সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ এখন রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে অবস্থান করছেন। রাশিয়ার জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক মিখাইল ইউলিয়ানভ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলোও বাশার আল আসাদের রাশিয়ায় অবস্থান করার খবর দিচ্ছিল। সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে বলা হচ্ছিল, বাশার আল-আসাদ ও তার পরিবারের সদস্যদের রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছে রাশিয়া।
জ্যেষ্ঠ রুশ কূটনীতিক মিখাইল ইউলিয়ানভ সোমবার সকালে দেশটির সংবাদমাধ্যমে বাশার আল-আসাদকে নিয়ে প্রকাশিত এসব সংবাদের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি রাশিয়া টুডেকে জানান, বাশার আল-আসাদ ও তার পরিবারের সদস্যরা এখন মস্কোতেই আছে।
তাদের রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার যে তথ্য সংবাদমাধ্যমে এসেছে, তাও নিশ্চিত করেন মিখাইল ইউলিয়ানভ। ভিয়েনায় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সদরদপ্তরে রুশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেওয়া এই কূটনীতিক বলেন, “মস্কোয় আসাদের উপস্থিতি এটাই নির্দেশ করে যে, কঠিন মুহূর্তে রাশিয়া কখনও তার বন্ধুর সঙ্গে বেইমানি করে না… যেমনটা যুক্তরাষ্ট্র করে।”
১৩ বছর আগে ২০১১ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হলেও ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত রাশিয়া ও ইরানের সহায়তা নিয়ে টিকে ছিলেন তিনি। সঙ্গে লেবাননের হিজবুল্লাহর সহায়তাও পেতেন তিনি।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই মিত্ররা নিজেরাই আঞ্চলিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়ায় সিরিয়ায় সেভাবে মনোনিবেশ করতে পারছিল না। আর এই সুযোগেই সিরিয়ার বিদ্রোহীরা নিজেদের মধ্যে জোট গড়ে বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে তৎপর হয়ে ওঠে।
দ্রুততার সঙ্গে কয়েকটি শহর দখলে নেওয়ার পর রবিবার সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কও দখলে নেয় দেশটির সরকারবিরোধী বিদ্রোহীদের জোট। একইসঙ্গে তারা জানায়, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।
এর মধ্য দিয়ে সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের দুই যুগের কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান হয়। এর আগে তার বাবা হাফিজ আল-আসাদও একই কায়দায় ৩০ বছর সিরিয়া শাসন করেন।
বাশার আল-আসাদ দেশ ছেড়েছেন বলে রবিবার বিদ্রোহীরা দাবি করার পর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোও জানায়, বিমানে করে দেশ ছেড়েছেন বাশার আল আসাদ। তবে তিনি কোথায় গেছেন সে খবর কেউ দিতে পারছিল না।
অবশেষে প্রথমে রাশিয়ার সংবাদমাধ্যম এবং পরে দেশটির সরকারি পর্যায় থেকে বাশার আল-আসাদের মস্কোতে গিয়ে আশ্রয় নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হলো।
সিরিয়ার বিদ্রোহীরা ‘মিলিটারি অপারেশন্স কমান্ড’ নামে নতুন একটি জোট গড়ে তোলার পর নভেম্বরে শেষ দিকে আলেপ্পোতে হামলা চালায়। তাদের হামলা টিকতে না পেরে সরকারি বাহিনী পিছু হটলে দ্রুততার সঙ্গে শহরটি নিয়ন্ত্রণে নেয় বিদ্রোহীরা।
এর ধারাবাহিকতায় শনিবার বিদ্রোহীরা দেরা শহরের নিয়ন্ত্রণ নেয়। একইদিন তারা গুরুত্বপূর্ণ হোমস নগরীতেও নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে।
হোমস দখলের পরপরই বিদ্রোহীরা রাজধানী দামেস্কের দিকে আগাতে শুরু করে এবং রবিবার সকাল নাগাদ তারা দামেস্কে ঢুকে পড়ে। তবে রাজধানীতে ঢুকতে গিয়ে বিদ্রোহীদের কোনও ধরনের সামরিক বাধার মুখে পড়তে হয়নি বলে জানিয়েছে তারা।
রাজধানী দখলে নিয়েই বিদ্রোহীরা বাশার আল আসাদের শাসনের অবসান ঘোষণা করে জানায়, প্রেসিডেন্ট বিমানে করে অজানা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।
এর আগে নভেম্বরের শেষ দিকে বিদ্রোহীরা হামলা শুরুর পরপরই সম্ভাব্য বিপদ আচ করতে পেরে পরিবারের সদস্যদের রাশিয়ায় পাঠিয়ে দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। সেই পথ ধরে রবিবার তিনি নিজেও দেশ ছেড়ে পালিয়ে রাশিয়ায় গিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় নিলেন।