভবন ও গীর্জার ওপর দিয়ে পাখির ঝাঁক উড়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখা গেছে।
এসব দৃশ্য আলফ্রেড হিচককের ১৯৬৩ সালের নামকরা থ্রিলার ‘দ্য বার্ডস’ ছবির কথা মনে করিয়ে দেয়।
স্থানীয় রেডিও সাংবাদিক রামন আলভারেজ বলেন, “এই তোতাপাখিরা আমাদের দৈনন্দিন খরচ বাড়িয়ে তুলছে এবং নানা সমস্যা তৈরি করছে।”
তিনি বলেন, তোতাপাখিগুলো বিদ্যুতের তার কামড়ে ছিদ্র করে রাখে। এরপর বৃষ্টির সময় তারে পানি ঢুকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তখন রেডিও সম্প্রচারও বন্ধ হয়ে যায়।
শহরের বাসিন্দারা বলছেন, তারা এই পাখিদের ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দিতে নানা পদ্ধতি কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছেন। যেমন শব্দ কিংবা লেজার লাইট। কিন্তু কোনোটিই কাজে আসেনি।