গোলাপি বলের ‘রাজা’ বলা হয় তাকে। ফ্লাডলাইটের আলোয় টেস্ট ম্যাচ হলেই বিস্ফোরক হয়ে ওঠেন মিচেল স্টার্ক। অ্যাডিলেড টেস্টের প্রথম ইনিংসে আরেকবার সেটির প্রমাণ দিয়েছেন এই পেসার। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে ঠিক সুবিধা করতে পারছিলেন না তিনি। পারফরম্যান্সের গ্রাফ একটু এদিক-ওদিক হওয়ায় কেউ যদি তার সামর্থ্যে প্রশ্ন তুলে থাকেন, স্টার্কের বিস্ময় ছড়ানো বলটি কড়া জবাব হয়ে এসেছে তার জন্য। শুবমান গিলকে ইনসুইংগারে পুরোপুরি বোকা বানিয়ে গোলাপি বলের সৌরভ ছড়িয়ে দিলেন বাঁহাতি পেসার।
স্টার্কের চেয়ে বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছেন স্কট বোল্যান্ড ও প্যাট কামিন্স। অস্ট্রেলিয়ার এই পেসত্রয়ীর আগুনে বোলিংয়ে বিপদে ভারত। অ্যাডিলেড টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে সফরকারীদের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ১২৮ রান। ট্রাভিস হেডের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংসে অলআউট হয়েছিল ৩৩৭ রানে। ফলে প্রথম ইনিংসে ১৮০ রান করা ভারত এখনও পিছিয়ে আছে ২৮ রানে।
দিবারাত্রির টেস্টে অস্ট্রেলিয়া বরাবরই দুর্দান্ত। অ্যাডিলেড টেস্ট শুরুর আগেই ফেভারিট ধরা হচ্ছিল স্বাগতিকদের। মাঠের পারফরম্যান্সে সেটিই ফুটে উঠছে। প্রথম ইনিংসের ব্যাটিং ব্যর্থতা দ্বিতীয় ইনিংসেও কাটাতে পারল না ভারত। লোকেশ রাহুল আউট মাত্র ৭ রানে। প্রথম ইনিংসে শূন্য রানে আউট হওয়া যশস্বী জয়সওয়ালের ব্যাটে সম্ভাবনা ধরা দিয়েছিল। কিন্তু ২৪ রানে তাকে থামতে হয় বোল্যান্ডের শিকার হয়ে। বিরাট কোহলি প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যর্থ। ওই বোল্যান্ডের বল খোঁচা মারতে গিয়ে ১১ রানে বিদায় নেন উইকেটকিপার অ্যালেক্স ক্যারির গ্লাভসে ধরা পড়ে।
৬৬ রানে ৩ উইকেট হারানো অস্ট্রেলিয়াকে আলো দেখাচ্ছিলেন গিল। অস্ট্রেলিয়ান পেসারদের ভালোই সামলাচ্ছিলেন তিনি। স্টার্ককেও ঘায়েল করেছিলেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ান পেসার তার জাত চেনালেন ১৮তম ওভারে বোলিং এসে। ক্রস বোলিং থেকে হঠাৎই দিলেন ইনসুইং ডেলিভারি। বোকা বনে গেলেন গিল। উড়ে গেল মিডল স্টাম্প। ৩০ বলে ২৮ রানে শেষ হয় ভারতীয় ব্যাটারের ইনিংস।
গিলের বিদায়ে ক্রিজে আসেন রোহিত শর্মা। স্টার্কের ওই ওভারে রোহিতের বিরুদ্ধে এলবিডব্লিউয়ের আবেদন ওঠে। আম্পায়ার আউটের সংকেতও দেন। তবে কিছুক্ষণ পর আম্পায়ার জানালেন ‘নো’ বল হয়েছে। সেবার বেঁচে গেলেও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি ভারতীয় অধিনায়ক। অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক কামিন্সের বলে বোল্ড হয়ে ৬ রানে প্যাভিলিয়নে ফেরেন রোহিত।
দিনের বাকি সময়ে আর উইকেট পড়েনি। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে দিন শেষ করেছেন ঋষভ পন্ত (২৮*) ও নিতিশ কুমার রেড্ডি (১৫*)।
কামিন্স ৩৩ রানে ২ উইকেট পেয়েছেন। বোল্যান্ড সমান ২ উইকেট নিতে খরচ করেছেন ৩৯ রান। অন্যদিকে স্টার্ক ৪৯ রানে নিয়েছেন ১ উইকেট।
এর আগে হেডের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ১৫৭ রানের লিড পায় অস্ট্রেলিয়া। ভারতকে সামনে পেলেই জ্বলে ওঠেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। বিশ্বকাপ ফাইনাল ও টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে এখানে বড় উদাহরণ। অ্যাডিলেডেও ভারতকে পুড়িয়ে মারলেন তিনি। হেড খেলেছেন ১৪০ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। ১৪১ বলের ইনিংসটি তিনি সাজান ১৭ বাউন্ডারি ও ৪ ছক্কায়। এছাড়া মার্নাস লাবুশেনের ব্যাট থেকে আসে ৬৪ রান।
ভারতের জসপ্রিত বুমরা ৬১ রানে নেন ৪ উইকেট। আরেক পেসার মোহাম্মদ সিরাজও পেয়েছেন ৪ উইকেট।