সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক দখলে নেওয়া পরপরই সেখানে থাকা ইরানি দূতাবাসে হামলা চালায় সশস্ত্র বিদ্রোহীরা। তবে এই হামলার আগেই ইরান তার দূতাবাসের কর্মীদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ায় হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
অবশ্য হামলায় দূতাবাসের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানায় ইরানের সংবাদ সংস্থা মেহের নিউজ।
রবিবার সিরিয়ার বিদ্রোহীদের জোট রাজধানী দামেস্ক দখল করলে দেশটিতে বাশার আল-আসাদের দুই যুগের কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান হয়। ১৩ বছর আগে ২০১১ সালে সিরিয়ায় আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের সূচনা হলেও ঘনিষ্ঠ মিত্রদের কাছ থেকে সামরিক সহায়তা নিয়ে টিকে ছিল আসাদ সরকার। এই মিত্রদের অন্যতম ছিল ইরান।
সেই ক্ষোভ থেকেই বিদ্রোহীরা দামেস্ক দখলে নেওয়ার পর হামলা চালায় রাজধানীতে থাকা ইরানের দূতাবাসে। তারা দূতাবাসে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় এবং সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি করে। সৌদি আরবের আল-আরাবিয়া নেটওয়ার্কে প্রচারিত ভিডিওতে ভবনের ধ্বংসাবশেষ ও লুটপাটের দৃশ্য দেখা গেছে।
রয়টার্স জানায়, এ ঘটনার পর ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তাদের দামেস্ক দূতাবাসের সব কর্মী নিরাপদেই আছেন।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই বলেন, “দূতাবাস কর্মীদের পূর্বেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল এবং বর্তমানে তারা সুস্থ আছেন। এ ধরনের হামলা যাতে পুনরায় না ঘটে, তার জন্য সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে।”
সিরিয়ার বিদ্রোহীরা ‘মিলিটারি অপারেশন্স কমান্ড’ নামে নতুন একটি জোট গড়ে তোলার পর নভেম্বরে শেষ দিকে আলেপ্পোতে হামলা চালায়। তাদের হামলা টিকতে না পেরে সরকারি বাহিনী পিছু হটলে দ্রুততার সঙ্গে শহরটি নিয়ন্ত্রণে নেয় বিদ্রোহীরা।
এর ধারাবাহিকতায় গত শনিবার বিদ্রোহীরা দেরা শহরের নিয়ন্ত্রণ নেয়। একইদিন তারা গুরুত্বপূর্ণ হোমস নগরীতেও নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে।
হোমস দখলের পরপরই বিদ্রোহীরা রাজধানী দামেস্কের দিকে আগাতে শুরু করে এবং রবিবার সকাল নাগাদ তারা দামেস্কে ঢুকে পড়ে। তবে রাজধানীতে ঢুকতে গিয়ে বিদ্রোহীদের কোনও ধরনের সামরিক বাধার মুখে পড়তে হয়নি বলে জানিয়েছে তারা।
রাজধানী দখলে নিয়েই বিদ্রোহীরা বাশার আল-আসাদের শাসনের অবসান ঘোষণা করে জানায়, প্রেসিডেন্ট বিমানে করে অজানা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।
এর আগে নভেম্বরের শেষ দিকে বিদ্রোহীরা হামলা শুরুর পরপরই সম্ভাব্য বিপদ আচ করতে পেরে পরিবারের সদস্যদের রাশিয়ায় পাঠিয়ে দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। সেই পথ ধরে রবিবার তিনি নিজেও দেশ ছেড়ে পালিয়ে রাশিয়ায় গিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন।
ইরান দীর্ঘদিন ধরে সিরিয়ায় আসাদ সরকারকে আর্থিক ও সামরিক সহায়তা দিয়ে এসেছে। ২০১১ সালের সিরিয়ায় সরকারবিরোধী বিদ্রোহের সূচনা হওয়ার পরপরই দেশটিতে সেনা মোতায়েন করে ইরান। পাশাপাশি আসাদ সরকারের সহায়তায় এগিয়ে আসে আরেক ঘনিষ্ঠ মিত্র রাশিয়া।
ইরান সিরিয়ার মাটি ব্যবহার করে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের জন্য অস্বস্তি তৈরির পাশাপাশি ও যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য কমিয়ে আনতে যে ‘প্রতিরোধ অক্ষ’ গড়ে তুলেছিল, রবিবার আসাদ সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে তা বড় ধাক্কা খেল।
অবশ্য সিরিয়ায় আসাদ সরকারের ২৪ বছরের শাসনের অবসানের পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তেহরান দেশটিতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পক্ষগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, সিরিয়ার ভবিষ্যৎ নির্ধারণের অধিকার একমাত্র দেশটির জনগণের। উদ্ভূত প্রেক্ষাপটে তেহরান একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠনের আহ্বান জানায়, যা সিরিয়ার সব সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করবে।