গণআন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন জানিয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ জামান বলেছেন, এখন একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনা করা হবে।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং তা দমনে শেখ হাসিনা সরকারের কঠোর অবস্থানে অচলাবস্থার মধ্যে সোমবার বিকাল পৌনে ৪টার দিকে ঢাকা সেনানিবাসে সাংবাদিকদের সামনে এসে এই ঘোষণা দেন তিনি।
তার আগেই শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র দিয়ে দেশ ছাড়েন। তিনি ভারতে গেছেন বলে দেশটির সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে।
সেনাপ্রধান ওয়াকার বলেছেন, তিনি রাষ্ট্রপতি মো. শাহাবুদ্দিনের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন এবং দুই এক দিনের মধ্যে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
চলমান সহিংসতার নিহতের ঘটনার বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার করা হবে।
অরাজকতা না করে জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি সমস্ত দািয়ত্ব নিচ্ছি, আমাদের সাহায্য করুন।”
এই বক্তব্য দেওয়ার আগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন জেনারেল ওয়াকার।
এই বৈঠকে বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন, গণসংহতি আন্দোলনের নেতাদের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীর আমিরও ছিলেন বলে জানান তিনি। তবে আওয়ামী লীগের কেউ ছিল না।
সেনাপ্রধান বলেন, “আপনারা জানেন যে দেশে একটা ক্রান্তিকাল চলছে। আমি সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে এখানে আমন্ত্রণ করেছিলাম। ওনারা এখানে এসেছেন, আমরা একটা সুন্দর আলোচনা করেছি। সেখানে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, একটা ইনটেরিম গভর্নমেন্ট আমরা ফর্ম করব এবং ইনটেরিম গভর্নমেন্টের মাধ্যমে এদেশের সমস্ত কার্যকলাপ চলবে।
“আমরা এখন মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে যাব, গিয়ে এই ইনটেরিম গভর্নমেন্ট ফর্মের ব্যাপারে ওনার সাথে আলাপ-আলোচনা করে ইনটেরিম গভর্নমেন্ট ফর্ম করে দেশ পরিচালনা করব।”
সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন গত জুলাই মাসে সহিংসতায় গড়ানোর পর কয়েকদিনেই দেড় শতাধিক মানুষ নিহত হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৯ জুলাই কারফিউ জারি করে সেনা মোতায়েন করে সরকার। কোটা সংস্কারও হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা হত্যার বিচার দাবিতে আন্দোলন জারি রাখে। অসহযোগ কর্মসূচি দেওয়ার পর গত শনিবার শহীদ মিনারের সমাবেশ থেকে সরকারের পদত্যাগ দাবি করা হয়।
সেনাপ্রধান প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, “আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি, সমস্ত হত্যা, সমস্ত অন্যায়ের বিচার আমরা করব। আপনারা সেনাবাহিনীর প্রতি আস্থা রাখেন, সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি আস্থা রাখেন, আমি সমস্ত দায়-দায়িত্ব নিচ্ছি।
“আপনাদের জানমাল এবং আপনাদেরকে আমি কথা দিচ্ছি যে, আপনারা আশাহত হবেন না। আপনাদের যত দাবি আছে সে দাবিগুলো আমরা পূরণ করব এবং দেশে একটা শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে নিয়ে আসব। আপনারা আমার সাথে সহযোগিতা করেন।”
ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ না করার আহ্বান জানিয়ে জেনারেল ওয়াকার বলেন, “দয়া করে আর এই ভাংচুর, হত্যা, মারামারি, সংঘর্ষ এগুলো থেকে বিরত হন। আমি নিশ্চিত যে আপনারা যদি আমার কথামতো চলেন, একসাথে যদি কাজ করি আমরা, নিঃসন্দেহে আমরা একটা সুন্দর পরিণতির দিকে অগ্রসর হতে পারব।
“দয়া করে আমাকে সাহায্য করেন। মারামারি করে এই সংঘাতের মাধ্যমে আমরা আর কিছু অ্যাচিভ করতে পারব না। আর কিছু আমরা পাব না। সুতরাং দয়া করে আপনারা সমস্ত ধ্বংসযজ্ঞ, সমস্ত অরাজকতা, সমস্ত সংঘর্ষ থেকে বিরত হন।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের দেশের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। অর্থ সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে। লোকজন মারা যাচ্ছে। এগুলো থেকে আপনারা বিরত হন।”
প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এনিয়ে আলোচনা করেছেন তিনি।
“আমরা আজকে সুন্দরভাবে কথা বলেছি। সমস্ত দলের, প্রধান প্রধান দলের নেতারা এখানে উপস্থিত ছিলেন। আমি উনাদের ইনভাইট করেছিলাম এখানে। ভেরি নাইস অব দেম যে ওনারা এসেছেন। আমরা একটা সুন্দর আলোচনা করেছি। এই আলোচনাটা ফলপ্রসূ হবে বলে আমি মনে করছি এবং আমরা একটা সুন্দর ইনটেরিম গভর্নমেন্ট ফর্ম করে আমরা দেশ পরিচালনা করব।”
“আপনারা ধৈর্য ধরেন, আমাদের কিছু সময় দেন। ইনশাআল্লাহ আমরা সবাই মিলে সমস্ত সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হব,” বলেন জেনারেল ওয়াকার।