Beta
শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৫

নির্বাচন দেড় বছরের মধ্যে, ইঙ্গিত সেনাপ্রধানের

সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সোমবার রাজধানী ঢাকায় তার কার্যালয়ে রয়টার্সকে সাক্ষাতকার দেন। ছবি: রয়টার্স।
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সোমবার রাজধানী ঢাকায় তার কার্যালয়ে রয়টার্সকে সাক্ষাতকার দেন। ছবি: রয়টার্স।
[publishpress_authors_box]

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন প্রকাশ করলেও দেড় বছরের মধ্যে নির্বাচনের ইঙ্গিত মিলল সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের কথায়। সেনাবাহিনী রাজনীতিতে জড়াবে না বলেও আশ্বস্ত করলেন তিনি।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দেড় মাস গড়ানোর পর রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বর্তমান পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর অবস্থান খোলসা করেন জেনারেল ওয়াকার।

তীব্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে চলে যাওয়ার পর সেনাপ্রধান ওয়াকারই প্রথম সাংবাদিকদের সামনে এসে বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন এবং এখন একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হবে।

পরে সেদিন রাতে জেনারেল ওয়াকারসহ তিন বাহিনী প্রধানের উপস্থিতিতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন জানান যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র পেয়েছেন তিনি।

বিশেষ ওই পরিস্থিতিতে সেনাপ্রধান ওয়াকার যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছেন, তাও ভাষণে জানিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি।

তার তিন দিন পরই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়; ফ্রান্স থেকে এসে প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে শপথ নেন নোবেলজয়ী ড. ইউনূস।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দেড় মাস আগে সেনাপ্রধানের দায়িত্বে আসেন জেনারেল ওয়াকার; তবে রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে আলোচনার কেন্দ্রে এখন তিনি।

গত ৫ আগস্ট রাষ্ট্রপতি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন, তখন তার পেছনে ছিলেন তিন বাহিনী প্রধান।

সোমবার ঢাকায় সেনাসদরে নেওয়া তার সাক্ষাৎকারটিতে ‘বিরল’ আখ্যায়িত করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স। মঙ্গলবার এটি প্রকাশ করা হয়েছে।

শেখ হাসিনার শাসনকে ‘ফ্যাসিবাদী’ আখ্যায়িত করে তা থেকে উত্তরণে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ক্ষেত্রে সংস্কারে হাত দিয়েছে ড. ইউনূসের সরকার।

সেই কাজগুলো সম্পন্ন করতে এই সরকারকে সেনাবাহিনী সহায়তা দিয়ে যাবে বলে জানান জেনারেল ওয়াকার।

বর্তমান সরকার সামরিক বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত রাখার একটি রূপরেখা তৈরি করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “যাই ঘটুক না কেন, আমি তার (ড. ইউনূস) পাশে থাকব। যাতে তিনি তার মিশন সম্পন্ন করতে পারেন।”

সংস্কারের জন্য এরই মধ্যে ছয়টি কমিশন গঠন করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। অক্টোবরে কাজ শুরুর পর তিন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার আশা করা হচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে প্রতি সপ্তাহেই বৈঠক করেন জানিয়ে জেনারেল ওয়াকার বলেন, “আমাদের মধ্যে সম্পর্ক খুব ভালো। আমি নিশ্চিত যে আমরা যদি একসঙ্গে কাজ করি, তাহলে ব্যর্থ হওয়ার কোনও কারণ নেই।”

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এই প্রশ্ন আসছে যে তারা কতদিন ক্ষমতায় থাকবে? ড. ইউনূসও এই প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়ার কথা জানিয়ে বলেছিলেন, দেশবাসী যতদিন চাইবে, ততদিনই এই সরকার থাকবে।

২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর সেনা সমর্থনে গঠিত ফখরুদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন সরকার দুই বছর ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন দিয়ে বিদায় নিয়েছিল। ২০০৮ সালের সেই নির্বাচনের মধ্যদিয়ে ক্ষমতায় গিয়ে আওয়ামী লীগ টানা দেড় দশক দেশ শাসন করেছিল।

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে প্রয়োজনীয় সংস্কারের পরই নির্বাচন হবে। তবে কোনও সময়সীমার কথা কেউ বলছে না।

রয়টারসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেনাপ্রধান ওয়াকার বলেন, সংস্কারের পর এক থেকে দেড় বছরের মধ্যেই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণ ঘটা উচিৎ বলে মনে করেন তিনি।

“আপনি যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, তাহলে আমি বলব যে এই সময়সীমার মধ্যেই আমাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করা উচিৎ।”

তবে এসময় তাড়াহুড়ো না করে সবার ধৈর্য ধরার ওপর জোর দেন চলমান পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় আসা সেনাপ্রধান ওয়াকার।

ইউনূস-সেনাপ্রধান
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।

সরকার পতনের পর দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সরকারের প্রচেষ্টায় সেনাবাহিনী সহযোগিতা করছে বলেও জানান তিনি।

গত জুলাইয়ে আন্দোলন চলার মধ্যেই সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। তাদের পতনের পর পুলিশ বাহিনী ভেঙে পড়ার প্রেক্ষাপটে এখনও মাঠে রয়েছে সেনাবাহিনী। অন্তর্বর্তী সরকার তাদের বিচারিক ক্ষমতাও দিয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রস্তাবিত সংস্কার কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সেনাবাহিনীর ভেতরেও অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান সেনাপ্রধান।

এরই মধ্যে কয়েকজনকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সেনাবাহিনীতে কর্মরত কোনও সদস্য দোষী সাব্যস্ত হলে আমি অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।”

কিছু সামরিক কর্মকর্তা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে সরাসরি নিয়ন্ত্রিত সংস্থাগুলোতে কাজ করার সময় নিয়মবহির্ভূত কাজ করে থাকতে পারেন বলেও স্বীকার করেন জেনারেল ওয়াকার।

বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীগুলো বর্তমানে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়। আর এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থাকে প্রধানমন্ত্রীর হাতে। অন্তর্বর্তী সরকার সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে এতে পরিবর্তন আনতে পারে বলে মনে করেন জেনারেল ওয়াকার।

সেনাবাহিনীকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার একটি বাতলে দিয়ে তিনি বলেণ, “সেটা কেবল তখনই সম্ভব হবে, যখন প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে ক্ষমতার কিছুটা ভারসাম্য থাকবে। সেক্ষেত্রে সশস্ত্র বাহিনীকে সরাসরি প্রেসিডেন্টের অধীনে রাখতে হবে।”

শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়লে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে দায়িত্বরত সেনাসদস্যদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আনন্দ প্রকাশ করে সাধারণ মানুষ । ছবি : সকাল সন্ধ্যা
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়লে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে দায়িত্বরত সেনাসদস্যদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আনন্দ প্রকাশ করে সাধারণ মানুষ । ছবি : সকাল সন্ধ্যা

স্বাধীনতার চার বছরের মধ্যে বাংলাদেশ সামরিক শাসনে ঢুকেছিল। এরপর দীর্ঘদিন সেনাশাসন দেখতে হয়েছে দেশের মানুষকে। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারও গঠিত হয়েছিল সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে, যা ওয়ান-ইলেভেন নামে পরিচিত।

সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারের প্রসঙ্গও উঠে আসে।

তবে জেনারেল ওয়াকার বলেন, তার নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনীর রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের কোনও অভিলাষ নেই।

“আমি এমন কিছু করব না, যা আমার প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্ষতিকর হবে। আমি একজন পেশাদার সৈনিক। আমি আমার সেনাবাহিনীকেও পেশাদার রাখতে চাই।”

“সামগ্রিকভাবে সেনাবাহিনীকে কখনোই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা উচিৎ নয়। সৈনিকদেরকেও অবশ্যই রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে হবে,” বলেন তিনি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত