Beta
শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

আক্রান্ত যত সরকারি স্থাপনা

মহাখালীতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ভবন ও এর সামনে থাকা সরকারি গাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
মহাখালীতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ভবন ও এর সামনে থাকা সরকারি গাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনের মধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরকারি স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। রাজধানী ঢাকায় আগুনে পুড়েছে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর, পুলিশ বক্স, টোল প্লাজা ও মেট্রোরেলের স্টেশন। আগুনের হাত থেকে রেহাই পায়নি বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন বিটিভি ভবনও। এসব স্থাপনায় ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি লুটপাটও চালানো হয়েছে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে অনেক গাড়ি।

তিন দিন পর বুধবার খুলেছে সরকারি-বেসরকারি অফিস। সোমবার থেকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নতুন করে সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি।

গত সপ্তাহের মঙ্গলবার সারা দেশে সহিংসতায় ছয়জনের মৃত্যু হয়। পরদিন সহিংসতা হলেও কোনও প্রাণহানি ছিল না। বৃহস্পতিবার থেকে টানা চারদিন যে সহিংসতা হয়েছে তাতে প্রাণ গেছে দেড় শতাধিক মানুষের। এ চারদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে যে সহিংসতা, জ্বালাও-পোড়াও হয় তার নিদর্শন বুধবারও দেখা গেছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গত বৃহস্পতিবার বিকালে মহাখালী এলাকায় মিছিল করেন কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা। মিছিলটি আমতলী থেকে ওয়্যারলেস গেইটের দিকে যাওয়ার পথে হাতের ডান দিকে থাকা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ভবন লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়া শুরু হয়।

কিছুক্ষণের মধ্যে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় ভবনের সামনে থাকা কয়েকটি গাড়িতে। ধীরে ধীরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে ভবনেও। ভবনটিতে কর্মরত কর্মীরা দ্রুত ছাদে উঠে যান এবং মই ব্যবহার করে পাশের ভবনে চলে যান।

আগুন থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনের কর্মীরা রক্ষা পেলেও রক্ষা পায়নি ভবনটি। আগুনে পুড়েছে অধিদপ্তরের ৫৩টি গাড়ি ও ১৩টি মোটর সাইকেল। সৌদি আরব সরকারের কাছ থেকে পাওয়া অনুদানের চারটি কাভার্ড ভ্যানও পুরোপুরি পুড়ে গেছে। দুটি লিফট নষ্ট হয়েছে, অচল হয়ে পড়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের যন্ত্রগুলো। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জানালার কাচ, পানির লাইন, ইন্টারনেট সংযোগ, টেলিফোন সংযোগও।

সেতু ভবন ও বিআরটিএ ভবন

ঢাকায় আগুন দেওয়া ভবনের মধ্যে রয়েছে বিমানবন্দর সড়কে অবস্থিত সেতু ভবনও। আগুনে ভবনের নিচতলা পুড়ে গেছে। পুড়েছে সেতু বিভাগের ৫৫টি গাড়ি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে জিপ, মাইক্রোবাসও পিকআপ ভ্যান। ভবনটি থেকে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সামগ্রী লুটপাট করা হয়েছে।

আন্দোলনের মাঝে সেতু ভবনের পাশে অবস্থিত বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ভবনেও আগুন দেওয়া হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার বিকালে ভবনটিতে প্রথমে হামলা চালিয়ে লুটপাট করা হয়, পরে আগুন দেওয়া হয়। ভবনটির পাঁচতলা পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, নিচতলা একেবারে পুড়ে গেছে। বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস সংযোগ অচল হয়ে পড়েছে।

আগুন ও হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবন। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
আগুন ও হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবন। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

বিটিভি ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আগুনে

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টার দিকে বিটিভির প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে ঢোকে কয়েকশ মানুষ। শুরুতে তারা একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও দুটি মোটরসাইকেলে আগুন দেয়। পরে তাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যদের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এক পর্যায়ে আগুনের কারণে বন্ধ হয়ে যায় বিটিভির সম্প্রচার, ভেতরেও আটকা পড়েন অনেকে। আগুনে বিটিভির অন্তত ৪০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

আন্দোলন চলাকালে ঢাকার উত্তরা, মিরপুর, মহাখালী, বাড্ডা, মোহাম্মদপুর, রামপুরাসহ বেশ কিছু স্থানে পুলিশ বক্স পুড়িয়ে দেওয়া হয়। আগুন দেওয়া হয় মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরের চারমুখী ওভারব্রিজেও। ঢাকায় ভাঙচুর ও আগুনের শিকার হয়েছে বিজিবির কিছু অফিস, পুলিশ কর্মকর্তাদের কার্যালয়, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজার মতো স্থাপনা। ‍

মেট্রোরেলের কাজীপাড়া, মিরপুর-১০ স্টেশনে হামলা

কোটাবিরোধী আন্দোলনের মাঝে শুক্রবার হামলা হয় মেট্রোরেলের কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ স্টেশনে। এর আগের দিন বিকালেই বন্ধ করে দেওয়া হয় মেট্রোরেল। শুক্রবারের হামলায় স্টেশন দুটি কার্যক্ষমতা হারিয়েছে। ভাঙচুরের পাশাপাশি এ দুটি স্টেশন থেকে লুট করা হয়েছে টেলিভিশন, কম্পিউটার, মনিটর, এসিসহ নানা সামগ্রী। হামলায় যে ক্ষতি হয়েছে তা সারিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে অন্তত এক বছর লাগবে বলে জানিয়েছে মেট্রোরেল পরিচালনাকারী সংস্থা ডিএমটিসিএল।

শুক্রবার হামলার শিকার হয় মিরপুর-৬ নম্বরের ইনডোর স্টেডিয়াম, সেখানে আগুনও দেওয়া হয়। একই দিন আগুন দেওয়া হয় বনশ্রীতে অবস্থিত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ঢাকা মেট্রো দক্ষিণের কার্যালয়ে। এতে পুড়েছে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন নথিপত্র।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বনানী টোলপ্লাজা পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তুপে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বনানী টোলপ্লাজা পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তুপে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

বুধবার থেকে শুরু হওয়া হামলায় ঢাকায় পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের বেশ কয়েকটি গাড়ি। ভাঙচুরের শিকারও হয়েছে অন্তত নয়টি গাড়ি, যার মধ্যে একটি অ্যাম্বুলেন্সও রয়েছে।

হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাজধানী ঢাকার অসংখ্য সড়ক বিভাজক। সড়ক বিভাজকের ব্যারিকেডও খুলে নেওয়া হয়েছে অনেক স্থানে। অনেক স্থানে ড্রেনের ওপর দেওয়া স্ল্যাব তুলে ভেঙে ফেলা হয়। তা দিয়ে হামলা চালানো হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর। বিভিন্ন রাস্তার পাশে থাকা ভ্রাম্যমাণ খাবারের গাড়ি, ভ্যানও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

নরসিংদী কারাগার

ঢাকার বাইরে কয়েকটি জেলায় হামলার শিকার হয়েছে বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা। এর মধ্যে নরসিংদী জেলা কারাগার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হামলা-অগ্নিসংযোগের পর নরসিংদী জেলা কারাগার যেন ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে।

হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের সুযোগে কারাগারটি থেকে পালিয়ে যায় আট শতাধিক বন্দী। যাদের মধ্যে অন্তত নয়জন জঙ্গি। লুট করা হয়েছে কারারক্ষীদের ৮৫টি অস্ত্র, আট হাজার ১৫০ রাউন্ড গুলি।

এ ঘটনায় রবিবার নরসিংদী মডেল থানায় মামলা করেছে জেলা কারাগার কর্তৃপক্ষ।

মামলায় বলা হয়েছে, হামলায় অংশ নেয় ১০ থেকে ১২ হাজার মানুষ। যাদের মধ্যে অন্তত এক হাজার জন কারাগারে ঢুকে বন্দীদের পালাতে সহায়তা করেছেন।

নরসিংদীর পাঁচদোনায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সেও ভাঙচুর চালানো হয়। ভাঙচুরের পর আগুনও ধরিয়ে দেওয়া হয় সেখানে। একই স্থানে কৃষি বিপণন অফিস, পুলিশ বক্স ও মেহেরপাড়া ইউপি কার্যালয়ও ভাঙচুরের শিকার হয়।

গাজীপুরের বেশ কয়েকটি সরকারি স্থাপনায় ভাঙচুর চালানো হয়েছে। সিটি করপোরেশনের টঙ্গী কার্যালয়, সড়ক ও জনপথ ভবন, চান্দনা চৌরাস্তার পুলিশ বক্স এবং ডেসকো কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয় আন্দোলনের মাঝে।

এছাড়া ভাঙচুরের পাশাপাশি আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকার পিবিআই কার্যালয়, সিদ্ধিরগঞ্জ পাসপোর্ট অফিস ও শিল্প পুলিশের অফিস। ভাঙচুরের পাশাপাশি আগুন দেওয়া হয় জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়েও।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত