Beta
মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

অভ্যুত্থান-সংশ্লিষ্ট ঘটনায় মামলা নয় : কী বলছে আওয়ামী লীগ

সরকার পতনের পর গত ৫ আগস্ট মোহাম্মদপুর থানায় অগ্নিসংযোগের পর প্রচুর অস্ত্র লুট হয়।
সরকার পতনের পর গত ৫ আগস্ট মোহাম্মদপুর থানায় অগ্নিসংযোগের পর প্রচুর অস্ত্র লুট হয়।
[publishpress_authors_box]

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ১৫ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত গণঅভ্যুত্থান-সংশ্লিষ্ট ঘটনায় কোনও মামলা না হওয়ার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বিবৃতি দিয়েছে ক্ষমতাচ্যুত দল আওয়ামী লীগ।

বুধবার ১৬ অক্টোবর দলটির দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার পাঠানো এ সংক্রান্ত প্রেস বিজ্ঞপ্তির শিরোনাম করা হয়েছে ‘অপরাধীদের ইনডেমনিটি বা দায়মুক্তি দেওয়া প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের বিবৃতি’।

গত জুলাইয়ে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলন আওয়ামী লীগ সরকার কঠোর হাতে দমন করতে গেলে কয়েকশ’ মানুষ নিহত হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন রূপ নেয় গণআন্দোলনে। এক পর্যায়ে গত ৫ আগস্ট পতন হয় শেখ হাসিনার সরকারের; ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার।

বিবৃতিতে আওয়ামী লীগ অন্তর্বর্তী সরকারকে অবৈধ সরকার হিসেবে অভিহিত করে বলেছে, দলটি মনে করে, হত্যা, লুটতরাজ, সন্ত্রাস ও অগ্নিসংযোগের মতো অপরাধের জন্য যেভাবে ইনডেমনিটি দেওয়া হয়েছে তা দেশের গণতান্ত্রিক ও আইনের শাসনের ব্যবস্থাকে ম্লান করে দিচ্ছে।

‘এই দায়মুক্তি’ পুলিশ বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শত শত সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নির্বিচারে হত্যার বিচারের প্রক্রিয়াকে অবরুদ্ধ করে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে বিবৃতিতে।

গত ১৪ অক্টোবর সোমবার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা সক্রিয়ভাবে কাজ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ১৫ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত সংগঠিত জুলাই গণঅভ্যুত্থান-সংশ্লিষ্ট ঘটনায় কোনও মামলা না হওয়ার কথা জানানো হয়।

আন্দোলনকারীদের গ্রেপ্তার বা হয়রানিও করা হবে না বলেও জানানো হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা ফয়সল হাসানের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের মাধ্যমে বৈষম্যমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথে এক নবযাত্রা সূচিত হয়েছে।

“এ গণঅভ্যুত্থানকে সাফল্যমণ্ডিত করতে যেসব ছাত্র-জনতা সক্রিয়ভাবে আন্দোলনের মাঠে থেকে এর পক্ষে কাজ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ১৫ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত সংগঠিত জুলাই গণঅভ্যুত্থান-সংশ্লিষ্ট ঘটনার জন্য কোনও মামলা, গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হবে না।”

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয় বিজ্ঞপ্তিতে। একই সঙ্গে এ বিষয়ে অসত্য তথ্য দিয়ে কোনও সুবিধা অর্জনের বিরুদ্ধেও সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করা হয়।

বুধবার আওয়ামী লীগের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে যে, তথাকথিত গণঅভ্যুত্থানের নামে যারা সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, হত্যাকাণ্ড, অগ্নিসন্ত্রাস ও জাতীয় সম্পদ ধ্বংস করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনও মামলা দেওয়া হবে না কিংবা গ্রেপ্তার না হয়রানি করা হবে না মর্মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

“অর্থাৎ উল্লিখিত অপরাধসমূহের সঙ্গে যুক্ত অপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে ইনডেমনিটি বা দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে একটা বিষয় ভালোভাবে পরিষ্কার হয়ে গেল যে, ১৫ই জুলাই থেকে যতগুলো হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজসহ যেসব আইন বিরোধী ও মানবতা বিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, এর সবই এই তথাকথিত আন্দোলনকারীদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে। এরাই যে আসল অপরাধী সেটি আর কারও বুঝতে বাকি রইলো না।”

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “১৫ই জুলাই থেকে যেসব হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, সেগুলো তদন্তের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটা জুডিশিয়াল ইনকোয়ারি কমিটি গঠন করেছিলেন এবং তিনি জাতিসংঘের কাছে এসব হত্যাকাণ্ড, অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজ সম্পর্কিত বিষয়ে তদন্ত করার জন্য সহযোগিতা চেয়েছিলেন।

“সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট জুডিশিয়াল কমিটি তদন্তের কাজও শুরু করেছিল। জনাব ইউনুস অসাংবিধানিক ও বেআইনিভাবে ক্ষমতা দখল করে জুডিশিয়াল কমিটির তদন্ত কাজ বন্ধ করে দেয়। এর কারণ হচ্ছে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত হলে প্রকৃত অপরাধী ও খুনিরা ধরা পড়ে যাবে।”

দেশের সংবিধান ও আইন অনুযায়ী হত্যা, লুটতরাজ, সন্ত্রাস অগ্নিসংযোগের মতো অপরাধের জন্য কাউকে ইনডেমনিটি বা দায়মুক্তি দেওয়া যায় না উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এটি অসাংবিধানিক ও আইনের শাসনের মৌলিক নীতির পরিপন্থী। শুধু বাংলাদেশ নয়, আইনের শাসনের নীতি লালনকারী বিশ্বের প্রতিটি দেশে এই বিধান রয়েছে।

“আমাদের সংবিধান অনুযায়ী কেবলমাত্র রাষ্ট্রপতির মেয়াদকালীন সময়ে রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে কোনও ফৌজদারী মামলা দায়ের করা যায় না। তবে রাষ্ট্রপতির মেয়াদের পরে তার বিরুদ্ধে এ ধরনের মামলা করা যায়।”

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, “বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনে করে, হত্যা, লুটতরাজ, সন্ত্রাস ও অগ্নিসংযোগের মতো অপরাধের জন্য অবৈধ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেভাবে ইনডেমনিটি বা দায়মুক্তি দিয়েছে, সেটি এদেশের গণতান্ত্রিক ও আইনের শাসনের ব্যবস্থাকে স্নান করে দিচ্ছে এবং পুলিশ বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শত শত সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নির্বিচারে হত্যার বিচারের প্রক্রিয়াকে অবরুদ্ধ করে দিচ্ছে।

“এই ধরনের বেআইনি ও অসাংবিধানিক উদ্যোগ রাষ্ট্র ও সমাজে জনগণের ন্যায়বিচার প্রাপ্তিকে অনিশ্চিত করে দিচ্ছে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত