Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪

বাস্তুকৃষ্টি

স্থাপত্যে জ্যোতির্বিদ্যা ও যন্তর মন্তরের রাজা জয় সিংয়ের কথা

ভারতের জয়পুরে জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক স্থাপত্য যন্তর মন্তর। ছবি: এলাইট ইন্ডিয়া

ভারতের জয়পুরের ‘যন্তর মন্তর’-এর কথা অনেকেরই জানা। ১৭২৪ থেকে ১৭৩০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মানমন্দিরের এমন জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক স্থাপত্য উদ্ভাবন কেবল ভারতেরই নয় সেকালের বিশ্ব ইতিহাসে ছিল এক যুগান্তকারী ঘটনা। জয়পুরের এই যন্ত্রর মন্তরসহ দিল্লি, বারাণসী, উজ্জয়িনী ও মথুরায় মোট পাঁচটি মানমন্দির নির্মাণ করেছিলেন অম্বরের মহারাজা সোয়াই জয় সিং-দ্বিতীয়। জ্যোতির্বিদ্যা চর্চায় রাজা জয় সিংয়ের অবদান নিয়ে সকাল সন্ধ্যার জন্য লিখেছেন ভারতের গবেষক ও লেখক সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়।  

মহামতি সম্রাট আকবরের সময় (১৫৬২ খ্রিস্টাব্দ) থেকে অম্বর রাজ্যের প্রভাব প্রতিপত্তি মোঘল দরবারে বৃদ্ধি পেতে থাকে। মান সিংহ (১৫৪৩১৬১৪ খ্রিস্টাব্দ) এবং মির্জা রাজা জয় সিং (১৬১১–১৬৬৭ খ্রিস্টাব্দ) মোঘল দরবারে বিশেষ সম্মানের সাথে উচ্চ পদ অলংকৃত করতেন। মান সিংহ-এর কথা বহুল প্রচারিত। কিন্তু সোয়াই জয় সিং যখন জন্মগ্রহণ করেন তখন চিত্র কিছুটা বদলে গেছে।

অম্বরের রাজা সোয়াই জয় সিং দ্বিতীয়। চিত্রকর্মের আলোকচিত্র: উইকিমিডিয়া কমন্স।

সোয়াই জয় সিং-এর পিতা অম্বরের রাজা বিষ্ণো সিং (শাসনকাল ১৬৮৯–১৭০০ খ্রিস্টাব্দ) মোঘল দরবারে খুব একটা উচ্চপদে আসীন ছিলেন না। এতদসত্ত্বেও বিষ্ণো সিং ছিলেন শিক্ষানুরাগী। পুরুষানুক্রমে এই গুণ তারা পেয়েছিলেন। বিষ্ণো সিং-এর পিতা মির্জা রাজা জয় সিং তার দুই পুত্রকে বারাণসী পাঠিয়েছিলেন উচ্চ শিক্ষার জন্য। শুধু পাঠিয়েই ক্ষান্ত হননি, বিশ্বস্ত দূত মারফত শিক্ষক মহাশয়ের কাছ থেকে রিপোর্ট নিতেন। সংস্কৃত ভাষা, গণিত, সাহিত্য বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের পর বিষ্ণো সিং শাসনভার গ্রহণ করেছিলেন।

বিষ্ণো সিং একইরকমভাবে পুত্র সোয়াই জয় সিং কে সংস্কৃত, আরবি, ফার্সি প্রভৃতি ভাষা শিক্ষা দেন। তার পাশাপাশি তিনি গণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞানে যথেষ্ট ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার, ১২ বছর বয়সেই পিতৃবিয়োগ হয়। বিদ্যাচর্চায় ছেদ ঘটে। রাজা হয়ে সোয়াই জয় সিং-দ্বিতীয় অম্বরের রাজ-সিংহাসনে আরোহণ করেন। এই জয় সিং-ই আমাদের ‘যন্তর মন্তরের’ উদ্গাতা। আমরা এরপর থেকে সোয়াই জয় সিং দ্বিতীয়কে শুধুমাত্র জয় সিং বলে চিহ্নিত করব।

অম্বরের রাজ সিংহাসনে জয় সিং আরোহণ করেন ২৫  জানুয়ারি ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে। শাসনকার্য সামাল দিতে শুরু করেন, সাথে পড়াশোনা চালিয়ে যান— এই সময়ে মোঘল সাম্রাজ্য পতনোন্মুখ। আরঙ্গজেবের শাসনকালের শেষ দিকে নানা প্রান্তে বিদ্রোহ দেখা দিতে শুরু করে। জয় সিংয়ের পিতার মৃত্যুর পর সম্রাট আওরঙ্গজেব জয় সিংকে দক্ষিণে পাঠালেন বিদ্রোহ দমন করতে। এখানে দেখা হলো জগন্নাথ নামের এক যুবকের সাথে। জগন্নাথ ছিলেন গণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞানে পারদর্শী। জগন্নাথের সাথে কথা বলার পর জয় সিং-এর গণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পায়।

ভারতের জয়পুরে জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক স্থাপত্য যন্তর মন্তর। ছবি: এলাইট ইন্ডিয়া।

জয় সিং দক্ষিণ ভারতে থাকাকালীন আরঙ্গজেবের মৃত্যু হয়। আরঙ্গজেবের পুত্রদের মধ্যে উত্তরাধিকার নিয়ে মতবিরোধ হয়। জয়ী হন আরঙ্গজেবের জ্যেষ্ঠ পুত্র বাহাদুর শাহ। বাহাদুর শাহের সাথে রাজপুত রাজাদের সম্পর্ক ভালো না হওয়ার কারণে রাজপুত রাজাগণ একত্রীভূত হয়ে তাদের রাজ্য মোঘল নিয়ন্ত্রণ থেকে উদ্ধার করেন। এরপর থেকে দিল্লির রাজনৈতিক অবস্থা অনিশ্চিত হতে থাকে, যতদিন না মহম্মদ শাহ দায়িত্ব নেন। মহম্মদ শাহ দীর্ঘদিন রাজত্ব করেছেন এবং জয় সিংয়ের সাথে তার সম্পর্ক ছিল ভালো-মন্দ মিশিয়ে।

জয় সিং তার জীবনের অনেকটা সময় রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করেছেন। তার সময়ে অম্বর রাজত্বের সীমানা তিন হাজার বর্গমাইলের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। ১৭৩০ সাল নাগাদ দিল্লির প্রবেশদ্বার থেকে মধ্য ভারতের নর্মদা নদীর পাড় পর্যন্ত বিস্তীর্ণ ভূখণ্ডের জয় সিং ছিলেন একচ্ছত্র অধিপতি। বিশাল সম্পত্তি এবং ক্ষমতা করায়ত্ত করার পর জয় সিং, তার প্রিয় বিষয় জ্যোতির্বিজ্ঞানের উন্নতির জন্য মনোনিবেশ করেন।

জয় সিং তার প্রভাব প্রতিপত্তির বিস্তার ঘটাতে পেরেছিলেন অষ্টাদশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশক থেকে। তিনি জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক যন্ত্রের পরিকল্পনা করেন। পর্যবেক্ষণাগারের নকশা প্রস্তুত করার চেষ্টা করেন। বড় গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সময়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মধ্যে থেকে যোগ্যদের বেছে নিয়ে ইউরোপে পাঠান তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে। আমৃত্যু জ্যোতির্বিজ্ঞানের প্রতি তার এই অনুরাগ বজায় ছিল। ১৭৪৩ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

সম্রাট যন্ত্রের স্থাপত্য। ছবি: থ্রো মাই লেন্স।

মোঘল আমল থেকে আলোচনার সূত্রপাত করলে সম্রাট শাহজাহান (শাসনকাল ১৬২৭ থেকে ১৬৫৮ খ্রিস্টাব্দ) দিল্লি থেকে তিনশ কিলোমিটার দূরে জউনপুরে একটি পর্যবেক্ষণাগার গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছিলেন (Sayyid Sulaiman Nadvi, Muslim Observatories; Islamic Culture, vol 20, pp 280-281, 1946, July)। কিন্তু অগ্রসর হতে পারেননি।

ইতিহাস অনুসন্ধান করলে দেখা যায়, ষোড়শ শতাব্দীর মাঝ বরাবর অনেক পণ্ডিত মানুষ ভারতে আসেন। তারা সাথে নিয়ে আসেন জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক তথ্য ‘জিজ’। জিজ শব্দটির অর্থ হলো জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ লব্ধ সারণি। এটিকে অন্যভাবে ম্যানুয়ালও বলা যায়।

খান ঘোরির লেখা থেকে পাওয়া যায়, ভারতে প্রথম জিজ তৈরি করেন মোহাম্মদ বিন উমর। সেন্ট্রাল এশিয়ার ‘মরঘো পর্যবেক্ষণাগার’-এ প্রস্তুত জিজের (১২৫৯) সামান্য আগে ইলতুৎমিসের রাজত্বকালে ভারতে এই জিজটি প্রস্তুত হয়েছিল।

মোঘল আমলে ফার্সি ও আরবি ভাষায় প্রস্তুত প্রচুর জিজ ভারতে আসে। আবুল ফজল মহামতি আকবরের সময়ে ৮৬টি জিজের সন্ধান পান। ১৫৯৭ সালে সম্রাট শাহজাহানের সময়ে ফরিদ্-আল-দিন উলুঘ বেগের জিজ অনুযায়ী ‘জিজ-ই-শাহজাহানী’ লেখেন। এই জিজটি নতুন পর্যবেক্ষণ যোগ না করলেও এটিকে উলুঘ বেগের জিজের নতুন সংস্করণ বলা চলে। জয় সিং তার গ্রন্থাগারে উলুঘ বেগের জিজ সংগ্রহ করে রাখেন।

জয়পুরে থাকা সম্রাট যন্ত্রের নকশা। এ যন্ত্র দিয়ে দিনের সময় এবং সূর্যের পতন পরিমাপ করা যায়। ছবি: যন্তর মন্তর ডট ওআরজি।

জয় সিং দেখলেন যে, জিজ থেকে পাওয়া জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক গণনা সবসময় পর্যবেক্ষণের সাথে মিলছে না। তার প্রাথমিক প্রেরণা ছিল ‘ইসলামিক স্কুল অফ অ্যাস্ট্রোনমি’। ইসলামিক স্কুল প্রয়োগমূলক জ্যোতির্বিজ্ঞানে বিশ্বাসী ছিল। উলুঘ বেগ সমরখন্দের পর্যবেক্ষণাগার গড়ে তুলেছিলেন সেই সময়ের বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের সম্মেলনে। উলুঘ বেগ তার পর্যবেক্ষণাগারে যে যন্ত্রগুলোকে রেখেছিলেন সেগুলো মধ্যে রয়েছে: ১) সুদস-ই-ফকরি বা সেক্সট্যান্ট, ২) আল-আলাআল-কামিল বা অধিবৃত্তাকার রুলার, ৩) লিবনা বা ম্যুরাল কোয়াড্রান্ট, ৪) সাইন এবং ভার্সড সাইন কোয়াড্রান্ট ইত্যাদি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল ‘সেক্সট্যান্ট’। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা গ্রহ সারণি ‘জিজ-ই-উলুঘ বেগ’ ১৪৩৭ খ্রিস্টাব্দে ওই পর্যবেক্ষণাগার থেকেই শেষ করেছিলেন।

জয় সিং তার ‘জিজ-ই-মোহাম্মদ শাহী’-তে লিখেছেন, প্রথমে তিনি পিতলের যন্ত্র তৈরি করতে সচেষ্ট হয়েছিলেন। পরে তিনি পর্যবেক্ষণাগার তৈরিতে মনোনিবেশ করেন, যা থেকে জন্ম নেয় ‘যন্তর মন্তর’। জয় সিং পাথর এবং আনুষঙ্গিক উপাদান দিয়ে যে স্থাপত্য তৈরির পরিকল্পনা করেন তা দিয়ে অতি সূক্ষ্ম পরিমাপ করা যাবে বলে ভেবেছিলেন।

অম্বরের রাজা সোয়াই জয় সিং দ্বিতীয়। চিত্রকর্মের আলোকচিত্র: ব্রিটিশ মিউজিয়াম/উইকিমিডিয়া কমন্স।

ফরাসি যাজক দ্যু বয়িস-এর কথায়, জয় সিং মোম দিয়ে মডেল তৈরি করেছিলেন নিজের হাতে। এরপর তিনি স্থান পছন্দ করেন। জয়পুর, দিল্লি, বারাণসী, উজ্জয়িনী ও মথুরা। মথুরার মানমন্দিরটি নষ্ট হয়ে গেছে। বাকি চারটি এখনও জয় সিংয়ের স্মৃতি বহন করে চলেছে। এসব মানমন্দিরে এখন কোনও গবেষণা হয় না। দুরবীন না থাকলেও ইটের তৈরি বিশাল সূর্যঘড়ি, আস্তারলাব ও বিভিন্ন ধরনের কোণ পরিমাপক যন্ত্র আছে এসব মানমন্দিরে।

মানমন্দিরের জন্য জয় সিংয়ের যন্ত্র উদ্ভাবনকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। জয় সিংয়ের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণের জন্য যন্ত্র: ১) উত্তর-নক্ষত্র নির্দেশক ধ্রুবদর্শক পট্টিকা, ২) নাড়ি বলয়, ৩) পলভা (আনুভূমিক সান ডায়াল), ৪) অগ্রা, ৫) শঙ্কু (আনুভূমিক ডায়াল)। একটু বেশি সূক্ষ্ম যন্ত্র: ১)  জয়প্রকাশ, ২) রাম যন্ত্র, ৩) রাশি যন্ত্র, ৪) শর যন্ত্র, ৫) দিগংশ যন্ত্র, ৬) কপাল। বেশি সূক্ষ্ম যন্ত্র: ১)  সম্রাট যন্ত্র, ২) ষষ্ঠাংশ, ৩) দক্ষিণোত্তর ভিত্তি।

সম্রাট যন্ত্রের তত্ত্ব।

জয় সিংয়ের মান মন্দির প্রাথমিকভাবে নির্মিত হয়েছিল কোণ পরিমাপের যন্ত্র দিয়ে সময় পরিমাপের জন্য। জয় সিং সময় পরিমাপের যন্ত্রকে ২৪ ঘণ্টার দিনকে ৬০টি ভাগে ভাগ করেছেন। এগুলোকে ঘটিকা বলা হতো। কোণ পরিমাপের জন্য বৃত্তকে সমান চার ভাগে ভাগ করা হতো। প্রতিটি ভাগকে বিভক্ত করা হতো ১৫টি মূল ভাগে। তিনি প্রতিটি মূল ভাগকে ছয়টি উপভাগে ভাগ করতেন। তার ডিগ্রির ভাগ ছিল মিনিট অথবা কলায়। ৬০টি কলা নিয়ে এক অংশ বা ডিগ্রি। জয় সিংয়ের সময় পরিমাপের যন্ত্রে মিরিডিয়ান লাইনে শূন্য চিহ্নিত থাকে এবং পূর্ব-পশ্চিম রেখা বরাবর ১৫ ঘটিকা চিহ্নিত থাকে। কোণ পরিমাপের যন্ত্রে পূর্ব-পশ্চিম রেখা বরাবর শূন্য চিহ্নিত থাকে।

সূর্যের প্রচ্ছায়ার হিসাব (১/২ ডিগ্রি বেধ)।

মান মন্দিরে থাকা ‘সম্রাট যন্ত্র’র প্রাথমিক লক্ষ্য হলো, একটি স্থানের স্থানীয় সময় নির্দেশ করা। একটি রৌদ্রকরোজ্জ্বল দিনে সূর্যকে আপাতভাবে পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম দিকে যেতে দেখা যায়। সম্রাট যন্ত্র’র নোমনের ছায়া কোয়াড্রান্ট স্কেলের একদিক থেকে অন্যদিকে সরে যায়। একটি নির্দিষ্ট মুহূর্তে ছায়ার দৈর্ঘ্য দেখে সময় নির্ণয় করা যায়।

১৭২৪ থেকে ১৭৩০ খ্রিস্টাব্দ সময়ের মধ্যে জ্যোতির্বিজ্ঞানের জন্য স্থাপত্য রীতির উদ্ভাবন বিশ্বের ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা। মুসলিম জ্যোতির্বিজ্ঞানী নাসির-অল-দিন অল-তুসি এবং উলুঘ বেগের ঐতিহ্যবাহী চিন্তার মধ্যে সংযোগ সূত্র ছিলেন রাজা জয় সিং। জয়পুরের যন্ত্রর মন্তরসহ দিল্লি, বারাণসী, উজ্জয়িনী ও মথুরায় মোট পাঁচটি মানমন্দির নির্মাণ করেছিলেন অম্বরের মহারাজা সোয়াই জয় সিং-দ্বিতীয়।

টেবিল: সম্রাট যন্ত্রের শঙ্কুর হিসাব।

এ কথা স্মরণে রাখতে হবে, যে সময়ে জয় সিং জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক স্থাপত্য গড়ে তুলেছিলেন তখন দুরবীন ভারতে এসে গিয়েছে। তিনি ভরসা রেখেছিলেন মধ্যযুগীয় ইসলামীয় ঘরানার জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার ওপর। ‘জিজ-ই-উলুঘ বেগী’র ধাঁচে তিনি একটি জিজ রচনা করেছিলেন।

এতকিছুর পরেও জয় সিং এর জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চা পরবর্তী সময়ে খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারেনি। পরবর্তী সময়ে খুব দ্রুত আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের প্রসার ঘটেছিল। তবে এ কথা অনস্বীকার্য, জয় সিং তার জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক গবেষণায় সবাইকে যুক্ত করতে পেরেছিলেন।

জগন্নাথ পণ্ডিত এই বিষয়ে সবিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে। জয় সিং জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক যন্ত্র উদ্ভাবনের চেষ্টায় অনেক সময় ব্যয় করেছেন। সূক্ষ্মতার দিক থেকে আধুনিক যন্ত্রপাতির সাথে তার যন্ত্রগুলোর তুলনা করে হয়ত সেগুলোকে সামান্য পশ্চাৎপদ মনে হবে।

রাজস্থানের জয়পুরে অম্বরের রাজা সোয়াই জয় সিং দ্বিতীয়-এর ভাস্কর্য।

কিন্তু একথা অস্বীকার করা যাবে না, জয় সিং মধ্যযুগীয় জ্যোতির্বৈজ্ঞানিকদের কাজের প্রতি যেমন শ্রদ্ধাশীল ছিলেন, তেমনি আধুনিক জ্ঞানচর্চার গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে ছিলেন সম্পূর্ণ সচেতন। জয় সিং তাই জ্যোতির্বিজ্ঞান ইতিহাসচর্চার এক অসাধারণ মাইল ফলক হিসেবে গণ্য হবেন চিরকাল।

লেখক: গবেষক ও লেখক। ভারত থেকে প্রকাশিত প্রাচীন ভারতের জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে ‘ব্রহ্মসিদ্ধান্ত’ এবং ‘সোমসিদ্ধান্ত’ গ্রন্থের লেখক।
ই-মেইল: somenath79093@gmail.com

সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। প্রতিকৃতি অঙ্কন: সব্যসাচী মজুমদার।
ad

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত