বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিপীড়নের অভিযোগ এবং সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আগরতলায় বাংলাদেশ অ্যাসিস্ট্যান্ট হাই কমিশনে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। সেখানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে তা ছেড়া ও তাতে আগুন দেওয়ার ঘটনাও ঘটে।
সোমবার দুপুরের দিকে বাংলাদেশের লাগোয়া ভারতের ত্রিপুরার রাজধানীতে হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি নামের একটি সংগঠন মিশনটির সামনে প্রতিবাদ সভা করার পর ওই হামলা চালায়। এই প্রতিবাদ সভায় বিজেপির সহ-সভাপতি সুবল ভৌমিকও ছিলেন বলে জানিয়েছে দেশটির গণমাধ্যম দ্য সেন্টিনেল।
এ ঘটনায় গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আগরতলায় বাংলাদেশের অ্যাসিস্ট্যান্ট হাই কমিশনে হামলার ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত ধরনের। সেখানকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনে এ ঘটনা ঘটলেও তাদের সবকিছুর নিরাপত্তায় কার্যকরী ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি। নিরাপত্তার ঝুঁকিতে সেখানকার সব কর্মকর্তাকে সরে যেতে হয়েছে।
এই হামলার ঘটনায় নিন্দা ও দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নয়া দিল্লিতে বাংলাদেশের হাই কমিশনে এবং অন্যান্য মিশনের নিরাপত্তা জোরদারের আশ্বাস দিয়েছে। তাদের এক্স হ্যান্ডেলেও এক পোস্টে লেখা হয়েছে, কোনও অবস্থাতেই কূটনৈতিক সম্পত্তিকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা উচিত নয়।
যেভাবে হামলা
কলকাতা থেকে বিবিসি সংবাদদাতা অমিতাভ ভট্টশালী জানান, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি নামের একটি সংগঠনের সভা ছিল আগরতলার বাংলাদেশের অ্যাসিস্ট্যান্ট হাই কমিশনের সামনে। সভা শেষে সংগঠনের ৬ জনের একটি প্রতিনিধি দল হাই কমিশন কার্যালয়ের ভেতরে যায় স্মারকলিপি জমা দিতে। এসময় বাইরে থাকা কিছু হিন্দু যুবক হঠাৎ বাংলাদেশ হাই কমিশন কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে ছিড়ে ফেলে। পরে হাই কমিশন কার্যালয়ের কিছু সাইনবোর্ড ভাঙচুর করে ও আগুন লাগিয়ে দেয় তারা।
সোশাল মিডিয়া ছড়িয়ে পড়া হামলার ঘটনার সময়কার কিছু ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীরা নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে হাই কমিশনের বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে ফেলার পর তাতে আগুনও ধরিয়ে দিয়েছে।
এই বিষয়ে হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি কার্যকরী সদস্য বিকে রায় বিবিসি বাংলাকে বলেন, ডেপুটেশন দেওয়ার সময় বাইরে কী ঘটনা ঘটেছে তা তারা দেখেননি এবং তারা ডেপুটেশন দিয়ে আসার পরও কাউকে অফিসের ভিতরে দেখতে পাননি।
ঘটনার খবর পেয়ে ত্রিপুরা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে বাংলাদেশ অ্যাসিস্ট্যান্ট হাই কমিশনের কার্যালয় ঘুরে দেখেন এবং হাই কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন।
তবে এ বিষয়ে ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে কোনেও মন্তব্য করেনি।
এদিকে, বিক্ষোভ হয়েছে ভারতের কোচবিহারেও। সেখানে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কুশপুত্তলিকা পুড়িয়ে বিক্ষোভ দেখায় সনাতনী হিন্দু মঞ্চ। সংগঠনটির সদস্যরা বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া চ্যাংড়াবান্ধায় বিক্ষোভ মিছিলও করে। এই কর্মসূচি ঘিরে কড়া নিরাপত্তা ছিল সীমান্ত এলাকায়।
এছাড়া বিক্ষোভ হয়েছে ভারতের পেট্টাপোল সীমান্তেও। সেখানে সমাবেশ হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলের নেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে। সমাবেশ থেকে অভিযোগ করা হয়, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। এটি বন্ধ না হলে ভবিষ্যতে সীমান্তে দীর্ঘমেয়াদি অবরোধ দেওয়ার ঘোষণাও দেন তারা।
ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা রবিবার বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে বলেন, “বাংলাদেশে যে পরিস্থিতি তা ভালো নয়, সেখানে সরকার কীভাবে কাজ করছে? আমরা যে খবর পাচ্ছি, আজকাল সোশাল মিডিয়ায় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার বিষয়ে যা দেখছি, তা মোটেও ঠিক নয়। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নৃশংসতা চালানো হচ্ছে, কাউকে জোর করে চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়।”
বিজেপি নেতা মানিক বলেন, “শেখ হাসিনার সরকারের আমলে যে সন্ত্রাসীরা জেলে ছিল তারা এখন মুক্ত। তারা এখন কোথায়? আমরা তাদের অবস্থান নিয়ে উদ্বিগ্ন।”
আগরতলার হাসপাতালে বাংলাদেশিদের চিকিৎসা বন্ধ
ভারতের দৈনিক সংবাদের অনলাইনে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ৩০ নভেম্বর আগরতলার বেসরকারি আইএলএস হাসপাতালের সামনে বাংলাদেশিদের চিকিৎসা না দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করে জনতা। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েছে, বাংলাদেশিদের আর সেখানে চিকিৎসা দেওয়া হবে না।
বিক্ষোভের ডাক হাসনাতের
আগরতলায় বাংলাদেশের অ্যাসিস্ট্যান্ট হাই কমিশনে হামলার ঘটনায় সোমবার রাত ৯টায় রাজু ভাস্কর্যে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। এদিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে ফেইসবুক পোস্টে এ কর্মসূচি ঘোষণা দেন তিনি।
ফেইসবুকে তিনি লেখেন, “ভারতের আগরতলাস্থ বাংলাদেশ উপ-হাই কমিশনে হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল। সময়- রাত ৯টা, স্থান- রাজু ভাস্কর্য।”
