Beta
শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৫

জামিনাদেশ স্থগিত, এখনই মুক্তি পাচ্ছেন না কেজরিওয়াল

Kejriwal
[publishpress_authors_box]

ভারতের আম আদমি পার্টির (আপ) নেতা ও দিল্লির মুখ্য়মন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের জামিনাদেশের ওপর অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ দিয়েছে দিল্লি হাইকোর্ট। ফলে এখনই জেল থেকে বের হওয়া হচ্ছে না তার।

বৃহস্পতিবার দিল্লির নিম্ন আদালত কেজরিওয়ালকে জামিন দিয়েছিল। শুক্রবার জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার কথা ছিল তার। এক লাখ টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে শর্তসাপেক্ষে তার জামিন মঞ্জুর করেছিল দিল্লির নিম্ন আদালত।

কিন্তু শুক্রবার ওই আদেশের বিরুদ্ধে দিল্লি হাইকোর্টে আবেদন জানায় সরকারের তদন্তকারী সংস্থা ইডি। সেই আবেদনের শুনানির শুরুতেই হাইকোর্ট সাময়িকভাবে নিম্ন আদালতের ওই রায় কার্যকরের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করেছে।

বিচারপতিরা বলেছেন, হাইকোর্ট বিষয়টি নিয়ে রায় না দেওয়া পর্যন্ত নিম্ন আদালতের এই রায় বাস্তবায়ন করা যাবে না।

আদালত জানিয়েছে, দুই-তিনদিন পরেই বিস্তারিত রায় দেওয়া হবে। সেই রায় ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত জামিনের নির্দেশে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করা হলো।

শুক্রবার কয়েক ঘণ্টা ধরে শুনানি চলে। শুনানি শেষে হাইকোর্ট জানায়, রায় ঘোষণা আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত স্থগিত রাখা হয়েছে।

গত ২২ মার্চ দিল্লি সরকারের মদনীতি সংক্রান্ত একটি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় আম আদমি পার্টির নেতা কেজরিওয়ালকে। নীতিটি মদের বাজারের নিয়ন্ত্রণ বেসরকারি বিক্রেতাদের হাতে ছেড়ে দেওয়া সম্পর্কিত। মদ বিক্রেতাদের লাইসেন্স দেওয়ার ওই (২০২১-২২) নীতিটি পরে বাতিল করা হয়েছিল। তবে তার আগেই অভিযোগ ওঠে, কেজরিওয়ালের সরকার ঘুষের বিনিময়ে অনেককে লাইসেন্স দিয়েছে।

কেজরিওয়ালের সমর্থকদের অভিযোগ ছিল, জাতীয় নির্বাচনে আম আদমি পার্টিকে বিপাকে ফেলতেই তাকে অন্যায়ভাবে আটক করেছে বিজেপি। গত ১৯ এপ্রিল থেকে ১ জুন পর্যন্ত ৭ দফায় (৭দিন) ভারতের অষ্টাদশ জাতীয় (লোকসভা) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

নির্বাচনের মাঝখানে ১০ মে কেজরিওয়ালকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেওয়া হয়েছিল। তবে শর্ত ছিল ১ জুন লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হলে পরের দিনই তাকে কারাগারে ফিরতে হবে।

বৃহস্পতিবার দিল্লির রউস অ্যাভিনিউতে নিম্ন আদালতের রায়ের সময় বিচারপতি ন্যায় বিন্দু বলেছিলেন, ইডি কোনও প্রমাণ হাজির করতে পারেনি যাতে বোঝা যায় যে কেজরিওয়াল এই অপরাধের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত।

সেই সঙ্গেই তিনি আরও মন্তব্য করেন, কেজরিওয়ালের মামলার ক্ষেত্রে ইডি কিছুটা পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে।

সেসময় কেজরিওয়ালের আইনজীবী আদালতে জানান, “দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ ইডির হাতে নেই। কিছু অভিযুক্ত, যারা পরে রাজসাক্ষী হয়েছে, তাদের বয়ানের ভিত্তিতে কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”

কেজরিওয়ালের আইনজীবীর দাবি, “যারা নিজেদের দোষী বলে স্বীকার করে নিয়েছে, তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা কেউ সাধু নয়। তারা অভিযুক্ত।’’

তিনি বলেন, ‘‘দেখে মনে হচ্ছে, তাদের জামিন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, তাদের ক্ষমা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে।”

কেজরিওয়ালের আইনজীবীর আরও দাবি, “দক্ষিণ ভারতের কোনও গোষ্ঠীর কাছ থেকে একশ কোটি টাকা এসেছিল, তারও কোনও প্রমাণ ইডি দিতে পারেনি।”

পরে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এস ভি রাজু হাইকোর্টে ইডির হয়ে শুনানি করেন। তিনি বলেন, “নিম্ন আদালতের রায় পুরো ভুল। আদালত বলেছে, কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে কোনও সরাসরি প্রমাণ নেই- এই বিবৃতিটাও ভুল।”

এস ভি রাজু আরও বলেন, “আমরা নিম্ন আদালতে তথ্যপ্রমাণ দিয়েছিলাম, সেসব গ্রাহ্য করা হয়নি। অপ্রয়োজনীয় তথ্যগুলি খতিয়ে দেখা হয়েছে। নিম্ন আদালতের রায় বিকৃত।”

হাইকোর্ট শুক্রবার সকালে জানিয়েছিল, কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ইডির বক্তব্য শোনা দরকার। যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের যুক্তি শোনা না হচ্ছে, সেই সব যুক্তি খতিয়ে দেখা না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত কেজরিওয়ালের জামিন স্থগিত থাকবে।

একই মামলায় কেজরিওয়ালের আগে আরও দুজন আম আদমি পার্টির নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে দলটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা ও দিল্লির সাবেক উপ-মুখ্যমন্ত্রী মনীষ সিসোদিয়া এক বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে।

দলটির আরেক নেতা সঞ্জয় সিংও একই মামলায় গত বছরের অক্টোবরে গ্রেপ্তার হন। তবে সঞ্জয় সিং বর্তমানে জামিনে রয়েছেন।

অরবিন্দ কেজরিওয়ালই ভারতের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী, যাকে পদে আসীন থাকা অবস্থায় গ্রেপ্তার করা হয়। তার দল এবার কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন বিজেপি বিরোধী ২৭ দলীয় জোটে যোগ দিয়ে নির্বাচন করে।

৫৫ বছর বয়সী কেজরিওয়াল এক দশকেরও বেশি আগে একটি দুর্নীতিবিরোধী প্ল্যাটফর্ম থেকে আম আদমি পার্টি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ক্ষমতাসীন বিজেপি ও প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসকে হটিয়ে দিল্লিতে টানা সাফল্যের পাশাপাশি অল্প সময়ের মধ্যেই জাতীয় পর্যায়েও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে তার দল।

২০১১ সালে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে কেজরিওয়াল দিল্লিতে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন। মাত্র এক বছরের মধ্যেই আম আদমি পার্টি বড় রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়।

২০১৩ সাল থেকে দলটি দিল্লির প্রাদেশিক নির্বাচনে একটানা বিজয়ী হয়ে আসছে। ২০১৫ সাল থেকে তিনি টানা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। এরপর পাঞ্জাবেও জয় পায় আম আদমি পার্টি। দলটি বর্তমানে পাঞ্জাবেরও প্রাদেশিক শাসক দল।

তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়া টুডে, টাইমস অব ইন্ডিয়া, এনডিটিভি, হিন্দুস্তান টাইমস

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত