এবার ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও চিকিৎসকদের ওপর হামলা হয়েছে। যাদের মধ্যে রয়েছেন দুই নারী চিকিৎসক।
রবিবার সকালে এক রোগী মৃত্যুর জের ধরে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকদের মারধরের রেশ না কাটতেই আরেক সরকারি হাসপাতালেও একই ধরনের ঘটনা ঘটল।
হাসপাতালটির চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সকালে চিকিৎসাধীন একজন ডায়ালাইসিসের রোগী মারা যান। তার স্বজনরা ভুল চিকিৎসার অভিযোগ তুলে বাইরে থেকে কয়েকজনকে ডেকে এনে ওয়ার্ডে প্রবেশ করে চিকিৎসকদের মারধর শুরু করে। এসময় তারা একটি ইসিজি মেশিনও ভেঙে ফেলে।
সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক শরিফুল আহসান রাকিব সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমাদের ৫২৫ নম্বর ওয়ার্ডে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র (আইসিইউ) থেকে স্থানান্তর করা একজন ডায়ালাইসিসের রোগী ভর্তি ছিলেন। তার অবস্থা গুরুতর ছিল, যেকোনো সময় মারা যাওয়ার মতো অবস্থা ছিল।
“ওই রোগীর শ্বাসকষ্ট ছিল, যে কারণে নেবুলাইজ করা হয়। নেবুলাইজ করার পরপরই তার কিডনির কার্যকারিতা বন্ধ হয়ে যায় এবং তার মৃত্যু হয়। এসময় রোগীর পরিবার ভুল চিকিৎসার অভিযোগ তোলে। তারা অভিযোগ অফিশিয়ালি না দিয়ে ‘ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হতে পারে’ প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে বাইরে থেকে কয়েকজনকে ডেকে নিয়ে এসে হামলা করে।”
এর আগে শনিবার এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরাও মারধরের শিকার হন। হাসপাতালের ভেতরে ভাঙচুরও চালানো হয়।
এর প্রতিবাদে রবিবার সকাল থেকে নিরাপত্তার দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছেন ঢামেক হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
ঢামেক ও সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসকদের ওপর হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনাকে ‘বিচ্ছিন্ন’ বলে মনে করছেন না চিকিৎসকরা।
কারণ হিসেবে সোহরাওয়ার্দীর চিকিৎসক রাকিব বলেন, “সকালে প্রথমে ১০-১২ জন এসে টার্গেট করে চিকিৎসকদের খুঁজতে থাকে। চিকিৎসকরা সেসময় রাউন্ডে থাকায় কাউকে তারা হাতের কাছে পায়নি।
“এরপর হঠাৎ দেখি তারা ইসিজি মেশিন ভেঙে ফেলছে। আমরা বাইরে ছিলাম, দৌড়ে গিয়ে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করি। কিন্তু হামলাকারীদের একজন আমার সঙ্গে থাকা এক চিকিৎসকের কলার চেপে ধরে টেনে নিয়ে যায়। তারা উগ্র হয়ে আরও কয়েকজনকে মারার জন্য উদ্যত হয়। ওয়ার্ডের দরজা বন্ধ করে দেয়। সেখানে দুজন নারী চিকিৎসক ছিলেন। তাদেরকেও লাঞ্ছিত করে। মোট তিনজন চিকিৎসকের গায়ে হাত তোলে।”
হামলার সময় হাসপাতালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি ছিল না বলে জানিয়েছেন সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
তারা জানান, হামলার খবর পেয়ে হাসপাতালে আসেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এসময় একজনকে আটক করা হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে আরও দুজনকে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
হামলার পর চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন এর পরিচালক ডা. মো. শফিউর রহমান।
বৈঠকে নিরাপত্তার পাশাপাশি হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান চিকিৎসকরা। পরিচালক তাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন এবং তিনটি ধারায় মামলা করার নির্দেশ দেন।
তবে চিকিৎসকরা তাতে আশ্বস্ত না হয়ে ক্লাস বর্জন এবং কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দেন। এসময় তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের চলমান কর্মবিরতির প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করেন।
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন পরিচালক ডা. শফিউর রহমান।
তার আগে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে শফিউর রহমান সকাল সন্ধ্যাকে জানান, আলোচনার মাধ্যমে এ মুহূর্তে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।