Beta
মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৪

গড় মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্ক ছুঁইছুঁই

ss-inflation-030624-1
Picture of জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

[publishpress_authors_box]

সদ্য বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১২ মাসের গড় মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের খুব কাছে পৌঁছেছে, দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশে। গত এপ্রিল থেকে জুন টানা তিন মাস খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের বেশি ছিল। জুনে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৪২ শতাংশ।

মূল্যস্ফীতি নিয়ে রবিবার (৭ জুলাই) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে (জুলাই-জুন) গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরের চেয়ে শূন্য দশমিক ৭১ শতাংশীয় পয়েন্ট বেশি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ।

অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরে যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় পাওয়া যেত, গত অর্থবছরে সেই পণ্য বা সেবা নিতে ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে।

বিবিএসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত অর্থবছরের সর্বশেষ মাস জুনে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সাধারণ মূল্যস্ফীতি তার আগের মাসের তুলনায় কিছুটা কমে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ হয়। মে মাসে এই হার ছিল ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ।

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ও সরবরাহ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হওয়ায় দেশে বিশেষ করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে শুরু করে। ওই বছরের অগাস্ট মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতি প্রায় ১০ শতাংশের খুব কাছাকাছি চলে যায়।

এরপর সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বিশেষ করে চাল, ভোজ্যতেল, চিনিসহ বেশ কয়েকটি নিত্যপণ্যের আমদানি শুল্ক ৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়। বাজার তদারকির অংশ হিসেবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর দফায় দফায় অভিযান চালায়। তারপরও গত অর্থবছরের মূল্যস্ফীতির গড় দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ, যা তার আগের অর্থবছরের তুলনায় ০.৭১ শতাংশীয় পয়েন্ট বেশি।

গত অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্য ছিল।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারার বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এর নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “অনেকগুলো কারণেই গত অর্থবছরে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমাতে পারেনি।

“মুদ্রানীতি, রাজস্ব নীতি এগুলো সঠিক সময়ে সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হয়নি। যখন সুদের হার বাড়ানো দরকার ছিল তখন বাড়ানো হয়নি। আবার যখন দেরি করে বাড়ানো হয়েছে, ততক্ষণে পরিস্থিতি অনেক জটিল হয়েছে।”

তিনি বলেন, “মুদ্রানীতি ও রাজস্ব নীতির সঙ্গে যে রকম একটা সমন্বয় থাকা দরকার ছিল, বিশেষ করে অনেক আমদানি পণ্যে শুল্ক কমিয়ে দেশের বাজারে দাম কমানোর একটা সুযোগ ছিল- সেগুলো সময়মতো করা হয়নি।”

অর্থনীতিবিদদের মতে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে দেশের সব শ্রেণির মানুষের ব্যয় বেড়ে যায়। বিশেষ করে, এমন উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে নিম্ম ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ সংসার চালাতে হিমশিম খান। গত দুই অর্থবছর ধরে চলা এই উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে।  

কেন উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমছে না—জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেন, “আমাদের বাজার ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের সমস্যা আছে।”

আমদানি পণ্যে শুল্ক ছাড়ের পরও বাজারে তা প্রভাব রাখতে না পারছে না কেন—সে বিষয়ে সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, “দেশে মাত্র কয়েকজন আমদানিকারক ও সরবরাহকারী হওয়ায় তারা সরকারের অব্যবস্থাপনার সুযোগ নিচ্ছেন।

“দেখা যায়, নানান কারণে বিনা অুজহাতে তারা দাম বাড়িয়ে দেয়। সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগও সরকারের নেই।”

অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, “দীর্ঘ সময়জুড়ে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি চলার মধ্যে আমরা সরকারের গৃহীত নীতি ও ব্যবস্থাপনা ব্যর্থ হতে দেখেছি।

“নীতি ও ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়নে যে ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার দরকার ছিল, সেখানে আমরা বড় ধরণের ব্যর্থতা দেখেছি।”

বিবিএসের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মাস জুনে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। এই হার মে মাসের তুলনায় কিছুটা কম। মে মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ।

এপ্রিল থেকে টানা তিন মাস খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের বেশি ছিল।

জুন মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৪২ শতাংশ। তা মে মাসে ছিল ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। আর আগের মাস এপ্রিলেও তা ছিল দুই অঙ্কের ঘরে, ১০ দশমিক ২২ শতাংশ।   

জুন মাসে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ৯ দশমিক ১৫ শতাংশ হয়েছে। আগের মাস অর্থাৎ মে মাসে এর হার ছিল ৯ দশমিক ১৯ শতাংশ।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত