Beta
বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৪
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের সংবাদ সম্মেলন

‘সাম্প্রদায়িক হামলায় গণ-অভ্যুত্থানকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা চলছে’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষক নেটওয়ার্ক। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষক নেটওয়ার্ক। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
Picture of সকাল সন্ধ্যা প্রতিবেদন

সকাল সন্ধ্যা প্রতিবেদন

একটি মহল সাম্প্রদায়িক হামলার মাধ্যমে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।

মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরের সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করা হয়।

শিক্ষকরা সাম্প্রদায়িক হামলাসহ সব ধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। একইসঙ্গে তারা বেশ কিছু প্রশ্নও তুলে ধরেন।

মুক্তিকামী জনতাকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে ব্র‍্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শর্মি হোসেন বলেন, “একটি চরম নিপীড়নমূলক ও ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে সরকারি চাকরির কোটা সংস্কারের দাবি নিয়ে জুলাই মাসের প্রথম থেকে বাংলাদেশের আপামর শিক্ষার্থী জনআন্দোলন শুরু করে। বৈষম্যের পরিবর্তে সাম্যের দাবি তোলায় তাদেরকে শিকার হতে হয় নির্মম জুলাই হত্যাকাণ্ডের।”

তিনি বলেন, “সরকারি হিসাবে ৩০০ জনের বেশি এবং বেসরকারি হিসেবে এক হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী, শিশু থেকে বৃদ্ধ, পুরুষ ও নারী এবং সকল শ্রেণি-পেশার নাগরিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনগুলোর গুণ্ডাদের হাতে নৃশংস ও নারকীয় হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।

“ক্রমবর্ধমান নিপীড়ন-নির্যাতন-খুনের মুখে আর স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা ও অনুসারীদের হিংস্র গোয়ার্তুমি আর প্রতিশোধপরায়নতা আর অব্যাহত হামলার প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষার্থী আন্দোলন একটি গণঅভ্যুত্থানে রূপান্তরিত হয়। পরিণামে শিক্ষার্থী-নাগরিকদের অবিস্মরণীয় বিদ্রোহের মুখে গতকাল জুলাই- হত্যাকাণ্ডের মূল নির্দেশদাতা, ফ্যাসিস্ট এবং স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন।”

তবে মুক্তি এখনও অর্জিত হয়নি এমন মন্তব্য করে শর্মি হোসেন বলেন, “আমরা মনে করি, একটি নিপীড়নমূলক ফ্যাসিস্ট শাসন থেকে এই মুক্তি অর্জন রাষ্ট্রকে মেরামত করে একটি গণতান্ত্রিক, বহুত্ববাদী, অসাম্প্রদায়িক, সাম্য ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতকারী রাষ্ট্রে রূপান্তরের কঠিন পথ আমাদের সামনে।”

প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার প্রসঙ্গ উল্লে করে ব্র‍্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষক সাইমুর রেজা তালুকদার বলেন, “সেনাবাহিনী প্রধান জনগণের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হবে বলে জানিয়েছেন। সেনাপ্রধান বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি এবং বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিদের সাথে মিটিংয়েও বসেন।

“কিন্তু এই সংকটময় মুহূর্তে আমরা বিস্মিত হয়ে ঢাকা শহরসহ সারাদেশে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনুপস্থিতি আর চেইন অব কমান্ডের পুরাপুরি অনুপস্থিতি লক্ষ্য করি। বিভিন্ন অঞ্চলে ও রাজধানীতে মোতায়েন সেনা সদস্যগণেরও নিক্রিয়তা লক্ষ্যণীয়ভাবে আমাদের নজরে পড়ে। বাস্তবে, সেনাপ্রধানকে টেলিভিশনে দেখাচ্ছিল অপ্রস্তুত; যেন এক জাহাজচালক যিনি তার নাবিকদের চেনেন না। কেন?”

