Beta
বৃহস্পতিবার, ১ মে, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ১ মে, ২০২৫

ভোট করা, না করা আওয়ামী লীগের বিষয় : ড. ইউনূস

dr-yunus-bbc-060325
[publishpress_authors_box]

বৈষম্যবিরোধীদের দাবি যখন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে নির্বাচন থেকে বাদ দেওয়ার তখন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বললেন, ভোটে অংশ গ্রহণ করা, না করার বিষয়টি নির্ভর করছে দলটির সিদ্ধান্তের ওপর।  

বিবিসিকে এক সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করে তিনি জানিয়েছেন, নির্বাচনে কে অংশ নেবে না নেবে, সে সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন। ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসবভবন যমুনায় নেওয়া ওই সাক্ষাৎকার বৃহস্পতিবার প্রকাশ করেছে বিবিসি।

এর আগে বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার সবার ওপর ছেড়ে দিচ্ছেন বলে জানান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, সবাই মিলে যা ঠিক করবে, তাই করবেন তারা।

বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ক্ষমতাচ্যুত প্রধান শেখ হাসিনার শাসন আমলকে ‘ভয়নক ঘূর্ণিঝড়ের’ সঙ্গে তুলনা করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. ইউনূস। দীর্ঘ দিনের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দায়িত্ব নেওয়ার অনুরোধ পেয়ে ‘চমকে’ গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী এই বাংলাদেশি।

বিবিসিকে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “আমার কোনও ধারণা ছিল না যে আমাকে সরকারের নেতৃত্ব দিতে হবে। আমি কখনও কোনও সরকার চালাইনি। এখন আমাকেই প্রয়োজনীয় সব কিছু করতে হবে।”

তিনি বলেন, “বিষয়টা যখন ঠিক হয়ে গেল আমরা সব কিছু সংগঠিত করা শুরু করলাম।”

শান্তিতে নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ জানান, আইনশঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা এবং অর্থনৈতিক অবস্থা ঠিক করা ছিল দেশের জন্য অগ্রাধিকার।

বিবিসি বলছে, ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে কি না- তা এখনও পরিষ্কার নয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

জুলাই আন্দোলন দমনে খড়গহস্ত আওয়ামী লীগকে ‘ফ্যাসিবাদী’ আখ্যায়িত করে দলটিকে বাংলাদেশে রাজনীতিতে পুনর্বাসনের বিরোধিতা করে আসছে অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ড. ইউনূস নিজেও শেখ হাসিনার গত দেড় দশকের শাসনকে ‘ফ্যাসিবাদী’ বলে আসছেন।

অভ্যুত্থানকারী তরুণরা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি তুললেও বিএনপিসহ অপরাপর রাজনৈতিক দলের সায় মিলছে না।

গত আগস্টে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে উৎখাৎ হওয়ার পর দায়িত্ব নিয়ে সংবিধানসহ নানা ক্ষেত্রে সংস্কারকে অগ্রাধিকার নিয়ে কাজ শুরু করে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। তবে বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের ওপর জোর দিচ্ছে।

তাদেরকে সম্প্রতি ভিন্ন বার্তা দিয়েছেন অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতা থেকে নতুন দলে দায়িত্ব পাওয়া সারজিস আলম। তিনি বলেন, “খুনি হাসিনাকে যতদিন ফাঁসির মঞ্চে না দেখছি, ততদিন এই বাংলাদেশে কেউ যেন ভুলক্রমেও নির্বাচনের কথা না বলে।”

ড. ইউনূস আশা করছেন, এই বছরের শেষ দিকে জাতীয় নির্বাচন হবে।

সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা বিবিসিকে বলেন, “তারা (আওয়ামী লীগ) ভোট করতে চাইলে সে সিদ্ধান্ত তাদেরই নিতে হবে। তাদের সিদ্ধান্ত আমি দিতে পারি না। কে ভোট করতে পারবে, কে পারবে না- সে সিদ্ধান্ত দেয় নির্বাচন কমিশন।”

তিনি বলেন, “সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে শান্তি ও শৃঙ্খলা। অর্থনীতিও। এটা একটা ভঙ্গুর অর্থনীতি, বিধ্বস্ত অর্থনীতি। এটা এমন যেন ১৬ বছর ধরে ভয়ানক ঘূর্ণিঝড় বয়ে গেছে এবং আমরা টুকরোগুলো একত্রিত করার চেষ্টা করছি।”

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন এবং কঠোর হাতে দেশ শাসন করেন। তার দল আওয়ামী লীগের সদস্যরা নির্মমভাবে ভিন্নমত দমন করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের হত্যা করার ও জেলে বন্দি রাখার অনেক অভিযোগ রয়েছে।

ছাত্রদের নেতৃত্বাধীন গণভ্যুত্থান আগস্টে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্ব দিতে দেশে ফেরেন ড. ইউনূস।

সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন করতে চাওয়ার কথা জানিয়ে বলেছেন, বিষয়টা নির্ভর করবে তার সরকার অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার কত দ্রুত করতে পারবে, তার ওপর।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার যদি দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব হয়, তবে এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করতে পারব। সংস্কার দীর্ঘ সময় লাগলে নির্বাচন করতে আরও কিছু মাস লাগতে পারে।”

বাংলাদেশে গত বছরের সহিংস বিক্ষোভের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “পুরোপুরি বিশঙ্খল একটা অবস্থা থেকে আমরা এসেছি। মানুষকে তখন গুলি করা হচ্ছিল, হত্যা করা হচ্ছিল।”

তবে সাত মাস পরও ঢাকার মানুষ বলছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরেনি এবং পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালোর দিকে যাচ্ছে না।

এ প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, “আরও ভালো থাকা একটা আপেক্ষিক বিষয়। আপনি যদি গত বছরের এই সময়ের সঙ্গে তুলনা করেন, দেখবেন সব ঠিকই আছে। এখন যা ঘটছে তা অন্য যে কোনও সময়ের চেয়ে আলাদা কিছু নয়।”

অধ্যাপক ইউনূস এসময় বাংলাদেশের বর্তমান দুর্দশার জন্য বিগত আওয়ামী লীগ সরকারকে দায়ী করেন।

তিনি বলেন, “আমি চাই না এসব ঘটনা ঘটুক। আমি বলছি, আপনাকে বিবেচনায় নিতে হবে যে আমরা একটি আদর্শ দেশ বা আদর্শ শহর নই, যা আমরা হঠাৎ তৈরি করেছি। এটা একটা দেশের একটি ধারাবাহিকতা, যা আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। বহু বছর ধরে এই দেশে এই ধারাবাহিকতা চলে আসছে।”

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার নির্মম শাসন আমলে যারা ক্ষতিগ্রস্ত তারা এখনও ক্ষুব্ধ। ছাত্র আন্দোলন দমাতে চালানো ভয়ানক দমন অভিযানের জন্য তার বিচার দাবিতে সাম্প্রতিক মাসগুলোয় হাজার হাজার মানুষ রাজপথে বিক্ষোভ করেছে। বাংলাদেশের একটি আদালত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। তবে ভারত এখনও এ বিষয়ে কোনও সাড়া দেয়নি।”

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শেখ হাসিনা ইউটিউবে ভাষণ দেবেন- এমন ঘোষণায় ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশের জাতির পিতা, শেখ হাসিনার বাবা শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িসহ আওয়ামী লীগের কিছু নেতার বাড়ি ভাঙচুর করা হয়; আগুনও ধরিয়ে দেওয়া হয় সেসব বাড়িতে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে আওয়ামী লীগ অভিযোগ করে বলেছে, ‘এসব সহিংসতা হতে দিয়েছে’ অন্তর্বর্তী সরকার।

আওয়ামী লীগের নেতারা বাংলাদেশ তাদের জন্য নিরাপদ নয় বলে যে অভিযোগ করছেন সে বিষয়ে জানতে চাইলে ড. ইউনূস বিবিসিকে বলেন, “দেশে আদালত আছে। আইন আছে। থানা আছে। তারা সেখানে গিয়ে অভিযোগ করতে পারে, অভিযোগ নথিভুক্ত করতে পারে। অভিযোগ করার জন্য আপনি শুধু বিবিসির সংবাদদাতার কাছে যাবেন না। অভিযোগ করার জন্য আপনি থানায় যান। সেখানে গিয়ে দেখেন আইন তার নিজস্ব গতিতে চলছে কি না।”

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন বিদেশি সহায়তা কাটছাঁট করার এবং দেশটির আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) অর্থায়নের প্রায় সব কর্মসূচি কার্যকরভাবে বন্ধের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর ওপর একটা প্রভাব ফেলবে।

এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ড. ইউনূস বিবিসিকে বলেন, “এটা তাদের সিদ্ধান্ত। এটি উপকারী ছিল। কারণ, তারা এমন কিছু করছিল, যা আমরা করতে চেয়েছিলাম। যেমন দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই, যা সঠিকভাবে করার সামর্থ্য আমাদের হয়নি।”

বাংলাদেশকে উন্নয়ন সহায়তা দেওয়া দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান তৃতীয়। দেশটি গত বছর বাংলাদেশকে ৪৫০ মিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেয়।

এ ঘাটতি কীভাবে পূরণ হবে- জানতে চাইলে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “যখন এটা ঘটবে, তখন দেখা যাবে কী করা যায়।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত