যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা সফর শেষে ১১ দিন পর শুক্রবার দেশে ফিরেছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। সরকারি সফরে গত ১৫ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে রওনা হন সেনাপ্রধান। পরে সেখান থেকে যান কানাডায়।
সেনাপ্রধানের যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা সফর সম্পর্কিত বিস্তারিত বিবরণ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তুলে ধরেছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
তাতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে শান্তিরক্ষা মিশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, যুক্তরাষ্ট্রের সেনাপ্রধানসহ উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা এবং কানাডার উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা ও ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে গত ১৭ অক্টোবর সেনাপ্রধান জাতিসংঘের ডিপার্টমেন্ট অব পিস অপারেশনস বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যঁ পিয়েরে লেখোয়া, ডিপার্টমেন্ট অব অপারেশনাল সাপোর্ট বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল অতুল খের, জাতিসংঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত হাইকমিশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল ইলজে ব্র্যান্ড কেহরিস, মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া ও প্যাসিফিকবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ খালেদ খিয়ারি এবং ডিরেক্টর অব অফিস ফর পিস কিপিং স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ জেনারেল জয় মেননের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হন।
সেনাপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে উপরোক্ত ব্যক্তিরা বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী, বিশেষ করে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেন। এসব বৈঠকে সেনাপ্রধান জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং নীতি নির্ধারণী/ফোর্স কমান্ড পর্যায়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে গুরুত্বারোপ করেন।
পাশাপাশি সেনাবাহিনী প্রধান র্যাবে প্রেষণে নিয়োজিত থাকাকালীন সেনাবাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের শান্তিরক্ষা মিশনে নির্বাচিত না করার বিষয়ে তাদেরকে জানান।
এছাড়া বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতিতে অন্তবর্তীকালীন সরকারের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চলমান কর্মকাণ্ডের ওপর আলোকপাত করেন সেনাপ্রধান। তিনি দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে বাংলাদেশ সরকার ও সেনাবাহিনীর পার্বত্য চট্টগ্রামে আর্থ-সামাজিক ও শান্তি শৃঙ্খলার উন্নয়নে নেওয়া নানামুখী ইতিবাচক দিক তুলে ধরেন।
বিভিন্ন শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী কন্টিনজেন্টগুলোর স্থানীয় জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে হাসপাতাল ও ক্লিনিক পরিচালনার বিষয়ও তাদের জানান সেনাপ্রধান। মিশনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে শান্তিরক্ষাবিষয়ক প্রশিক্ষণ বিনিময়, আভিযানিক সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ মিশন সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হয়।
সেনাবাহিনী প্রধান জাতিসংঘের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিশ্ব শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের জোরালো ভূমিকা ও সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।
যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন পরিদর্শন করে সেনাপ্রধান স্থায়ী প্রতিনিধির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
বিজ্ঞপিতে বলা হয়, গত ২২ অক্টোবর সেনাপ্রধান ওয়াশিংটন ডিসির পেন্টাগনে যুক্তরাষ্ট্রের চিফ অব স্টাফ অব দি আর্মি জেনারেল র্যান্ডি এ জর্জের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও আলোচনায় অংশ নেন। সেসময় তারা দু’দেশের সেনাবাহিনীর স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়, বিশেষ করে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন, প্রশিক্ষণ সহায়তা, দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কোন্নয়ন ও পারস্পরিক আস্থা সৃষ্টি, আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা, দুর্যোগ পরবর্তী মানবিক সহায়তা ও যৌথ প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করেন। যুক্তরাষ্ট্রের সেনাপ্রধানের বৈদেশিক নীতিবিষয়ক উপদেষ্টা সেসময় উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া সেনাবাহিনী প্রধান যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব ডিফেন্স অফিসের ইন্দো-প্যাসিফিক নিরাপত্তাবিষয়ক সহকারী সামরিক সচিব ড. ইলি র্যাটনারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এসময় ইন্দো-প্যাসিফিক দেশগুলো এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মধ্যে সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করা এবং পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়।
সাক্ষাৎকালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী এবং দক্ষিণ এশিয়া সংক্রান্ত জ্যেষ্ঠ পরিচালক লিন্ডসে ডব্লিউ ফোর্ডসহ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের দক্ষিণ এশিয়া সংক্রান্ত উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের সহকারী সচিব ডোনাল্ড লুর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
সাক্ষাৎকালে দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং সরকারের সমর্থনে সেনাবাহিনীর বিবিধ কার্যকলাপ সম্পর্কে ডোনাল্ড লুকে জানান তিনি। ওই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
কানাডা সফর প্রসঙ্গে আইএসপিআরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কানাডা সফরকালে সেনাপ্রধান ভাইস চিফ অব কানাডিয়ান ডিফেন্স স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল স্টিফেন আর কেলসির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
সাক্ষাৎকালে তিনি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী, কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত সামরিক বাহিনীর সদস্যদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়াকরণ সহজতর করার কথা বলেন। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার, বিশেষ করে সামরিক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রশিক্ষণার্থী বিনিময়ের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
এছাড়া কানাডিয়ান পার্লামেন্টের নাগরিকত্ব ও ইমিগ্রেশনবিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য সালমা জাহিদ সেনাপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
সাক্ষাৎকালে তারা দু’দেশের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। বিশেষ করে ছাত্রদের এবং কর্মরত/অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তাদের ভিসা প্রক্রিয়া সহজতর করা, শিক্ষা বিনিময়ের জন্য বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর, কৃষি ও অবকাঠামো উন্নয়নসহ পরিচর্যাকারী পাঠানোর মাধ্যমে স্বাস্থ্যখাতে সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন সেনাপ্রধান।
এছাড়া বাংলাদেশে মনোনীত কানাডার হাইকমিশনার অজিত সিং এবং কানাডায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার নাহিদা সোবহান সেনাপ্রধানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
