ঝিনাইদহের শৈলকুপা থানায় হামলার ঘটনায় ১১৪ জনের নাম উল্লেখসহ ৫ শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতাকে ছাড়িয়ে নিতে রবিবার বিকালে আওয়ামী লীগের শত শত নেতাকর্মী থানায় হামলা চালায়।
পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শৈলকুপা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ধাওড়া গ্রামের মুস্তাক সিকদার মারামারি মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। রবিবার সকালে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়।
বিকালে শৈলকুপার ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের ধলহারা গ্রাম ও আশপাশের তিন শতাধিক ব্যক্তি লাঠিসোটা, ঢাল আর রামদা নিয়ে থানায় হামলা চালায়। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে ২০-২৫ রাউন্ড শটগানের গুলি চালানো হয়।
স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, ঝিনাইদহ-১ (শৈলকুপা) আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাইয়ের সমর্থক ও অপরপক্ষের রেষারেষির জেরেই থানায় হামলা হয়েছে।
৭২ বছর বয়সী হাই ১৬ মার্চ থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়ার পর উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য হন তার প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিচিত নায়েব আলী জোয়ার্দার।
শৈলকুপা উপজেলার নতুন চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা এম আব্দুল হাকিম আহমেদও হাইয়ের বিরোধী পক্ষ হিসেবে পরিচিত।
ঝিনাইদহ-১ আসনের উপনির্বাচন ও শৈলকুপা উপজেলা নির্বাচনের পর পরাজিত প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাটের অভিযোগ ওঠে। পরাজিত প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের অনেকে ভোটের পর বাড়িছাড়া হয়েছেন অভিযোগ তুলে এলাকায় মানববন্ধন কর্মসূচিও হয়েছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, তাদের ওপর প্রতিপক্ষের হামলার ঘটনায় শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সফিকুল আজম চৌধুরী পক্ষপাত করছেন।
এমন পরিস্থিতিতে গত শুক্রবার নতুন সংসদ সদস্য নায়েব আলী জোয়ার্দারের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানে প্রয়াত সংসদ সদস্য হাইয়ের সমর্থক শৈলকুপা পৌরসভা মেয়র কাজী আশরাফুল আজম তার বক্তৃতার এক পর্যায়ে শৈলকুপা থানার ওসি সফিকুল আজম চৌধুরীকে গলায় গামছা দিয়ে বিতাড়িত করার ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, “এই দুর্নীতিবাজ ওসি সন্ত্রাস করছে। আমরা চাই অতি সত্বর দুর্নীতিবাজ প্রশাসন, বিশেষ করে এই ওসি এখান থেকে চলে যাক। তা না হলে গালায় গামছা বেঁধে তাকে আমরা বিতাড়িত করব।”
এর দুদিন পরই সংসদ সদস্য নায়েব আলী জোয়ার্দার ও উপজেলা চেয়ারম্যান হাকিম আহমেদের সমর্থক মারামারি মামলার আসামি সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মুস্তাক সিকদারকে গ্রেপ্তার করা হলে শৈলকুপা থানায় হামলার ঘটনা ঘটে।
নায়েব আলী জোয়ার্দারের সমর্থক শৈলকুপা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি আব্দুর রহমান রিংকু অভিযোগ করে বলেন, “আমার সমর্থকরা প্রতিনিয়ত হামলার শিকার হচ্ছে। শৈলকুপা পুলিশ পক্ষপাত করছে।
“পুলিশ এসব হামলা বন্ধ ও জড়িতদের গ্রেপ্তারে অনীহা দেখাচ্ছে। রবিবার পুলিশ তাদের ওপর অন্যায়ভাবে হামলা করেছে।”
শৈলকুপা থানা এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিজেদের ৩০-৩৫ কর্মী-সমর্থক আহত হওয়ারও দাবি করেন আব্দুর রহমান রিংকু।
তবে পুলিশের পক্ষপাত করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ঝিনাইদহ পুলিশ সুপার আজিম উল আহসান। তিনি বলেন, “রবিবার মুস্তাক নামের এক আসামিকে শৈলকুপা থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। বিকালের দিকে থানা ঘেরাও করে তাকে ছিনতাই করার চেষ্টা চালানো হয়।
“হামলাকারীরা থানার ভেতরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। তাদের থামাতে গেলে তারা ঢাল, রামদা আর সড়কি নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। হামলায় আমাদের অন্তত ১০ পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হয়।”
আহতদের ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, “এ ঘটনায় রবিবার রাতেই মামলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”