সংবাদ সম্মেলনের আগে সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে শাহবাগ থেকে মৌন মিছিল করে শিক্ষক নেটওয়ার্ক। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাজী মারুফ বলেন, “আমরা চাই অতি দ্রুত একটি সুস্থ সভ্য গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা দেশে চালু হবে। আমরা একটি অসাম্প্রদায়িক বৈষম্যহীন বাংলাদেশ দেখতে চাই, যেখানে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার হবে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি। যে কোন ধরনের সন্ত্রাস একযোগে রুখে দিতেও আমরা বদ্ধপরিকর। পারস্পরিক সৌহার্দ্য বজায় রাখা হবে আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনার অন্যতম লক্ষ্য।

“তাই ছাত্র-জনতার এই অভূতপূর্ব ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানকে কেউ যাতে কালিমালিপ্ত করতে না পারে, সেদিকে কড়া নজর রাখতে হবে। উল্লাস-উচ্ছ্বাস যাতে কোনোরকম প্রতিহিংসার জন্ম না দেয়, সেদিকে দায়িত্বশীল নাগরিকদের সজাগ থাকতে হবে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোসাঈদা সুলতানা ঋতু বলেন, “এই গণআন্দোলনের জন্য যারা তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন সেসব শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। অতি দ্রুত দেশের জনগণের সুরক্ষা এবং সহিংসতা বন্ধের জন্যও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই। এবং অবিলম্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে এর পরবর্তীতে একটি সংবিধান সভা গঠিত করে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করে এর আলোকে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি আমরা করছি।”

সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে এর আগে শাহবাগ থেকে মৌন মিছিল নিয়ে সোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে যান শিক্ষকরা। সংবাদ সম্মেলন থেকে কয়েকটি প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়। প্রশ্নগুলো হলো:

>> বাংলাদেশ বর্তমানে কার শাসনে কোন বিধি অনুসারে চলছে? সেনাপ্রধানের, নাকি প্রেসিডেন্টের, নাকি স্পিকারের তত্ত্বাবধানে মন্ত্রিসভার অধীনে? ছাত্ররা অসহযোগের ডাক দিয়েছে। তাহলে তাদেরকে বাদ দিয়ে আইএসপিআর কোন ক্ষমতাবলে সকল কিছু খোলার ডাক দিল?

>> গণভবন, বিভিন্ন পুলিশ থানাসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনা সুরক্ষায় পুলিশের উপস্থিতি নেই কেন? পুলিশের অবর্তমানে সেনাবাহিনী সুরক্ষা প্রদানে ব্যর্থ হলো কেন?

>> কোন আইনের বলে এবং কোন কোন মানদণ্ডের আলোকে রাজনৈতিক নেতাদের বঙ্গভবনে সেনাবাহিনী প্রধানের সাথে দেখা করার জন্য মনোনীত বা নির্বাচিত করা হলো?

>> সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে সুরক্ষা প্রদানে এবং চলমান সকল ধরনের সহিংসতা বন্ধে কোনও ধরনের দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না কেন? এমন পদক্ষেপ এখন কে নেবে– রাষ্ট্রপতি নাকি সেনাবাহিনী?

>> সেনাবাহিনীর কাজ হলো গণ-অভ্যুত্থানকে নিরাপত্তা প্রদান করা এবং গণ-অভ্যুত্থানকারীদের এখনকার কাজ হলো বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করা। এটা নিয়ে আলাপ না করে সেনাবাহিনী কর্তৃক বা সেনাবাহিনী সমর্থিত সরকার সংক্রান্ত আলাপ জনপরিসরে উঠছে কেন? কারা এই ধরনের আলাপ তুলছে?

>> সর্বোপরি, গণঅভ্যুত্থান সফল করা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সাথে সমাজের বিভিন্ন শ্রমজীবী ও পেশাজীবী শ্রেণি, সিভিল প্রশাসন এবং মিলিটারি প্রশাসনের সমন্বিত আলাপ ও আলোচনা শুরু না করে বঙ্গভবনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে আলাপ করার মাধ্যমে জনগণকে কী বার্তা দেওয়া হচ্ছে?

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত