`অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে শক্তিশালী কণ্ঠস্বর’ হিসাবে এবছরের পেন পিন্টার পুরস্কার জিতেছেন ভারতীয় লেখক অরুন্ধতী রায়।
ব্রিটিশ নাট্যকার হ্যারল্ড পিন্টারের স্মরণে চালু করা এই পুরস্কারটি ‘অসামান্য’ সাহিত্যিক যোগ্যতার ‘অপ্রতিরোধ্য’ লেখকদের দেওয়া হয়ে থাকে।
এই পুরস্কার প্রাপ্তির প্রতিক্রিয়ায় অরুন্ধতী রায় বিবিসিকে বলেছেন, তিনি ভীষণ ‘আনন্দিত’।
১৪ বছর আগে করা এক মন্তব্যের জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইনে অরুন্ধতী রায়ের বিচার শুরু করতে ভারতের উদ্যোগের কয়েক সপ্তাহ পরই এই পুরস্কারে ভূষিত হলেন তিনি।
বুকার পুরস্কারজয়ী অরুন্ধতী রায় ভারতে মানবাধিকার সমস্যাগুলোর পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ এবং পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার একজন লেখক।
পেন পুরস্কারের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান রুথ বোর্থউইক অরুন্ধতী রায়ের ‘বুদ্ধিমত্তা এবং সৌন্দর্যের সঙ্গে অন্যায়-অবিচারের জরুরি গল্প’ বলার দক্ষতার প্রশংসা করেন।
বোর্থউইক বলেন, “তার লেখালেখি ভারতকেন্দ্রিক হলেও তিনি সত্যিকারেই একজন আন্তর্জাতিকতাবাদী চিন্তাবিদ এবং তার শক্তিশালী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করা যাবে না।”
৬২ বছর বয়সী অরুন্ধতী রায় একজন স্পষ্টভাষী লেখকের পাশাপাশি অধিকারকর্মী হিসাবে পরিচিত। কাশ্মীর নিয়ে ২০১০ সালে একটি কড়া প্রতিবাদী মন্তব্য করার জন্য ভারতের বিজেপি সরকার তাকে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করায়।
অরুন্ধতী রায় বাম ঘরানার চিন্তক হওয়ায় প্রায়ই বক্তৃতা এবং লেখার জন্য তিনি উগ্র ডানপন্থীদের লক্ষ্যবস্তু হন।
তিনি ভারতের মুসলমানদের ওপর নিপীড়নের কড়া সমালোচনা করে আসছেন। নরেন্দ্র মোদী সরকারের আমলে ভারতে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব হওয়া নিয়েও সোচ্চার তিনি।
আগামী ১০ অক্টোবর ব্রিটিশ লাইব্রেরির সহ-আয়োজনে এক অনুষ্ঠানে অরুন্ধতীর হাতে পেন পিন্টার পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।
ইংলিশ পেন (PEN) নামের একটি দাতব্য সংস্থা ২০০৯ সাল থেকে এই পুরস্কার দেওয়া শুরু করে। সংস্থাটি সাহিত্যে পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায়ও কাজ করে।
মাইকেল রোজেন, ম্যালোরি ব্ল্যাকম্যান, মার্গারেট অ্যাটউড, সালমান রুশদি, টম স্টপার্ড ও ক্যারল অ্যান ডাফির মতো লেখকরাও এই পুরস্কার পেয়েছেন।
পুরস্কার জয়ের প্রতিক্রিয়ায় অরুন্ধতী রায় বলেন, “বিশ্বসভ্যতা আজ প্রায় যে অবোধগম্য মোড় নিচ্ছে, তা নিয়ে লেখালেখি করার জন্য যদি হ্যারল্ড পিন্টার আজ আমাদের সঙ্গে থাকতেন, তাহলে অনেক ভালো হত।
“কিন্তু যেহেতু তিনি নেই, তাই আমাদের মধ্যে কাউকে না কাউকে তার শূন্যতা পূরণের জন্য আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে।”
অরুন্ধতী রায় অসংখ্য বই এবং প্রবন্ধ লিখেছেন। তবে তিনি তার উপন্যাস দ্য গড অব স্মল থিংসের জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত, যেটি ১৯৯৭ সালে বুকার পুরস্কার জিতেছিল।
তথ্যসূত্র : বিবিসি