নিজেদের উৎপাদিত করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা কোভিশিল্ড বিশ্ববাজার থেকে তুলে নিচ্ছে ওষুধ ও টিকা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকা।
মঙ্গলবার ব্রিটিশ-সুইডিশ বহুজাতিক এই কোম্পানি জানায়, তারা আর এই টিকা উৎপাদন করবে না।
কারণ হিসেবে অ্যাস্ট্রাজেনেকা জানিয়েছে, বিশ্ববাজারে করোনাভাইরাসের হালনাগাদ টিকা উদ্বৃত্ত আছে। তাই তারা কোভিশিল্ড টিকা উৎপাদন বা সরবরাহ কোনোটিই আর করবে না।
অ্যাস্ট্রাজেনেকা সম্প্রতি স্বীকার করেছে, তাদের করোনাভাইরাসের টিকার কারণে বিরল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াকে চিকিৎসকরা থ্রম্বোসিস উইথ থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিনড্রোম (টিটিএস) বলছেন। টিটিএসের ফলে মানুষের রক্ত জমাট বাঁধে ও প্লাটিলেটের পরিমাণ কমে যায়।
কোম্পানিটির এই স্বীকারোক্তির পর মঙ্গলবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের সরকারি সংস্থা ইউরোপিয়ান মেডিসিনস এজেন্সি এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ড ব্যবহারের জন্য আর অনুমোদিত নয়।
ইউরোপিয়ান মেডিসিনস এজেন্সির এই ঘোষণার পরপরই বিশ্ববাজার থেকে নিজেদের উৎপাদিত করোনাভাইরাসের টিকা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় অ্যাস্ট্রাজেনেকা।
টিকা প্রত্যাহারের বিষয়ে এক বিবৃতিতে অ্যাস্ট্রাজেনেকা জানায়, কোভিড-১৯ ভ্যারিয়েন্টকে মোকাবিলার মতো নতুন টিকা বর্তমানে বাজারে যথেষ্ট পরিমাণে আছে। ফলে কোভিশিল্ডের চাহিদা কমেছে। এজন্য এই টিকা তৈরি বা সরবরাহ করা হবে না।
২০২০ সালে দেশে দেশে করোনাভাইরাস মহামারির রূপ নিলে ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ডের সঙ্গে যৌথভাবে টিকা উৎপাদন করে অ্যাস্ট্রাজেনেকা।
এছাড়া বিশ্বের বৃহত্তম টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার (এসআইআই) সহযোগিতায় ভারত সরকারের কাছে কোভিশিল্ড টিকা সরবরাহ করে অ্যাস্ট্রাজেনেকা।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও কোভিশিল্ড সরবরাহ করা হয়েছিল। অনেক বাংলাদেশি এই টিকা নিয়েছে।
তবে গত বছর কোভিশিল্ড টিকা নিয়ে অভিযোগ ওঠে। বলা হয়, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা যারা নিয়েছেন, তারা শারীরিকভাবে গুরুতর ক্ষতির শিকার হয়েছেন। কারও কারও মৃত্যুও হয়েছে।
দ্য টেলিগ্রাফ প্রথম তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, অ্যাস্ট্রাজেনেকা আদালতে স্বীকার করেছে, তাদের টিকা নিলে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে। এছাড়া রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণও কমে।
দ্য টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, বিশ্ববাজার থেকে নিজেদের টিকা প্রত্যাহারের আবেদন রবিবার জমা দিয়েছিল অ্যাস্ট্রাজেনেকা। এর দুদিন পর মঙ্গলবার তা মঞ্জুর করে ইউরোপিয়ান মেডিসিনস এজেন্সি।
তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, গার্ডিয়ান, রয়টার্স