শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ তুলেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি বলেছেন, অসত্য বলার মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির তার পদের শপথ ভঙ্গ করেছেন বলে তিনি মনে করেন।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে ধূম্রজালের মধ্যে প্রবীণ সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরী দাবি করেন, শেখ হাসিনার কোনও পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতি পাননি।
মতিউর রহমানের দাবি অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি তাকে বলেছেন, “আমি শুনেছি তিনি পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু আমার কাছে কোনও দালিলিক প্রমাণ নেই। বহু চেষ্টা করেও আমি ব্যর্থ হয়েছি।”
রাজনৈতিক সাময়িকী জনতার চোখে গত ১৯ অক্টোবর মতিউর রহমান চৌধুরীর সেই প্রতিবেদন প্রকাশের পর তা নিয়ে তুমুল আলোচনা শুরু হয়।
কেননা শেখ হাসিনার ৫ আগস্ট দেশ ছাড়ার পর আওয়ামী লীগের নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনই জাতির উদ্দেশে ভাষণে বলেছিলেন, “আপনারা জানেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং আমি তা গ্রহণ করেছি।”
আড়াই মাসের মধ্যে তাকে উদ্ধৃত করে ভিন্ন বক্তব্য আসায় সোমবার নিজ মন্ত্রণালয়ে তা নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া জানান আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
তিনি বলেন, “রাষ্ট্রপতি বলেছেন, তিনি পদত্যাগপত্র পান নাই। এটা মিথ্যাচার। এটা উনার শপথ লঙ্ঘনের সামিল। কারণ উনি নিজেই ৫ অগাস্ট ১১টা ২০ মিনিটে তিন বাহিনীর প্রধানকে পেছনে নিয়ে বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগপত্র তার কাছে জমা দিয়েছেন। এবং তিনি তা গ্রহণ করেছেন।”
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সংসদও বিলুপ্ত করেন রাষ্ট্রপতি। সাংবিধানিক শূন্যতার মধ্যে গত ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়।
সেই সরকারের উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়া আসিফ নজরুল সেই প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, “রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের আপিলের বিভাগের কাছে জানতে চান- এ পরিস্থিতিতে কী করণীয় আছে? বিচারপতিদের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রেফারেন্সেও উল্লেখ করা হয় প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগের কথা। এই রেফারেন্সে স্বাক্ষর করেছেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতিসহ সকল বিচারপতি।”
এখন রাষ্ট্রপতির ভিন্ন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আসিফ নজরুল বলেন, “উনি (রাষ্ট্রপতি) তার শপথ লঙ্ঘন করেছেন। উনি আর এই পদে থাকার যোগ্যতা আছে কি না, সেই সম্পর্কে প্রশ্ন আসে।”
মতিউর রহমান চৌধুরী দাবি করলেও রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে এই বক্তব্যের বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া এখনও পাওয়া যায়নি। বঙ্গভবনের পক্ষ থেকে কোনও বক্তব্য আসেনি।
এদিকে তার ওই বক্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
তিনি ফেইসবুকে লিখেছেন, “হাসিনাকে উৎখাত করা হয়েছে; একটি অবৈধ সরকারকে জনগণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উৎখাত করেছে। এখানে পদত্যাগপত্রের কোনও ভূমিকা নেই।”