ভারতের রাজধানী দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে হেরে গেছেন টানা তিনবারের বিজয়ী আম আদমি পার্টির (আপ) নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল। ক্ষমতাসীন বিজেপির দুবারের সাবেক সংসদ সদস্য পারভেশ ভার্মার কাছে প্রায় ১ হাজার ২০০ ভোটে হেরে যান তিনি।
এর আগে শনিবার সকাল থেকেই দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির এগিয়ে থাকার খবর আসতে থাকে। এই নির্বাচনে ভোট হয় গত বুধবার। শনিবার সকাল থেকে শুরু হয় গণনা।
ভারতের নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত ফলে দেখা যাচ্ছে, দিল্লির বিধানসভার ৭০টি আসনের মধ্যে ৪৯টিতে জয় পেয়েছে বিজেপি।
অন্যদিকে টানা তিনবার দিল্লির ক্ষমতায় থাকা আম আদমি পার্টি ২২টি আসনে জয়ী হয়েছে।
আর ৭০টি আসনের মধ্যে কোনোটিতেই কংগ্রেসকে জেতায়নি দিল্লির জনগণ।
ভারতের এই রাজধানী শহরের বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করতে হলে কমপক্ষে ৩৬টি আসনে জয় পাওয়া লাগে।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত ফল থেকে বোঝা যাচ্ছে, দীর্ঘ ২৭ বছর পর দিল্লি শাসন করতে যাচ্ছে বিজেপি। এর আগে সবশেষ ১৯৯৩ সালে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের দেখা পেয়েছিল বিজেপি। এরপর দীর্ঘসময় তাদের দিল্লির বিধানসভার নিয়ন্ত্রণ পেতে দেখা যায়নি।
ভারতের আইআইটি খড়গপুরে যন্ত্রপ্রকৌশলে পড়াশোনা শেষে ১৯৯৫ সালে ইন্ডিয়ান রেভেনিউ সার্ভিসে সহকারী কমিশনার হিসেবে যোগ দেন কেজরিওয়াল। রাজনীতিতে আসার আগ পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন তিনি।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ডাক দিয়ে ২০১২ সালে আম আদমি পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। এর পরের বছর নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিধানসভার ২৮টি আসনে জয় পায় তারা।
সেবার কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে আম আদমি পার্টি। মুখ্যমন্ত্রী হন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তবে দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রস্তাবিত আইনে পর্যাপ্ত জনমত আদায় করতে না পারায় সরকার গঠনের ৪৯ দিনের মাথায় পদত্যাগ করেন তিনি।
এরপর ২০১৫ সালের নির্বাচনে দিল্লির বিধানসভার ৬৭টি আসনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় বসে আম আদমি পার্টি। ২০২০ সালের নির্বাচনেও তারা জয়ী হয়। সেবার তারা ৬২টি আসনে জিতেছিল।
২০২৩ সালের মার্চে দিল্লির টানা তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে আবগারি নীতি সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার করে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। দেশটির ইতিহাসে তিনিই প্রথম মুখ্যমন্ত্রী যিনি এই পদে থাকার সময় গ্রেপ্তার হন।
এই ঘটনার দেড় মাস পর ভারতের সুপ্রিম কোর্ট তার জামিন আবেদন মঞ্জুর করে।
গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর মুখ্যমন্ত্রীর পদে ইস্তফা দেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। এর কারণ হিসেবে সেসময় তিনি বলেছিলেন, “আমি দেশের রাজনীতি পরিবর্তন করতে এসেছিলাম। দুর্নীতি বা টাকা কামাতে রাজনীতিতে আসিনি।
“আইনজীবীরা বলছেন, আমার বিরুদ্ধে করা মামলার কাজ ১০ বছর পর্যন্ত চলতে পারে। এ কলঙ্ক নিয়ে চলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমার মনে হয়েছে, আমার জনগণের আদালতে যাওয়া দরকার। এ কারণে আমি পদত্যাগ করেছি।”
এবারের বিধানসভা ভোটে কেজরিওয়ালের হেরে যাওয়াকে আম আদমি পার্টির ‘সমাপ্তি’ হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
কেজরিওয়ালের পদত্যাগের পর দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসেন তার দলেরই নেতা ৪৩ বছর বয়সী আতিশি মারলেনা। দিল্লির সর্বকনিষ্ঠ এই মুখ্যমন্ত্রী এবারের বিধানসভা নির্বাচনে আম আদমি পার্টির জয়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন।
ভোটের আগে তিনি বলেন, “আমি অনেক আশাবাদী, দিল্লির মানুষ আম আদমি পার্টিকে সমর্থন দিয়ে জয়ী করবে। টানা চর্তুথবারের মতো ক্ষমতায় বসবে দলটি। এবারও অরবিন্দ কেজরিওয়াল হবেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী।”
আতিশির ভবিষ্যদ্বাণী না মিললেও তিনি নিজের কলকাজি আসনে বিজেপি নেতা ও লোকসভার সাবেক এমপি রমেশ ভাদুড়িকে সাড়ে তিন হাজার ভোটে হারিয়ে জয় পেয়েছেন বলে জানিয়েছে হিন্দুস্তান টাইমস।