Beta
শুক্রবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৪
Beta
শুক্রবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৪

ঈদ শেষে ঢাকায় ফিরে অটোরিকশা ভাড়া নিয়ে নাকাল

ছুটি শেষে ঢাকা ফিরে অটোরিকশা না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন বেশিরভাগ মানুষ। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
ছুটি শেষে ঢাকা ফিরে অটোরিকশা না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন বেশিরভাগ মানুষ। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
Picture of সাজ্জাদ হোসেন

সাজ্জাদ হোসেন

শনিবার দুপুর ২টা। ঢাকার টেকনিক্যাল মোড়। এক হাতে বড় সুটকেস অন্য হাতে ভারী ব্যাগ নিয়ে হেঁটে যেতে দেখা গেল এক ব্যক্তিকে। চেহারায় ক্লান্তির ছাপ। দুটি ব্যাগ সামলে অনেকটা ধীরেই ফুটপাত ধরে হাঁটছিলেন তিনি।

হাঁটতে হাঁটতেই কথা বলি ওই ব্যক্তির সঙ্গে। জানা গেল, তার নাম মোয়াজ্জেম হোসেন। ঢাকা নিউ মার্কেটের একটি দোকানে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করেন তিনি। ঈদে গ্রামের বাড়ি রাজশাহীতে গিয়েছিলেন। ছুটি শেষে দুপুরেই ঢাকায় ফিরেছেন তিনি। ফিরেই পড়েছেন বিপদে। গাবতলী থেকে যাবেন জিগাতলা।

সাধারণত এই পথের অটোরিকশা ভাড়া ২০০-২৫০ টাকা। কিন্তু আজ ৮০০ টাকার নিচে কোনও চালকই রাজি হচ্ছে না। আবার এই পথে সরাসরি কোনও বাসও নেই, কাছাকাছি দূরত্বের বাসেও উঠতে পারেননি সঙ্গে থাকা মালপত্রের কারণে। ফলে অনেকটা হতাশ হয়েই দুই হাতে দুই ব্যাগ নিয়ে হাঁটতে শুরু করেছেন মোয়াজ্জেম।

অটোরিকশা না পেয়ে ভারী ব্যাগ টানতে টানতে হাঁটতে দেখা যায় অনেক যাত্রীকে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
অটোরিকশা না পেয়ে ভারী ব্যাগ টানতে টানতে হাঁটতে দেখা যায় অনেক যাত্রীকে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

এই বিক্রয়কর্মী জানালেন, মাসে বেতন পান ১২ হাজার টাকা। এই টাকাতেই ঢাকায় নিজের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করার পর গ্রামের বাড়িতে টাকা পাঠাতে হয়। স্বাভাবিকভাবেই ঈদ শেষে ফেরার পর ৮০০ টাকা ভাড়া দিয়ে অটোরিকশায় চড়ার মতো বিলাসিতা করার উপায় তার নেই।

মোয়াজ্জেম বলেন, “অন্যসময় গাবতলী থেকে জিগাতলা যাইতে ২০০-২৫০ টাকা ভাড়া লাগত। আজ কেউ ৮০০ টাকার নিচে যেতেই চাইছে না। ঈদ শেষে হাতে টাকা পয়সা নাই। এত টাকা ভাড়া দিব কীভাবে! আবার বাসে যাবো সেই উপায়ও নেই। এখান থেকে জিগাতলা রুটে কোনো বাস চলে না। তাই বাধ্য হয়ে হাঁটা শুরু করছি।”

শুধু মোয়াজ্জেম নয়, তার মতো আরও অনেককেই ঢাকায় ফিরে এমন বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে।

ঈদের সরকারি ছুটি শেষ হয়েছে মঙ্গলবার। তবে অনেকেই এর সঙ্গে বাড়তি আরও দু’দিন অতিরিক্ত ছুটি নিয়েছিলেন। এরপর আবার শুক্র-শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটি শেষে বেশিরভাগ মানুষ কাজে যোগ দেবেন রবিবার। তাই শনিবার ছিল ঢাকামুখী মানুষের ভিড়।

ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তারও ঢাকায় ফিরেছেন আজ। শুক্রবার রাত ১০টায় পঞ্চগড় থেকে রওনা দিয়ে ঢাকায় পৌঁছেছেন আর দুপুর ১টার দিকে। অনেকক্ষণ চেষ্টা করেও অটোরিকশা পাননি। তাই মোয়াজ্জেমের মতো তিনিও বড় একটি লাগেজ টানতে টানতে হাঁটতে শুরু করেছেন।

সুমাইয়া বলেন, “গাবতলীতে বাস থেকে নামার পর দেখি শত শত মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। এরই মধ্যে ২/১টি অটোরিকশা এলেই সবাই ছুটে যাচ্ছে। এই সুযোগে অনেক বেশি ভাড়া আদায় করছে সিএনজি চালকরা। কিন্তু আমি বেশি ভাড়া দিয়েও সিএনজি ম্যানেজ করতে পারিনি। আবার সঙ্গে বড় লাগেজ থাকায় বাসেও উঠতে দেয়নি।”

অটোরিকশা চালকের সঙ্গে চলছে দর কষাকষি। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
অটোরিকশা চালকের সঙ্গে চলছে দর কষাকষি। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

