Beta
মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

নাম বদলের সঙ্গে ধারা-ভাবধারা বদলানোও জরুরি

nsc
Picture of রাহেনুর ইসলাম

রাহেনুর ইসলাম

সচিবালয়ে প্রথম দিনের অফিসেই একটা ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের নাম পরিবর্তন করবেন তিনি।

এর ব্যাখ্যায় আসিফ মাহমুদ বলেছিলেন, ‘‘বাংলাদেশের একটা ধ্বংসযজ্ঞের সঙ্গে শেখ হাসিনার নাম জড়িত আছে এবং হাজার-সহস্র ছাত্র–জনতা মারা গিয়েছে। সে জায়গা থেকে এটা শুধু আমাদের মন্ত্রণালয়ে নয়, প্রতিটি স্থানেই এটা করা হবে। শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউট নামটা পরিবর্তন করে আমরা বাংলাদেশ জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউট করছি।’’

কোটা সংস্কারের আন্দোলন থেকে দেশ সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী এই সরকারের আগমন। নতুন সরকারের উপদেষ্টারা শপথ নেওয়ার পর থেকে ক্রীড়াঙ্গনেও চলছে পালাবদলের দাবি। বিসিবি, বাফুফে থেকে শুরু করে ছোট অনেক ফেডারেশনে মানববন্ধন করছেন অনেকে। এই জোয়ারে ক্রিকেট প্রশাসন বদলাতে বিসিবিতে ছুটে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের সাবেক এক ফুটবল অধিনায়কও!

ধারা বদলের শুরু হতে পারে ক্রীড়া পরিষদ থেকে

এমনিতে ক্রীড়া ফেডারেশনে সরকারি হস্তক্ষেপের সুযোগ থাকার কথা না। আদালতেরও না। ক্রীড়াঙ্গনের যে কোন বিরোধ নিষ্পত্তিতে আছে কোর্ট অব আরবিট্রেশন ফর স্পোর্টস, বা সিএএস। কিন্তু বাংলাদেশে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আইনের ২০(ক) ধারাটির জন্য সরকারি হস্তক্ষেপের সুযোগ তৈরি করে রাখা হয়েছিল ১৯৭৬ সাল থেকে।

বাংলাদেশ ক্রীড়া পরিষদ আইন ১৯৭৪-এ না থাকলেও ১৯৭৬ সালে নতুন চেয়ারম্যান চালু করেন এই ধারা। সেই ধারার সংশোধনী হয়েছে ২০১৮ সালের নভেম্বরে। তাতেও রয়ে গেছে সরকারি হস্তক্ষেপের সুযোগ।

 ধারাটির নম্বর এখন ২১। সেখানে স্পষ্ট লেখা, ‘‘….পরিষদ জাতীয় ক্রীড়া সংস্থা বা তপশিলে উল্লিখিত ক্রীড়া সংস্থার নির্বাহী কমিটি, উহা যে নামেই অভিহিত হউক না কেন, যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করিতেছে না বা সংস্থার স্বার্থের পরিপন্থি কার্যক্রম পরিচালনা করিতেছে মর্মে পরিষদের নিকট প্রতীয়মান হইলে , উক্ত নির্বাহী কমিটি ভাঙ্গিয়া দিতে পারিবে এবং প্রয়োজনে একটি এ্যাডহক কমিটি নিয়োগ করিতে পারিবে।’’

এই ধারাতে সরকার চাইলে যে কোনও ফেডারেশন ভেঙে দিতে পারে। অতীতের সব সরকারই এই ধারার সুযোগ নিয়েছে। এ্যাডহক কমিটি দিয়ে বছরের পর বছর চলেছে একাধিক ফেডারেশন। কিন্তু একটি নির্বাচিত কমিটি বাতিলের অধিকার সরকারের থাকবে কেন? তারা তো ভোটে জিতেই এসেছেন পরিচালনা পরিষদে।

তাই ২১ নম্বর ধারাটি বাতিল করে বরং সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ ভোটের ব্যবস্থা করলেই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। তখন আর কেউ নিজেদের বঞ্চিত ভাবতে পারবেন না। ভোটে হারলে বঞ্চিত ভাবার কিছু থাকেও না।

ফুটবল-ক্রিকেটে ব্যতিক্রম

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আইনের ২১ নম্বর ধারায় সব ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটি ভেঙে ফেলার সুযোগ থাকলেও ব্যতিক্রম ফুটবল আর ক্রিকেট। কারণ এই দুটি ফেডারেশনে বড় অঙ্কের তহবিল আসে ফিফা ও আইসিসি থেকে। সরকারি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে কড়া নজরদারিও থাকে তাদের।

২০০১ সালে নতুন নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় বসার পরপরই ভেঙে ফেলা হয়েছিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নির্বাচিত কমিটি। সরকারের হস্তক্ষেপের জন্য ফিফা বাফুফের সদস্য পদ বাতিল করে দেয়। বাধ্য হয়ে পুরোনো কমিটিকে পুনর্বহাল করতে হয় আবারও।

২০০৭ সালে তখনকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিসিবির কার্যনির্বাহী পরিষদের সবাই পদত্যাগ করে অন্তবর্তীকালীন কমিটি গঠনে সহায়তা করেছিল। তাই নিষেধাজ্ঞায় পড়েনি বিসিবি। তবে সরকারি হস্তক্ষেপের জন্য গত বছর আইসিসির নিষেধাজ্ঞায় পড়েছিল শ্রীলঙ্কা। একই কারণে নিষিদ্ধ হয়েছিল জিম্বাবুয়েও। তাই নতুন ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বিসিবির পরিচালকদের বলেছেন আইসিসির আইন খতিয়ে দেখতে, যেন নাজমুল হাসান পাপনের অনুপস্থিতিতে নতুন কাউকে দিয়ে বোর্ড পরিচালনা করা যায়।

বিসিবির গঠনতন্ত্রের ধারা

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর থেকে বিসিবিতে আসছেন না নাজমুল হাসান পাপন। তার অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে ধনী বোর্ড চালানোর কথা দুজন সহ-সভাপতির একজনের ( ১৪.২.২ ধারা)। অথচ বিসিবির কোন সহ-সভাপতিই নেই। বেশিরভাগ পরিচালক দেশ ছাড়ায় এখন কোরাম পর্যন্ত পূর্ণ করা কঠিন (অন্তত ৯ জন দরকার)।

বর্তমান কমিটি ভেঙে দেওয়ার পথ অবশ্য গঠনতন্ত্রে আছে। বিসিবির গঠনতন্ত্রের ১৫.২ ধারায় আছে, ‘‘কোন পরিচালকের পদ অবসান বা শূন্য হইবে যদি উক্ত পরিচালক শারীরিক অসুস্থতা, বিদেশ গমন বা যথাযথ কারণ ব্যতিরেকে পরিচালনা পরিষদের পর পর ৩টি সভায় অনুপস্থিত থাকেন।’’

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে বেশিরভাগ পরিচালক উধাও হয়ে যাওয়ায় টানা তিনটি সভায় তাদের অনুপস্থিত থাকার শঙ্কা প্রবল। এই ধারায় ভেঙে ফেলা যেতে পারে বর্তমান বোর্ড। তাতেও আইসিসির নিষেধাজ্ঞা যে নেমে আসবে না, এর নিশ্চয়তা নেই।

ভাবধারা বদল

আইন বা ধারা বদল অবশ্যই সম্ভব। কিন্তু ভাবধারা বা মানসিকতার বদল হবে কীভাবে? আসিফ মাহমুদের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতে বোর্ড পরিচালকদের নতজানু হয়ে থাকার ভিডিও ঘিরে প্রবল সমালোচনা চলছে দেশজুড়ে। এই পরিচালকদের অনেকে সেই ২০১৩ সাল থেকে নাজমুল হাসান পাপনের চারপাশে ছিলেন ছায়ার মত।

অভিজ্ঞ, উচ্চশিক্ষিত, নামি ক্রিকেটার আর ধনী ব্যবসায়ী হয়েও আত্মমর্যাদা বিসর্জন দিয়ে করে গেছেন চাটুকারিতা। নাজমুল হাসান পছন্দও করতেন এসব। তাই ‘জি হুজুর’ আর মোসাহেবি করে তাকে খুশি রেখে নিজেদের ব্যবসা বাগিয়ে নিয়েছেন অনেকে। তাতে ক্রিকেট খেলাটা পড়েছে মুখ থুবড়ে।

ঘরোয়া ক্রিকেটে মাঠের খেলাকে গুরুত্বহীন করে ক্ষমতা আকঁড়ে থাকতে যে কোনোভাবে কাউন্সিলর হওয়াটাই ছিল তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য। নতুন সরকারের আমলে এই ভাবধারার বদলটাও জরুরি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত