সঙ্গীত জগতে কাজ করছেন এমন অনেকেই এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কাছে কাজ হারাবেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী চার বছরের মধ্যে তাদের আয়ের প্রায় এক চতুর্থাংশ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দখল করে নেবে। সৃজনশীলতার ওপর প্রযুক্তির প্রভাব নিয়ে করা এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।
গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, অডিও-ভিজুয়াল খাতেও কর্মীদের আয় ২০ শতাংশের বেশি কমে যাবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বাজার বছরে ৩ বিলিয়ন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৮ সালের মধ্যে ৬৪ বিলিয়ন হওয়ার এক আগাম ধারণা পাওয়া গেছে।
গেল বুধবার ইন্টারন্যাশনাল কনফেডারেশন অফ সোসাইটি অফ অথরস অ্যান্ড কম্পোজারস (সিআইএসএসি) প্যারিসে এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করে।
গবেষণার প্রতিবেদনের বলা হয়েছে, এআই এর উত্থান জায়ান্ট টেক কোম্পানিগুলোকেই বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করবে। ফলে এখনই যদি নীতিনির্ধারকরা কোন পদক্ষেপ না নেয় তবে কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের আয় আশংকাজনক হারে কমে যাবে।
সিআইএসএসি-এর প্রেসিডেন্ট এবং ‘অ্যাবা’ ব্যান্ডের প্রাক্তন সদস্য বিয়র্ন উলভেউস অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড সরকারের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, এই দুই দেশ এআই-এর প্রভাব থেকে কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের রক্ষা করতে নিয়েছে বিশেষ উদ্যোগ। ক্রিয়েটরদের রক্ষায় সেইফগার্ড পলিসি তৈরিতে তারা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
বিয়র্ন উলভেউস তার এক বিবৃতিতে বলেন, “এআই নিয়ে নীতিমালা, সঙ্গীত শিল্পীদের অধিকার রক্ষায় যেমন সচেষ্ট হতে পারে, তেমনি প্রযুক্তির দায়িত্বশীল ও উদ্ভাবনী বিকাশকে এই নীতিমালা উৎসাহিত করতে পারে। এক্ষেত্রে এআই কিভাবে মানুষের সৃজনশীলতাকে আরও উন্নত করতে পারে সে ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড নজর দিতে পারে।”
অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরার সিনেট সিলেক্ট কমিটি গত সপ্তাহে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এআইয়ের ভবিষ্যত প্রভাব নিয়ে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে ছিল ১৩টি সুপারিশ। তার একটি হলো এআই নিয়ন্ত্রণে পৃথক আইন এবং কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের আরও সুরক্ষা প্রদান।
এদিকে অস্ট্রেলিয়ার মিউজিক রাইটস ম্যানেজমেন্ট সংস্থা এপরা অ্যামকসের প্রধান নির্বাহী ডিন অর্মস্টন বলেছেন, প্রতিবেদনটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এক অসীম সম্ভাবনাকে স্বীকার করে নিয়েছে। তবে সঙ্গীত শিল্পীদের অধিকার এবং আয়ের সুরক্ষা নিশ্চিতে, বিশ্বব্যাপী দ্রুত পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেছে।
তিনি বলেন, “সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে সঙ্গীত শিল্পীরা। সত্যি বলতে, ইন্ডাস্ট্রি দাঁড়িয়ে আছে মানুষের সৃষ্টির ওপর। আমাদের গীতিকার, কম্পোজার এবং মিউজিক ডিস্ট্রিবিউটররা আজ সারা বিশ্বে অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের সংস্কৃতিকে অনন্য করে তুলেছে।”
অর্মস্টন আরও বলেন, “আমাদের অবশ্যই শিল্পীদের কাজের ব্যাপারে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে আদিবাসীদের সাংস্কৃতিক ও সৃজনশীল সত্ত্বের জন্য। যাতে এআই প্ল্যাটফর্মগুলো নিয়ম নীতির প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করে। এই কাজে অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড সরকারকে নেতৃত্ব দিতে হবে এবং ক্রিয়েটরদের জীবিকা এবং আমাদের সৃজনশীল শিল্পের ভবিষ্যৎ রক্ষায় দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে।”
এদিকে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমান রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যে ক্রিয়েটররা দুই দিক থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এটা সব দেশের ক্ষেত্রেই কম বেশি সত্য। কারণ এআই জেনারেটেড বিভিন্ন কন্টেন্টে তাদের কাজগুলোই ঘুরেফিরে ব্যবহৃত হবে, ফলে ক্রিয়েটরদের কপিরাইট সত্ত্ব দুর্বল হয়ে পড়বে এবং আয়ও কমে যাবে।
প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৮ সালের মধ্যে, এআই-জেনারেটেড মিউজিক, মিউজিক স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলোর আয়ের প্রায় ২০ শতাংশ এবং তাদের মিউজিক লাইব্রেরির আয়ের প্রায় ৬০ শতাংশ দখল করে নেবে।
এ ব্যাপারে সিআইএসএসি-এর প্রেসিডেন্ট উলভেউস বলেন, “এআই আর মাধ্যমে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে। কিন্তু এটা যদি ভুলভাবে পরিচালিত হয় তবে সৃজনশীল মানুষদের জন্য এটা ক্ষতির কারণ হতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “তাহলে এই দুইয়ের মাঝে কোনটি বাস্তবায়িত হবে সেটাই এখন প্রশ্ন। এটি নির্ভর করছে নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্তের ওপর। যারা সারা বিশ্বে আইন-কানুন নির্ধারণ ও পর্যালোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।”
উলভেউস বলেন, “যথাযথ নিয়াম-কানুন কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের অধিকার, মানুষের নিরাপদ সৃজনশীলতা ও সংস্কৃতি চর্চা নিশ্চিত করবে”