বিশ্বকাপ শুরুর আগে ব্রায়ান লারা বলেছিলেন, ‘‘সেমিফাইনালে আমার ফেবারিট আফগানিস্তান।’’ তখন হাসাহাসি করেছিলেন অনেকে। সেই আফগানিস্তান গ্রুপ পর্বে বার্তা দিয়েছিল নিউজিল্যান্ডকে বিধ্বস্ত করে।
সুপার এইটে আজ কিংসটাউনে আরও বড় ‘শিকার’ আফগানদের। অস্ট্রেলিয়াকে ২১ রানে হারিয়ে বিশ্বকাপ জমিয়ে তুলল তারা। আফগানদের ৬ উইকেটে ১৪৮ রানের জবাবে অস্ট্রেলিয়া অলআউট ১২৭ রান। বিশ্বকাপে টানা ৮ জয়ের পর এটাই প্রথম হার অস্ট্রেলিয়ার।
এই গ্রুপে ২ ম্যাচ শেষে ভারতের পয়েন্ট ৪, আফগানিস্তানের ২, অস্ট্রেলিয়ার ২ আর বাংলাদেশের ০। সেমিফাইনালের সুযোগ আছে চার দলেরই। শেষ ম্যাচে ভারত যদি অস্ট্রেলিয়াকে হারায় আর বাংলাদেশ বড় ব্যবধানে হারাতে পারে আফগানদের-তাহলে এখনও শেষ চারের টিকিট পেতে পারেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। আবার বাংলাদেশকে হারিয়ে সেমিফাইনালে যেতে পারে রশিদ খানের দলও।
বাংলাদেশের নেট রান রেট -২.৪৮৯। আফগানিস্তানের -০.৬৫০, অস্ট্রেলিয়ার +০২২৩ আর ভারতের +২.৪২৫। কাগজে কলমে সুযোগ থাকলেও বাংলাদেশের জন্য রান রেটের এই বড় ব্যবধান মিটিয়ে শেষ চারে খেলা যথেষ্ট কঠিন। তেমনি কঠিন ভারতের বাদ পড়াও। তবে ভালো সুযোগ আছে আফগানদের।
কিংসটাউনের ‘ট্রিকি’ উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার শুরুটা ভালো হয়নি। পাওয়ার প্লেতে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে তারা। প্রথম ওভারেই নাভিন-উল-হক বোল্ড করেন ট্রাভিস হেডকে (০)। সেই নাভিনের বলেই অধিনায়ক মিচেল মার্শ ১২ রানে আউট মোহাম্মদ নবিকে ক্যাচ দিয়ে। অপর ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ৮ বলে ৩ কর ফিরেন নবির বলে।
চতুর্থ উইকেটে ৩৯ রানের জুটিতে ধাক্কাটা কাটান মার্কাস স্টয়নিস ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ১৭ বলে ১১ করা স্টয়নিসকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানিয়ে জুটিটা ভাঙেন গুলবাদিন নাইব। গত ওয়ানডে বিশ্বকাপে ইনজুরি নিয়ে এক পায়ে খেলে ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। তাতে স্বপ্ন ভেঙেছিল আফগানিস্তানের। আজও ৪১ বলে ৫৯ করেন তিনি। গুলবাদিন নাইব তাকে ফিরিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেন অস্ট্রেলিয়াকে। ২০ রানে ৪ উইকেট নিয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়ের অন্যতম নায়ক গুলবাদিন।
এর আগে উদ্বোধনী উইকেটে ১১৮ রানের জুটি গড়েছিলেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান। তখনও ১৬তম ওভার শেষ হয়নি। সেখান থেকে স্কোরটা ১৬০-১৭০ হতেই পারত। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার পেশাদারিত্ব আর নিজেদের অনভিজ্ঞতায় ৬ উইকেটে ১৪৮ রানেই থামে রশিদ খানের দল।
শুরুটা ধীরে করেছিল আফগানিস্তান। পাওয়ার প্লেতে ৪০ রান করে তারা। এবারের বিশ্বকাপে মাত্র দ্বিতীয়বার প্রথম ৬ ওভারে কোনও উইকেট পেল না অস্ট্রেলিয়া। তারা উইকেট পায়নি ১৬তম ওভার পর্যন্ত। এ সময়ে কয়েকটা ক্যাচ ফেলেছেন অস্ট্রেলিয়ান ফিল্ডাররা। হয়েছে মিস ফিল্ডিংও। মিচেল মার্শদের ঠিক জাত অস্ট্রেলিয়ান মনে হচ্ছিল না তখন।
তাতেই বিশ্বকাপের এক আসরে তৃতীয়বারের মতো ৫০ ছাড়ানো রানের ওপেনিং জুটি পান গুরবাজ-জাদরান। বিশ্বকাপে এমন কীর্তি আছে আরও পাঁচ জুটির। ১৪তম ওভারে ১০০ রানের মাইলফলকও স্পর্শ করেন গুরবাজ-জাদরান। বিশ্বকাপের এক আসরে এটা তাদের তৃতীয় শতরানের জুটি, যা করতে পারেননি আর কেউ।
এবারের বিশ্বকাপে শুরুতে ব্যাট করে গুরবাজ-জাদরান গড়েছেন ১৫৪, ১০৩ ও ১১৮ রানের জুটি। তবে পরে ব্যাট করে ব্যর্থ তারাই। জুটি ভেঙেছে ৮. ০ ও ১৩ রানে। আজ তাদের জুটিটি ভাঙেন মার্কাস স্টয়নিস। ৪৯ বলে ৪ বাউন্ডারি ৪ ছক্কায় ৬০ রান করা গুরবাজতে ডেভিড ওয়ার্নারকে ক্যাচ বানিয়ে ফেরান তিনি।
৪৮ বলে ৫১ করা ইব্রাহিম জাদরানকে ফেরান অ্যাডাম জাম্পা। ৮ বলের ব্যবধানে দুই ওপেনার হারানোর পর প্যাট কামিন্স করেন হ্যাটট্রিক। ১৮তম ওভারের শেষ বলে রশিদ খানকে টিম ডেভিডের ক্যাচ বানিয়ে ফেরান কামিন্স।
২০তম ওভারে প্রথম বলে ডেভিডের ক্যাচ বানিয়ে আউট করেন করিম জানাতকে। পরের বলে গুলবাদিন নাইবকে আউট করেন গ্লেন ম্যাক্সওেয়েলের ক্যাচ বানিয়ে। তাতে প্রথম বোলার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে টানা দুই ম্যাচে হ্যাটট্রিক করলেন কামিন্স। টেস্টে অবশ্য টানা দুই ম্যাচে হ্যাটট্রিক আছে পাকিস্তানি কিংবদন্তি ওয়াসিম আকরামের।
টি-টোয়েন্টিতে পঞ্চম বোলার হিসেবে দুটি হ্যাটট্রিকের রেকর্ডও কামিন্সের। নাম লেখালেন শ্রীলঙ্কার লাসিথ মালিঙ্গা, নিউজিল্যান্ডের টিম সাউদি, সার্বিয়ার মার্ক পাভলোভিক আর মাল্টার ওয়াসিম আব্বাসের পাশে।
৪ ওভারে ২৮ রানে ৩ উইকেট কামিন্সের। জাম্পা ২৮ রানে ২টি আর স্টয়নিস ১৯ রানে নেন ১ উইকেট।
তবে দিন শেষে নায়ক গুলবাদিনই। বাংলাদেশের বিপক্ষেও রূপকথার কিছু করে এখন সেমিফাইনাল স্বপ্নে বিভোর আফগানরা।