পরিবার নিয়ে অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর একটি অটোরিকশা পেয়েছেন বেসরকারি চাকরিজীবী রুহুল আমিন।

তিনি বলেন, “গাবতলী থেকে মোহাম্মদপুর যাব। অন্য সময় ভাড়া লাগে ১৮০-২০০ টাকা। আজ নিচ্ছে ৬০০ টাকা। তারপরও আমি ভাগ্যবান, কারণ সিএনজি পেয়েছি। অনেকেতো সেটাও পায়নি। সঙ্গে ছোট বাচ্চা, আবার অনেক মালামাল। সিএনজি ছাড়া বাসায় যাওয়া সম্ভবও ছিল না।”

শুধু সড়ক পথেই নয়, রেল ও নৌপথেও আজ ঢাকা ফেরা যাত্রীর চাপ ছিল অনেক বেশি। এই সুযোগে কমলাপুর ও সদরঘাটেও সাধারণ যাত্রীদের কাছে ইচ্ছামতো ভাড়া হাঁকছেন ঢাকার সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকরা।

পিরোজপুর থেকে সদরঘাটে নেমে অটোরিকশা পেতে গলদঘর্ম হয়েছেন আসা বেসরকারি চাকরিজীবী খাইরুল বাসার।

তিনি বলেন, “সদরঘাটে নামার পর ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা শেষে একটি অটোরিকশা পাই। তবে নাখালাপাড়া যেতে চালক ভাড়া দাবি করেন ৭০০ টাকা। বাধ্য হয়ে তার দাবি মেনে নিতে হয়েছে। অথচ নাখালপাড়া যাওয়ার পর মিটারে দেখি মাত্র ১৭০ টাকা ভাড়া উঠেছে!”

একই কথা জানালেন আরমান হোসেন নামে এক যাত্রী। সদরঘাট থেকে সকালে মিরপুর ডিওএইচএস এলাকায় যেতে তার অটোরিকশা ভাড়া দিতে হয়েছে দেড় হাজার টাকা। অন্যসময় সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা নেয়, মিটারে আরও কম ওঠে।

কমলাপুর থেকে অটোরিকশায় মোহাম্মদপুর যাওয়া রাইহাদ সোহেল বলেন, “সকালে ট্রেনে রাজশাহী থেকে রওনা হয়ে দুপুর ২টার দিকে ঢাকা পৌঁছেছিলাম। ট্রেনে ছিল উপচেপড়া ভিড়। ট্রেন থেকে নামার পর পড়তে হয়েছে আরেক বিড়ম্বনায়। কমলাপুর থেকে মোহাম্মপুর আসার সিএনজি পাচ্ছিলাম না। পরে ঘণ্টাখনেক চেষ্টা করে ৮০০ টাকা ভাড়ায় মোহাম্মদপুর আসি। অন্যসময় এই ভাড়া লাগে ৩০০-৩৫০ টাকা।”

আজ কেন এত বেশি ভাড়া চাওয়া হচ্ছে তার কারণ জানতে কথা বলি কয়েকজন অটোরিকশা চালকের সঙ্গে।

বাস থেকে মালপত্র নামাতে ব্যস্ত যাত্রীরা। এসব মালপত্র নিয়ে অটোরিকশা পেতে মুশকিলে পড়তে হয়েছে তাদের। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
বাস থেকে মালপত্র নামাতে ব্যস্ত যাত্রীরা। এসব মালপত্র নিয়ে অটোরিকশা পেতে মুশকিলে পড়তে হয়েছে তাদের। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

ইকবাল হোসেন নামে এক চালক বললেন, আজ যাত্রীর চাপ অনেক বেশি, সেই তুলনায় অটোরিকশা অনেক কম। তাই ভাড়া কিছুটা  বেশি লাগছে।

“আর সব মানুষই ঈদের ছুটি কাটিয়ে ঢাকায় ফিরছে। তাই তাদের সঙ্গে অনেক মালামাল আছে। এ কারণেও ভাড়া বেশি লাগছে কিছুটা।”

আহাদ আলী নামে আরেক চালক বলেন, “বাড়ি থেকে আসার সময় মানুষ বস্তা ভইরা মালামাল নিয়ে আসছে। অনেকেই ফ্রিজে জমানো কাঁচা মাংস নিয়ে আসছেন। কেউবা আবার সঙ্গে ফলমূল নিয়ে আসছেন। এসব মালামাল সিএনজিতে তুললে নোংরা হইয়া যায়। তাই একটা খ্যাপ মারার পর পরিষ্কার করতে হয়।”

এ কারণে কেউ কেউ বেশি ভাড়া নিতে পারেন। তবে সবাই বেশি ভাড়া নিচ্ছে সেই অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করলেন তিনি।

এত মালামাল নিয়ে যাত্রীরা বাসে কিংবা মোটরসাইকেলে উঠতে পারছেন না উল্লেখ করে এই চালক বলেন, সে কারণেই অটোরিকশার চাহিদা বেড়ে গেছে।

“কোনও কিছুর চাহিদা বাড়লে দামও তো কিছুটা বাড়বে”, যোগ করলেন তিনি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত